মোট খাজনা || Gross Rent

 মোট খাজনা কাকে বলে? 
সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক যোগান বিশিষ্ট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারের জন্য তাদের মালিককে প্রদেয় মোট অর্থকে মোট খাজনা বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, ভূমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা থেকে মোট যে আর হয় তাকে খাজনা বলে। সহজভাবে বলা যায়, জমি বা বাড়ি ব্যবহারের জন্য ভাড়াটে জমির মালিককে বা বাড়িওয়ালাকে যে অর্থ প্রদান করে তাকে মোট খাজনা বলে।

অতএব, মোট খাজনা = নিট খাজনা + মজুরি + সুদ + মুনাফা। মনে করি, একজন ব্যক্তি বাড়ি ব্যবহারের জন্য মালিককে ৪,০০০ টাকা দেয়। এ টাকার মধ্যে মালিকের বাড়ি ব্যবহারের জন্য দেয় ১,৪০০ টাকা, বাড়ি তত্ত্বাবধানের জন্য মজুরি বাবদ ১,২০০ টাকা, বাড়িতে বিনিয়োগকৃত মূলধনের জন্য সুদ বাবদ ১০০০ টাকা এবং ঝুঁকি গ্রহণের জন্য ৪০০ টাকা অন্তভুক্ত রয়েছে।
তাহলে বাড়িটির মোট খাজনা = ১,৪০০ + ১২০০ + ১০০০+ ৪০০ = ৪,০০০ টাকা।
মোট খাজনা

নিট খাজনা বা অর্থনৈতিক খাজনা 
মোট খাজনা থেকে মূলধনের জন্য যে সুদ, দেখাশোনার খরচ এবং বঝুঁকি বহনের মুনাফা বাদ দিলে যে আয় অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট খাজনা বলে। অন্যভাবে বলা যায় , অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু জমি ব্যবহারের জন্য এর মালিককে যে অর্থ দেওয়া হয় তাকে অর্থনৈতিক বা নিট খাজনা বলে।

ভূমি ব্যবহারের জন্য তার মালিককে যে অর্থ দেওয়া হয় তাকে অর্থনৈতিক খাজনা বলে । মোট খাজনা হতে মূলধনের রুদ্র দেখাশোনার খরচ ও ঝুঁকি বহনের মুনাফা বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই অর্থনৈতিক খাজনা। অর্থনৈতিক ব্যঞ্জনাকে নিট খাজনাও বলা হয় । ধরা যাক , একটি বাড়ির মালিক ১০০০ টাকা খাজনা পায় এটাই হলো মোট খাজনা। এই মোট খাজনার মধ্যে ভূমি ব্যবহারের জন্য ২৫০ টাকা , মূলধনের সুদ ৪০০ টাকা , বাড়ি দেখাশোনার জন্য ২০০ টাকা এবং ঝুঁকি বহনের জন্য টাকা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মোট খাজনা ১০০০ টাকার মধ্যে ভূমি ব্যবহারের জন্য ২৫০ টাকা এর মালিককে দেওয়া হয়। এই ২৫০ টাকাই হলো অর্থনৈতিক খাজনা। সুতরাং, মোট খাজনার যে অংশ শুধু ভূমি ব্যবহারের জন্য তার মালিককে প্রদান করা হয় তাকে অর্থনৈতিক খাজানা বলে। অর্থাৎ নিট খাজনা = মোট বাজা আনুষঙ্গিক খরচ (মঞ্জুরি + সুদ + মুনাফা)। কীভাবে অর্থনৈতিক খাজনার উদ্ভব ঘটে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ভূমির উর্বরতা শক্তির পার্থক্য রয়েছে । উর্বরতার দিক হতে বিবেচনা করলে দেখা যায়, কোনো জমি উত্তর এবং কোনো জমি অনুর্বর। অনুর্বর জমির তুলনায় উর্বর জমি হতে বেশি খাজনা পাওয়া যায়। আবার অনুকা জমি হতে কোনো খাজনা পাওয়া যায় না।

২. ভূমি প্রকৃতির দান । এর যোগান সম্পূর্ণ সীমাবদ্ধ। মানুষ ইচ্ছা করলেই ভূমির পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারে না। এমতাবস্থায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভূমির চাহিদা বৃদ্ধি পায় । ফলে খাজানার উদ্ভব হয়। ভূমি যোগান যদি চাহিদার তুলনায় সীমাবদ্ধ না হতো তাহলে অর্থনৈতিক বাজনা দেওয়ার প্রয়োজন হতো না।

৩. অবস্থানের দিক হতে সকল জমি সমান নয়। কোনো জমি লোকালয় বা বাজারের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত । আবার কোনো জমি লোকালয় বা বাজার হতে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত। লোকালয়ের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত জমি চাষাবাদের জন্য সুবিধাজনক। আবার বাজার সংলগ্ন জাসিনা শসা বাজারজাত করার জন্য কোনো পরিবহণ বায় হয় না। সুতরাং সকল জমির উর্বরতা একরকম হলেও এদের অবস্থানগত পার্থক্যের জন্য খাজনা কম বেশি হয়।

৪. ভূমি বিকল্প ব্যবহারযোগ্য , অর্থাৎ একই জমি ঘরবাড়ি তৈরির কাজে কিংবা পশুচারণক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করা। যায়। এমতাবস্থায় ভূমির সুযোগ বায়ের জন্য খাজনার উদ্ভব হয়। ধরা যাক, একখণ্ড জমিতে ধান চাষ করলে কোনো উদ্বৃত্ত আয় পাওয়া যায় না। কিন্তু সেই জমিতে পাট চাষ করলে উদ্বৃত্ত আয় পাওয়া যায়। এই উদ্বৃত্ত আয়ই হলো খাজনা উদ্ভবের কারণ।

৫. ভূমিতে ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি কার্যকর হয়। অর্থাৎ একই জমিতে ক্রমাগত অধিক পরিমাণ শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করলে উৎপাদনের পরিমাণ প্রথমে বাড়লেও পরে তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে নতুন নতুন জমি চাষের আওতায় আনতে হয় । ফলে অতিরিক্ত জমির চাহিদা দেখা দেয় এবং এর জন্য খাজনা দিতে হয়। সুতরাং , জমিতে ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধির কার্যকারিতার জন্য খাজনার উদ্ভব হয়।

মোট খাজনা ও নিট খাজনার মধ্যে তুলনা 
সীমাবদ্ধ যোগান বিশিষ্ট ভূমি ও অন্যান্য উপকরণ যোগান দামের চেয়ে যে অতিরিক্ত অর্থ আয় করে তাকে খাজনা বলা হয়। কিন্তু কিছু কিছু উপকরণের যোগান স্বল্পকালে স্থির থাকলেও দীর্ঘকালে এ সকল উপকরণের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে যোগানও বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বল্পকালে চাহিদা বৃদ্ধিজনিত যে অতিরিক্ত আয় করে তাকে নিম খাজনা বলে। তবে দীর্ঘকালে নিম খাজনার অস্তিত্ব নেই।

১. জমি বা বাড়ি ব্যবহারের জন্য প্রজা বা ভাড়াটে জমির মালিককে বা বাড়িওয়ালাকে যে অর্থ প্রদান করে তাকে মোট খাজনা বলে। মোট খাজনা থেকে মূলধনের জন্য দেওয়া সুদ , দেখাশোনার জন্য খরচ এবং বঝুঁকি বহনের মুনাফা বাদ দিলে যে আয় অবশিষ্ট থাকে, তাকে অর্থনৈতিক বা নিট খাজনা বলে।

২. মোট খাজনার মধ্যে অর্থনৈতিক খাজনা ছাড়াও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। যেমন: মোট খাজনা = অর্থনৈতিক খাজনা + সুদ + মজুরি + মুনাফা। অপরপক্ষে অর্থনৈতিক খাজনার মধ্যে জমি ব্যবহারের দাম অন্তর্ভুক্ত থাকে। মোট খাজনা হতে আনুষঙ্গিক ব্যয় বাদ দিলে নিট খাজনা পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিট খাজনা = মোট খাজনা আনুষঙ্গিক খরচ।

৩. অর্থনৈতিক খাজনা মোট খাজনায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই মোট খাজনা সব সময়ই অর্থনৈতিক খাজনার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তাই অর্থনৈতিক খাজনা সব সময়ই মোট খাজনার চেয়ে কম থাকে। 

৪. মোট খাজনার হিসাবের সময় ভূমিসহ অন্যান্য উপাদানের জন্য প্রদেয় অর্থ একত্রে যোগ করতে হয়। অর্থনৈতিক খাজনা হিসাব করার সময় মোট খাজনা থেকে ভূমি ছাড়া অন্যান্য উপাদানের জন্য প্রদেয় অর্থ বাদ দিতে হয়।

৫. মোট খাজনা হলো খাজনা হিসাবে প্রাপ্ত সর্বমোট অর্থ। অর্থাৎ মোট খাজনা বৃহত্তর ধারণা। অর্থনৈতিক বা নিট খাজনা হলো মোট খাজনার একটি নির্দিষ্ট অংশ মাত্র।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url