কম্পিউটার কী? || What is Computer?
কম্পিউটার
এ যুগ তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার এত বেশি যে এ যুগকে কম্পিউটারের যুগও বলা হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের অনেক কিছুই কম্পিউটারের ব্যবহার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে কম্পিউটার হয়ে উঠেছে অপরিহার্য।
কম্পিউটার কী?
কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণক বা হিসাবকারী। কম্পিউটার শুধু একটি হিসাবকারী বন্যত্রই নয়, আরো অনেক কিছু। কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা উপাত্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকরণ, রূপান্তর সর্ঘক্ষণ ও প্রেরণ করে। যে ধরনের কম্পিউটারই হোকনা কেন, প্রতিটি কম্পিউটার প্রোগ্রামকৃত নির্দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় , যা কম্পিউটারকে বলে দেয় তাকে কী করতে হবে?
কম্পিউটারের গঠন
কম্পিউটার একটি উন্নত ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা। কম্পিউটার তথ্য সংগ্রহ করে, সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী তথ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে এবং প্রয়োজনানুযায়ী ফলাফল উপস্থাপন করে। কম্পিউটার যেখানে তথ্য গ্রহণ করে তাকে বলা হয় অন্তর্গাহী (Input) বা গ্রহণমুখ। এখানে কম্পিউটারের উপাত্ত প্রদান করা হয়। এজন্য যেসব ইনপুট ডিভাইস সাধারণত ব্যবহার করা হয় তাহলো কীবোর্ড, মাউস টাচপ্যাড , স্ক্যানার , ডিজিটাল ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন। যেখানে তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে তাকে বলা হ্য ৷ সিপিইউ বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট (Central Processing Unit)।
কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে থাকে মুক্তি ইউনিট নিয়ন্ত্রণ ইউনিট ও গাণিতিক যুক্তি ইউনিট। যে প্রান্ত থেকে ফলাফল পাওয়া যায় তাকে বলা হয় বহিগামী (Out : put) বা নির্গমণ মুখ । আউটপুট ডিভাইস হিসাবে প্রধানত থাকে মনিটর , স্পীকার ও প্রিন্টার। এদের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকৃত ডেটা বা উপাত্ত আমরা পাই। নিচে কম্পিউটারের একটি মৌলিক কাঠামো নেওয়া হলো:
যে সকল ভৌত ডিভাইস দিয়ে কম্পিউটার তৈরি তাদের বলা হয় হার্ডওয়্যার। যেমন — কীবোর্ড , মাউস , প্রসেসর, মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি। সফটওয়্যার হলো কতগুলো নির্দেশনা যার ভিত্তিতে কম্পিউটার কাজ করে। এগুলোকে সাধারণত কম্পিউটার প্রোগ্রাম করা হয়। প্রয়োজনের উপর ভিত্তিকরে কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করছে।
হার্ডওয়্যার হলো কম্পিউটারের দেহ এবং সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের প্রাণ। এর কাজ করার দ্রুততা , তথ্য জমা করে রাখার ক্ষমতা , সঙ্গতিপূর্ণতা, নির্ভুলতা , ক্লান্তিহীনতা ও স্বয়ংক্রিয়তা জন্য কম্পিউটার অভ্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্র হিসেবে বিবেচিত। কম্পিউটার দ্রুত কাজ করতে পারে , সেকেন্ডে হাজার হাজার , লক্ষ লক্ষ গাণিতিক হিসাব করতে পারে।
কম্পিউটারের ব্যবহার
আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো হলো:
চিকিৎসা: রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট, পরিচয়, ঠিকানা, রোগের লক্ষণ, ইত্যাদি রেকর্ড করে রাখা, ঔষধ নির্বাচন, চোখ পরীক্ষা, এক্সরে বা অন্যান্য পরীক্ষা, হার্ট অপারেশন ও চিকিৎসা গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
ব্যবসা বাণিজ্য: পণ্যের মজুদ নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়িক যোগাযোগ, টিকেট বুকিং, ব্যাংকিং সিস্টেম, স্টাফদের বেতন, আয় - ব্যয়ের বাজেট ও হিসাব নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ব্যবসায়িক কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
যাতায়াত ব্যবস্থা: জাহাজ , বিমান ও মোটরগাড়ি , ট্রেন ইত্যাদি যানবাহনের ট্রাফিক কন্ট্রোল , গতি নিয়ন্ত্রণ , টিকেট বুকিং ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় । এছাড়া মহাশূন্যয়ান পাঠানো নিয়ন্ত্রণ , চালনা ইত্যাদিতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।
শিল্প কারখানা: পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের গুণগত মান যাচাই , তথ্য সংগ্রহ, কর্মচারীদের বেতন ভাতা, কাজের সিডিওলের হিসাব ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। পারমাণবিক রিএ্যাক্টর চালনা বা এ ধরনের জটিল ও আধুনিক সব যন্ত্রের ব্যবহারে কম্পিউটার অপরিহার্য।
শিক্ষা: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ, স্বশিখন, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশ ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
প্রতিরক্ষা: সেনাবাহিনী পরিচালনা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
গবেষণা: বিভিন্ন গবেষণা কর্মে কম্পিউটারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
মুদ্রণ: কম্পিউটারের ব্যবহার মুদ্রণ শিল্পে বিপ্লব এনেছে। মুদ্রণের জন্য কম্পোজ, ডিজাইন ইত্যাদি কাজে কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে অস্বাভাবিক মুদ্রণ ব্যয় কমে এসেছে।