বাংলাদেশের কৃষির গুরুত্ব || Importance of Agriculture in Bangladesh
বাংলাদেশের কৃষির গুরুত্ব
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম প্রধান খাত হচ্ছে কৃষি। দেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৪০.৬ ভাগ কৃষিখাতে নিয়োজিত [তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০২১]। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে স্থূল দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে কৃষির বিভিন্ন খাতের অবদান শতকরা প্রায় ১৩.৪৭ ভাগ। এর মধ্যে এককভাবে ফসলের অবদান শতকরা প্রায় ৬.৭৭ ভাগ, বন ১.৬৯ ভাগ, মৎস্য ৩.৫৭ ভাগ এবং প্রাণিসম্পদের অবদান ১.৪৪ ভাগ । দেশের উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা তথা খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন, শিল্পায়ন ও টেকসই উন্নয়নে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের দেশে কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রতিবছর একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৬৬.৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৩৯৬.৪৪, ১২.৯৯ ও ৫৬.৯৩ লক্ষ মেট্রিক টন [তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০২১]
২০২০-২১ সালে উন্নতমানের পাট উৎপন্ন হয় ৭৭.২৫ লক্ষ বেল এবং কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করা হয়। যথাক্রমে ৫.৮৬ লক্ষ বেল ও ২.৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন (তথ্যসূত্র : পাট অধিদপ্তর, ২০২০)। মোট রপ্তানি আয়ের ০.২৮ % আসে চামড়া শিল্প হতে (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০২১)।
মানুষের মৌলিক চাহিদা বলতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানকে বোঝায়। এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত রয়েছে শিক্ষা ও চিকিৎসা। এ চাহিদাগুলো পূরণ হয় কৃষির মাধ্যমে মানুষের এসব চাহিদা পূরণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সফলতার ওপরই নির্ভর করে। নিচে সংক্ষেপে মৌলিক চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রসমূহের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
১ . অন্ন বা খাদ্য: খাদ্যের সিংহভাগ আসে কৃষি থেকে। যেমন- চাল, ডাল, গম, শাকসবজি, মাছ ইত্যাদি থেকে। তাই প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্যে এদেশের জনগণ কৃষির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।
২ . বস্ত্র: কৃষি হলো বস্ত্র তৈরির প্রধান কাঁচামালের (যেমন- পাট, তুলা, রেশম, পশম) উৎস। পাট, তিসি প্রভৃতির আঁশ এবং কার্পাস ও শিমুল তুলা হতে সুতি বস্ত্র, রেশমকীটের দেহ নিঃসৃত আঁশ হতে রেশমি বস্ত্র এবং ভেড়া ও ছাগলের লোম হতে পশমি বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়।
৩. বাসস্থান: এদেশের বেশিরভাগ বাসস্থান নিম্নমানের। গ্রামাঞ্চলের বাড়িঘর অধিকাংশই কাঁচা। গৃহনির্মাণের উপকরণ যেমন- কাঠ, বাঁশ, খড়, শান, গোলপাতা প্রভৃতির উৎস হলো কৃষি।
৪. চিকিৎসা: হোমিওপ্যাথিক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হলো কৃষিজাত পণ্য। উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুত করা হয়। সিনকোনা থেকে কুইনাইন তৈরি করা হয ব্যথানাশক এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক। সর্পগন্ধা গাছ থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ তৈরি হয়।
৫. শিক্ষার উপকরণ: শিক্ষার উপকরণ যেমন- কাগজ ও পেন্সিল আসে বাঁশ , আখের ছোবড়া ও ধানের খড় থেকে । কাগজ শিল্প বনা দ্রব্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
৬ . জ্বালানি: গ্রামাঞ্চলে জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার ব্যাপক। ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাঁশ , বড় ও নাড়া জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোবর শুকিয়েও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৭. কর্মসংস্থান: এদেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৪০.৬ ভাগ কৃষি খাতের সাথে জড়িত । দেশের গ্রামাঞ্চলের কর্মসংস্থানের প্রধান খাতই হলো কৃষি।