সপ্তম শ্রেণি, বিজ্ঞান, দশম অধ্যায় (বিদ্যুৎ ও চুম্বকের ঘটনা) || Class Seven, Science, Chapter 10

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১। চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বক যে সকল পদার্থকে আকর্ষণ করে এবং যাদের চুম্বকে পরিণত করা সম্ভব তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে।

২। চলবিদ্যুৎ কী?
উত্তর:
বিদ্যুৎ যখন কোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে চলে যায় তখন তাকে চলবিদ্যুৎ বলে।

৩। তাড়িত চৌম্বক কী?
উত্তর:
একটি লোহার পেরেককে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পেঁচিয়ে কুণ্ডলী তৈরি করে এর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালনা করলে লোহার পেরেকটি চুম্বকে পরিণত হয়, এটিই তাড়িত চৌম্বক।

৪। চার্জ কী?
উত্তর: পদার্থ সৃষ্টিকারী মৌলিক কণাসমূহের অর্থাৎ ইলেকট্রন ও প্রোটনের মৌলিক ও বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মকে চার্জ বলে।

৫। পরিবাহী পদার্থ কী?
উত্তর :
যার মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রনসমূহ এক পরমাণু থেকে অন্য পরমাণুতে সহজেই চলাচল করতে পারে তাকে পরিবাহী পদার্থ বলে।

৬। বিদ্যুৎ প্রবাহ কী?
উত্তর:
কোনো পরিবাহীর যেকোনো প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হয় তাকে বিদ্যুৎ প্রবাহ বলে।

৭। তড়িৎ বর্তনী কাকে বলে? 
উত্তর: তড়িৎ প্রবাহ চলার সম্পূর্ণ পথকে তড়িৎ বর্তনী বলে।

৮। বিদ্যুৎ বর্তনী কী? 
উত্তর: বিদ্যুৎ উৎসের ধনাত্মক প্রান্ত থেকে ঋণাত্মক প্রান্ত বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সম্পূর্ণ পথকে বিদ্যুৎ বর্তনী বলে।

৯। অর্ধ-পরিবাহী পদার্থ কী? 
উত্তর: যে পদার্থ নিম্ন তাপমাত্রায় অপরিবাহীর মতো আচরণ করে তাকে অর্ধ পরিবাহী পদার্থ বলে।

১০। বৈদ্যুতিক বাল্বের ভিতরে কোন তারের কুণ্ডলী থাকে? 
উত্তর: বৈদ্যুতিক বাঘের ভিতর সরু টাংস্টেন তারের কুণ্ডলী থাকে।

১১। অর্ধ-পরিবাহী পদার্থ কখন পরিবাহী পদার্থের মতো আচরণ করে? 
উত্তর: অর্ধ পরিবাহী পদার্থ উচ্চ তাপমাত্রায় পরিবাহী পদার্থের মতো আচরণ করে।

১২। টর্চের ব্যাটারিতে কোন বিদ্যুৎ থাকে? 
উত্তর:
টর্চের ব্যাটারিতে স্থির বিদ্যুৎ থাকে।

১৩। চুম্বকের শক্তি কোথায় সবচেয়ে কম থাকে? 
উত্তর:
চুম্বক দণ্ডের মাঝখানে চুম্বকের শক্তি সবচেয়ে কম থাকে।

১৪। চুম্বকের শক্তি কোথায় সবচেয়ে বেশি থাকে? 
উত্তর:
চুম্বকের দুই প্রান্ত অর্থাৎ দুই মেরুতে চুম্বকের শক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন: 
১। ধাতু বিদ্যুৎ পরিবাহী কেন?
উত্তর:
যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে খুব সহজেই বিদ্যুৎ প্রবাহ চলতে পারে তাদেরকে পরিবাহী বলে। ধাতুসমূহ বিদ্যুৎ পরিবাহী। কারণ ধাতুসমূহের সর্বশেষ কক্ষপথে মুক্ত ইলেকট্রন থাকে, যা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। আর এ মুক্ত ইলেকট্রনগুলোই বিদ্যুৎ পরিবহনে অংশগ্রহণ করে। এ মুক্ত ইলেকট্রনগুলোর উপস্থিতির কারণে ধাতু বিদ্যুৎ পরিবাহী।

২। চৌম্বক ও অচৌম্বক পদার্থের পার্থক্য কী?  
উত্তর:
চৌম্বক ও অচৌম্বক পদার্থের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
আকর্ষণ: চৌম্বক পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয়। আর, অচৌম্বক পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় না।চুম্বকে পরিণত: চৌম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করা সম্ভব। অন্যদিকে,  অচৌম্বক পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করা সম্ভব নয়।

৩। ভূ -চুম্বকত্ব বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
ভূ - চুম্বকত্ব বলতে বোঝায় পৃথিবীর চুম্বকত্ব। ভূ-চুম্বকত্বের জন্যই একটি দণ্ড চুম্বককে সুতার সাহায্যে ঝুলিয়ে দিলে তা সবসময় উত্তর দক্ষিণে মুখ করে থাকে। পৃথিবীর সব জায়গাতেই ভূ - চুম্বকের প্রভাব বর্তমান। ঝুলন্ত অবস্থায় দণ্ড চুম্বকের দুই মেরু ভূ - চুম্বকের দুই মেরুকে নির্দেশ করে। ভূ - চুম্বকের দক্ষিণ মেরু প্রকৃতপক্ষে উত্তর মেরু হিসেবে কাজ করে।

৪ । বৈদ্যুতিক বাল্বে নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর:
বৈদ্যুতিক বাল্ব এর ভেতর টাংস্টেন তারের যে ফিলামেন্ট থাকে তার গলনাঙ্ক অত্যন্ত বেশি প্রায় ৩৪০০° সেলসিয়াস। ফলে ফিলামেন্টের তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলে এক সময় ফিলামেন্ট গলে যেতে পারে। কিন্তু যদি নিষ্ক্রিয় গ্যাস আর্গন , হিলিয়াম ইত্যাদি গ্যাস বাম্বের ভেতরে ব্যবহার করা হয় তবে ফিলামেন্টের তাপমাত্রা কোনো অবস্থায় ২৭০০° সেলসিয়াসের বেশি উঠতে পারে না এবং ফিলামেন্টও গলে যায় না। আবার নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহারের ফলে বাতির উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বলা যায়, বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্টকে রক্ষা করা এবং বাল্বের আলোর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

৫। পরিবাহী বলতে কী বুঝ? 
উত্তর:
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে খুব সহজেই তড়িৎ প্রবাহ চলতে পারে তাদেরকে পরিবাহী বলে। এদের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে। ধাতব তারের মধ্য দিয়ে আধান ইলেকট্রন দ্বারা পরিবাহিত হয়। এ কারণে ধাতব পদার্থগুলো তড়িৎ সুপরিবাহী । তামা, রুপা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি তড়িৎ পরিবাহী। এ কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগে ধাতব তার ব্যবহার করা হয়।

৬। পূর্ণ বর্তনী বলতে কী বোঝ? 
উত্তর:
বর্তনীর চাবি অন করলে যখন ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত থেকে বাল্বের ভেতর দিয়ে পরিবাহী তারের মাধ্যমে ঋণাত্মক প্রান্ত পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন ঐ বর্তনীকে পূর্ণ বর্তনী বলে।

৭। বৈদ্যুতিক বাল্বে আলো উৎপন্ন হয় কেন? 
উত্তর:
দুটি মোটা তার একটি বায়ু শূন্য বা নিষ্ক্রিয় গ্যাস পূর্ণ বাল্বে বায়ু নিরুদ্ধ মুখের মধ্য দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করানো থাকে। বাল্বের ভিতরে তারের দুই প্রান্তের সাথে সরু টাংস্টেনের তারের কুণ্ডলী থাকে। এটিকে ফিলামেন্ট বলে। এই বাল্বকে বিদ্যুৎ উৎসের সাথে সংযোগ করলে ফিলামেন্ট প্রচুর তাপ উৎপাদন করে এবং বাল্বের এই ফিলামেন্ট প্রজ্জ্বলিত হয়ে আলোর বিকিরণ করতে থাকে। এভাবেই বাল্বের আলো উৎপন্ন হয়।

৮। সুইচ অন / অফ করলে বর্তনীর কীরূপ অবস্থা হয় ব্যাখ্যা কর। 
উত্তর:
বিদ্যুৎ প্রবাহের সময় বর্তনীর কোনো জায়গা খোলা থাকলে অর্থাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না। বর্তনীকে তখন খোলা বর্তনী বলে। বর্তনীতে একটি চাবি বা সুইচ ব্যবহার করে সেটি খোলা বা পূর্ণ বর্তনীতে রূপান্তর করা যায়। যখন সুইচ অন করা হয় তখন বর্তনী পূর্ণ হয়ে যায়। আর যখন সুইচ অফ করা হয় তখন বর্তনী খোলা হয়ে যায়।

৯। বৈদ্যুতিক হিটারের তারকে কুন্ডলী পাঁকিয়ে রাখা হয় কেন? 
উত্তর: বৈদ্যুতিক হিটারে নাইক্রোমের সরু লম্বা তার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে এ তার প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয় এবং প্রচুর তাপ, বিকিরণ করে এবং এ উত্তাপে রান্না করা হয়। হিটারের তার কুণ্ডলী পাঁকিয়ে রাখলে অনেক তার ধরে এবং বেশি তারের কারণে তাপও বেশি পাওয়া যায়। এতে রান্না করা সুবিধাজনক হয়। যদি তার না পাঁকিয়ে সোজা করে রাখা হয় তবে খুব অল্প তারই রাখা সম্ভব। অল্প তারের কারণে তাপও অল্প পাওয়া যাবে। থেকে রান্নার জন্য পর্যাপ্ত তাপ পাওয়া যাবে না। তাই বেশি তাপ পাওয়ার জন্য বৈদ্যুতিক হিটারে তার কুণ্ডলী পাকিয়ে রাখা হয়।

১০। চৌম্বক ও অচৌম্বক পদার্থ বলতে কী বুঝ? 
উত্তর:
চুম্বক সকল পদার্থকে আকর্ষণ করে না। চুম্বক যে সকল পদার্থকে আকর্ষণ করে তাদেরকে চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন লোহা, নিকেল, কোবাল্ট এবং অধিকাংশ স্টিল। আবার অনেক পদার্থ আছে যাদের চুম্বক আকর্ষণ করে না। এদেরকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন— কপার, অ্যালুমিনিয়াম, পিতল , স্বর্ণ, সিলভার, পারদ ইত্যাদি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url