সপ্তম শ্রেণি, ইসলাম ও নৈতিকশিক্ষা, প্রথম অধ্যায় (আকাইদ) || Class Seven, Islam and Moral Education, Chapter 1 (Akaid)

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১। 'হুসনা' শব্দের অর্থ কী? 
উত্তর: হুসনা শব্দের অর্থ সুন্দর।

২। তাওহিদ কাকে বলে?
উত্তর: আল্লাহর একত্ববাদকে তাওহিদ বলে।

৩। আল-আসমাউল হুসনা কাকে বলে?
উত্তর: আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোকে একত্রে আল - আসমাউল হুসনা বলে।

৪। নৈতিকতা কী?
উত্তর: নৈতিকতা হলো শ্রেয় নীতির অনুসরণ । অর্থাৎ কথা বার্তা, আচার আচরণে কোনো বিশেষ নীতির অনুসরণ করাকেই নৈতিকতা বলে।

৫। শিরক শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: শিরক শব্দের অর্থ হলো- অংশীদার সাব্যস্ত করা, সমকক্ষ মনে করা ইত্যাদি।

৬ । ইমান শব্দের অর্থ কী? 
উত্তর: ইমাম শব্দের অর্থ হলো— সুদৃঢ় বিশ্বাস।

৭। 'আকাইদ' অর্থ কী?
উত্তর: আকাইদ শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাসমালা।

৮। 'শিরক' কী?
উত্তর: আল্লাহর একত্বের সাথে কোনোকিছুকে অংশীদার করাই হলো শিরক।

৯। ইসলামের সর্বপ্রথম বিষয় কী? 
উত্তর: ইসলামের সর্বপ্রথম বিষয় হলো আকাইদ।

১০। আকাইদ কাকে বলে? 
উত্তর: ইসলামের মূল বিষয়গুলোর ওপর মনেপ্রাণে বিশ্বাস করাকেই আকাইদ বলে।

১১। 'তাওহিদ' শব্দের অর্থ কী? 
উত্তর: তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ।

১২। তাওহিদ কী? 
উত্তর: মহান আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করার নামই হলো তাওহিদ।

১৩। আকাইদের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় কী? 
উত্তর: আকাইদের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো তাওহিদ।

১৪। কী বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ ইমান ও ইসলামে প্রবেশ করে? 
উত্তর: তাওহিদে বিশ্বাসের মাধ্যমেই মানুষ ইমান ও ইসলামে প্রবেশ করে।

১৫। সকল নবি-রাসুলের দাওয়াতের মূল বাণী কী ছিল? 
উত্তর: সকল নবি-রাসুলের দাওয়াতের মূল বাণী ছিল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু' অর্থাৎ 'আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই।'

১৬। শুধু আল্লাহ তায়ালার সামনে মাথানত করে কারা? 
উত্তর: তাওহিদে বিশ্বাসিগণ শুধু আল্লাহ তায়ালার সামনে মাথানত করে।

১৭। কিসে বিশ্বাস মানুষকে আল্লাহ তায়ালার প্রতি নির্ভরশীল করে? 
উত্তর: তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে আল্লাহ তায়ালার প্রতি নির্ভরশীল করে।

১৮। কুফর কী শব্দ? 
উত্তর: কুফর আরবি শব্দ।

১৯। মুশরিক কাকে বলে? 
উত্তর: যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে বলা হয় মুশরিক।

২০। তাওহিদের বিপরীত কী? 
উত্তর: তাওহিদের বিপরীত হলো শিরক।

২১। শিরক প্রধানত কত প্রকার? 
উত্তর: শিরক প্রধানত তিন প্রকার।

২২। কুরআন মাজিদে শিরককে কী বলা হয়েছে? 
উত্তর: কুরআন মাজিদে শিরককে সবচেয়ে বড় জুলুম বলা হয়েছে।

২৩। ইমান মুফাস্সাল-এর অর্থ কী? 
উত্তর: ইমান মুফাস্সাল-এর অর্থ বিস্তারিত বিশ্বাস।

২৪। ফেরেশতাগণের মধ্যে কয়জন রয়েছেন নেতৃস্থানীয়? 
উত্তর: ফেরেশতাগণের মধ্যে চার জন রয়েছেন নেতৃস্থানীয়।

২৫। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব কী? 
উত্তর: সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব হলো আল-কুরআন। 

২৬। তাকদিরকে আমরা কী বলে থাকি? 
উত্তর: তাকদিরকে আমরা ভাগ্য বা নিয়তি বলে থাকি।

২৭। পুনরুত্থান কাকে বলে? 
উত্তর: মৃত্যুর পর একসময় আল্লাহ তায়ালা পুনরায় সবাইকে জীবিত করবেন। মৃত্যুর পর পুনরায় এ জীবিত হওয়াকেই পুনরুত্থান বলে।

২৮। কিসের প্রতি বিশ্বাস ইমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ? 
উত্তর: পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস ইমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

২৯। রাহমান, রাহিম নাম দ্বারা আমরা কী বুঝতে পারি? 
উত্তর: রাহমান, রাহিম নাম দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে , আল্লাহ তায়ালা দয়াবান।

৩০। গাফ্ফার নাম দ্বারা কী বুঝি? 
উত্তর: গাফ্ফার নাম দ্বারা বুঝি যে মহান আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল।

৩১। কায়্যুমুন শব্দের অর্থ কী? 
উত্তর: কায়্যুমুন শব্দের অর্থ চিরস্থায়ী, চির বিরাজমান, চির বিদ্যমান, সবকিছুর ধারক সত্তা।

৩২। আযিযুন শব্দের অর্থ কী ? 
উত্তর: আযিযুন শব্দের অর্থ মহাপরাক্রমশালী।

৩৩। আল্লাহ সাবরুন অর্থ কী? 
উত্তর: আল্লাহ সাবরুন অর্থ মহাধৈর্যশীল।

৩৪। রিসালাত অর্থ কী? 
উত্তর: রিসালাত অর্থ বার্তা, সংবাদবাহন, চিঠি, খবর পৌছানো ইত্যাদি।

৩৫ ৷ রিসালাত কাকে বলে? 
উত্তর: ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার বাণী ও পরিচয় মানুষের নিকট পৌছানোর দায়িত্বকে রিসালাত বলে।

৩৬। ওহি কী শব্দ? 
উত্তর: ওহি আরবি শব্দ।

৩৭। ওহি কাকে বলে? 
উত্তর: সাধারণত কোনো ব্যক্তির নিকট গোপনে প্রেরিত সংবাদকে ওহি বলা হয়।

৩৮। ওহি প্রধানত কত প্রকার? 
উত্তর: ওহি প্রধানত দুই প্রকার; যথা- ওহি মাতলু এবং ওহি গায়র মাতলু।

৩৯। হাদিস কাকে বলে? 
উত্তর: মহানবি(স:) -এর বাণী , কাজ ও অনুমোদনকে হাদিস বলে।

৪০। জান্নাতিগণের মধ্যে সর্বপ্রথম কে সিরাত অতিক্রম করে জান্নাতে প্রবেশ করবেন? 
উত্তর: জান্নাতিগণের মধ্যে সর্বপ্রথম আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স) সিরাত অতিক্রম করে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

৪১। মিযান অর্থ কী? 
উত্তর: মিযান অর্থ দাঁড়িপাল্লা , তুলাদণ্ড , মানদণ্ড বা পরিমাপ করার যন্ত্র।

৪২। মিযান কাকে বলে? 
উত্তর: ইসলামি পরিভাষায় যে পরিমাপক যন্ত্রের দ্বারা কিয়ামতের দিন মানুষের পাপপুণ্যকে ওজন করা হবে তাকে মিযান বলা হয়।

৪৩। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি , সুবহানাল্লাহিল আযিম এ বাক্যের অর্থ কী? 
উত্তর: অর্থ: পবিত্রতা ও প্রশংসা আল্লাহর জন্য , তিনি মহান ও অতিশয় পবিত্র। 


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১। আল্লাহ্ কাইয়্যুমুন -এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আল্লাহু কাইয়্যুমুন অর্থ আল্লাহ চিরস্থায়ী। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর আপন সত্তার জন্য কার মুখাপেক্ষী নন অথচ সকল সত্তার তিনি ধারক। তাই তিনি চিরস্থায়ী।

২। “আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী, দণ্ডদানকারী।" - এর মর্মার্থ লেখ।
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী , দণ্ডদানকারী। এটি পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ৪ নং আয়াত। এ আয়াতে মহান আল্লাহর প্রবল ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে । এখানে বলা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা অসীম ক্ষমতাধর। কেউ তাঁকে অপারগ করতে পারে না। তাঁর সাথে ধোঁকা প্রতারণা করতে পারে না। কেউ তাঁর কৌশল বা পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে পারে না। তিনি যা চান তাই হয়। তাঁর কুদরত বা ক্ষমতার মোকাবিলা করার শক্তি কারও নেই । তিনি যাকে ইচ্ছা অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে পারেন। দুনিয়ার বড় বড় ক্ষমতাবানদের তিনি ক্ষুদ্র প্রাণী বা বস্তু দ্বারা ধ্বংস করে দিয়েছেন। যেমন তিনি ফেরাউনকে পানি দ্বারা, নমরুদকে মশা দ্বারা, আবরাহাকে ছোট ছোট পাখি দ্বারা ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাঁকে অস্বীকারকারী কেউই তাঁর আযাব বা শাস্তি থেকে বাঁচতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।

৩। কুফর বলতে কী বোঝ?
উত্তর: কুফর আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, গোপন করা, ঢেকে রাখা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালা ও ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের কোনো একটির প্রতি অবিশ্বাস করাকে কুফর বলে। যে ব্যক্তি কুফরে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় কাফির।

৪। আকাইদ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: আকাইদ শব্দটি বহুবচন। এর একবচন হলো আকিদাহ, অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের সর্বপ্রথম বিষয় হলো আকাইদ। ইসলামের মূল বিষয়গুলোর ওপর মনেপ্রাণে বিশ্বাস করাকেই আকাইদ বলা হয়। অর্থাৎ তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, আসমানি কিতাব, ফেরেশতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বাস করার নাম আকাইদ।

৫। তাওহিদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তর: তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ। মহান আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করার নামই হলো তাওহিদ। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা এক। তাঁর কোনো শরিক নেই, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনিই আমাদের রক্ষক, সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রিযিকদাতা। তিনি অনাদি অনন্ত তাঁর সমকক্ষ বা সমতুল্য কিছুই নেই। তিনিই একমাত্র মাবুদ। সকল প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। মনেপ্রাণে এরূপ বিশ্বাসকেই তাওহিদ বলা হয়।

৬। শিরককে সবচেয়ে বড় জুলুম বলা হয় কেন?
উত্তর: শিরকের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্যায় আচরণ করে। কেননা আল্লাহ তায়ালাই মানুষের একমাত্র স্রষ্টা। সকল ইবাদত ও প্রশংসা লাভের হকদারও তিনি। শিরকের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদত করে। ফলে আল্লাহর সাথে চরম অন্যায় করা হয়। অন্যদিকে, শিরক মানবতাবিরোধী অপরাধও বটে। কেননা মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তায়ালা সবকিছু মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। অথচ মুশরিকরা শিরকে লিপ্ত হয়ে অন্য সৃষ্টির কাছে মাথানত করে। ফলে মানুষের মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হয়। আর এজন্যই কুরআন মাজিদে শিরককে সবচেয়ে বড় জুলুম বলা হয়েছে।

৭। তাওহিদে বিশ্বাস মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন? 
উত্তর: আকাইদের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো তাওহিদ। তাওহিদে বিশ্বাসের মাধ্যমেই মানুষ ইমান ও ইসলামে প্রবেশ করে। তাওহিদে বা একত্ববাদে বিশ্বাসের পর আকাইদের অন্যান্য বিষয়ে বিশ্বাস করতে হয়। তাই তাওহিদে বিশ্বাস মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮। দুনিয়ার জীবনেও তাওহিদে বিশ্বাসের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: তাওহিদে বিশ্বাসিগণ শুধু আল্লাহ তায়ালার সামনে মাথা নত করে। অন্য কারও সামনে সে মাথানত করে না। পক্ষান্তরে, তাওহিদে বিশ্বাস না করলে মানুষ বিপদগামী হয়ে যায় । সে গাছপালা, পশুপাখি, চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদির নিকট মাথানত করে। নানা মূর্তির পূজা করে থাকে। ফলে মানুষের আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয়। তাওহিদে বিশ্বাস মানুষের মধ্যে আত্মসম্মান ও আত্মসচেতনতা জাগিয়ে তোলে। তাই দুনিয়ার জীবনে তাওহিদে বিশ্বাসের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।

৯। একাধিক স্রষ্টা থাকলে পৃথিবীর সকল কিছুই ধ্বংস হয়ে যেত— বুঝিয়ে বল।
উত্তর: একাধিক স্রষ্টা থাকলে তাঁরা তাঁদের সৃষ্টিকে নিয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। যেমন- আগুনের স্রষ্টা আগুন নিয়ে পৃথক হয়ে পড়তেন। অতঃপর সমস্ত কিছুকে আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দিয়ে তার নিজ ক্ষমতার প্রকাশ করতেন। তেমনি মহাসাগরের স্রষ্টা সারা পৃথিবী তার সৃষ্টি দ্বারা ডুবিয়ে দিতে চাইতেন। এভাবে স্রষ্টাগণ নিজ নিজ সৃষ্টি দ্বারা অন্যের ওপর বিজয়ী হতে চাইতেন। ফলে আমাদের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যেত। পৃথিবীর সকল কিছুই ধ্বংস হয়ে যেত।

১০। কুফর অর্থ কী? উদাহরণসহ লেখ।
উত্তর: কুফর আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, গোপন করা, ঢেকে রাখা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালা ও ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের কোনো একটির প্রতি অবিশ্বাস করাকে কুফর বলে। যেমন- আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করা। ইমানের মৌলিক অন্যান্য বিশ্বাসকে অস্বীকার করা। যথা- নবি রাসুল, আসমানি কিতাব, ফেরেশতা, পরকাল, তাকদির, পুনরুত্থান, সিরাত, জান্নাত- জাহান্নাম ইত্যাদিকে অবিশ্বাস করাও কুফর।

১১। কী কী কাজ করলে কুফর প্রমাণিত হয়? পাঁচটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা ও ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের কোনো একটি অবিশ্বাস করলে কুফর প্রমাণিত হয়। যেমন-
ক . আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করলে।
খ. নবি-রাসুল, আসমানি কিতাব, ফেরেশতা, পরকাল, তাকদির, পুনরুত্থান, জান্নাত- জাহান্নাম ইত্যাদিকে অবিশ্বাস করলে। 
গ. ইসলামের মৌলিক ও ফরয ইবাদতগুলোকে অস্বীকার করলে। যেমন- সালাত , যাকাত, সাওম , হজ ইত্যাদি ইবাদতগুলোকে অস্বীকার করা।
ঘ. হালাল জিনিসকে হারাম মনে করলে।
ঙ. হারাম জিনিসকে হালাল মনে করলে।

১২। শিরক বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: শিরক শব্দের অর্থ অংশীদার করা, সমকক্ষ মনে করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কিছুকে অংশীদার করাকে শিরক বলে। অপর কোনোকিছুকে আল্লাহ তায়ালার সমতুল্য বা সমকক্ষ মনে করাও শিরক। যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে বলা হয় মুশরিক।

১৩। আসমানি কিতাবগুলো মানবজাতির জন্য আলোম্বরূপ— ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আল্লাহ তায়ালা বহু আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন। এগুলো সমস্তই আল্লাহর কালাম বা বাণী। তিনি নবি-রাসুলগণের মাধ্যমে এ কিতাবগুলো আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন। এসবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব হলো আল-কুরআন। তাই এসব কিতাব মানবজাতির জন্য আলোম্বরূপ। এসব কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতরণ করা হয়েছে এমন বিশ্বাস রাখতে হবে।

১৪। পুনরুত্থান বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: মৃত্যু একটি অনিবার্য সত্য। সকল জীবিত প্রাণীকেই মরতে হবে। আবার এমন একসময় আসবে যখন আল্লাহ তায়ালা সবকিছু ধ্বংস করে দেবেন। পৃথিবীর কোনোকিছুই সেদিন অবশিষ্ট থাকবে না। কেবল আল্লাহ তায়ালাই বাকি থাকবেন। এরপর একসময় আল্লাহ তায়ালা পুনরায় সবাইকে জীবিত করবেন। মৃত্যুর পর পুনরায় এ জীবিত হওয়াকেই পুনরুত্থান বলে।

১৫। আল্লাহ হায়্যুন বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: হায়্যুন শব্দের অর্থ চিরঞ্জীব। যিনি চিরকাল ধরে জীবিত। আল্লাহ হায়্যুন অর্থ আল্লাহ চিরঞ্জীব। তিনি চিরকাল ধরে আছেন, থাকবেন। যখন কোনোকিছুই ছিল না তখনো তিনি ছিলেন। আবার কিয়ামতে যখন সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে তখনও তিনি থাকবেন। তাঁর কোনো ক্ষয় নেই, রোগ-শোক, দুঃখ-জর , তন্দ্রা-নিদ্ৰা কিছুই নেই। কোনোরূপ ধ্বংস তাকে স্পর্শও করতে পারে না। তিনি সকল ক্ষয় ও ধ্বংস থেকে মুক্ত।

১৬। রিসালাত বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: রিসালাত অর্থ বার্তা, সংবাদবাহন, চিঠি, খবর পৌছানো ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহর বাণী ও পরিচয় মানুষের নিকট পৌছানোর দায়িত্বকে রিসালাত বলে।

১৭। রিসালাতের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। 
উত্তর: ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার বাণী ও পরিচয় মানুষের নিকট পৌছানোর দায়িত্বকে রিসালাত বলে। রিসালাতে বিশ্বাস করা ইমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাওহিদে বিশ্বাস করার সাথে সাথে আমাদের রিসালাতেও বিশ্বাস করতে হবে। কেননা রিসালাতে বিশ্বাস না করলে মুমিন হওয়া যায় না। নবি-রাসুলগণ রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা ছিলেন আল্লাহ তায়ালা ও মানবজাতির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী। তাঁদের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ তায়ালার সঠিক পরিচয় পাই। তাঁরাই আমাদের নিকট মহান আল্লাহর বাণী নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ, বিধিবিধান বর্ণনা করেছেন। সুতরাং রিসালাত ও নবি-রাসুলগণের ওপর বিশ্বাস করা অপরিহার্য।

১৮। রিসালাত ও নবি-রাসুলগণের ওপর বিশ্বাস করা অপরিহার্য–বুঝিয়ে বল।
উত্তর: নবি-রাসুলগণ রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা ছিলেন আল্লাহ তায়ালা ও মানবজাতির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী। তাঁদের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ তায়ালার সঠিক পরিচয় পাই। তাঁরাই আমাদের নিকট মহান আল্লাহর বাণী নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ, বিধিবিধান বর্ণনা করেছেন। সুতরাং রিসালাত ও নবি-রাসুলগণের ওপর বিশ্বাস করা অপরিহার্য।

১৯ । ওহি কাকে বলে বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ওহি আরবি শব্দ। এর অর্থ ইশারা, ইঙ্গিত, গোপন কথা ইত্যাদি। সাধারণত কোনো ব্যক্তির নিকট গোপনে প্রেরিত সংবাদকে ওহি বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবি রাসুলগণের নিকট প্রেরিত সংবাদ বা বাণীকে ওহি বলা হয়। যেমন— আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স) - এর ওপর আল - কুরআন নাযিল করেছেন। সুতরাং আল-কুরআন হলো এক প্রকার ওহি।

২০। সিরাত অর্থ কী? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: সিরাত শব্দের অর্থ পথ, রাস্তা, পুল, পদ্ধতি ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় সিরাত হলো জাহান্নামের ওপর স্থাপিত একটি পুল। এ পুল পার হয়ে জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আখিরাতে সকল মানুষকেই এ পুলের ওপর আরোহণ করে তা অতিক্রম করতে হবে। যে নেক আমল করবে মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেবেন। জান্নাতিগণ সিরাতের ওপর দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। সেখানে ইমান ও নেক আমল ব্যতীত আর কোনো আলো থাকবে না। জান্নাতিগণের মধ্যে আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বপ্রথম সিরাত অতিক্রম করে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

২১। জাহান্নামিদের জন্য সিরাত অত্যন্ত ভয়াবহ স্থান— ব্যাখ্যা কর। 
উত্তর: জাহান্নামিদের জন্য সিরাত হবে অত্যন্ত ভয়াবহ স্থান। তাদের জন্য সিরাত হবে চুলের চাইতেও সূক্ষ্ম এবং তরবারি অপেক্ষা ধারালো। সেখানে কোনো আলো থাকবে না। পুরো সিরাত হবে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন অবস্থায় তারা সিরাতে আরোহণ করবে। তারা কিছুতেই সিরাত অতিক্রম করতে পারবে না। বরং তাদের হাত পা কেটে তারা জাহান্নামে পতিত হবে।

২২। মিযান বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: মিযান অর্থ দাঁড়িপাল্লা, তুলাদণ্ড, মানদণ্ড বা পরিমাপ করার যন্ত্র। ইসলামি পরিভাষায়, যে পরিমাপক যন্ত্রের দ্বারা কিয়ামতের দিন মানুষের পাপপুণ্যকে ওজন করা হবে তাকে মিযান বলে। আমরা নিশ্চয়ই দাঁড়িপাল্লা দেখেছি। এর দুটি পাল্লা থাকে এবং মাঝে একটি দণ্ড থাকে। এগুলোর মাধ্যমে আমরা নানা জিনিস পরিমাপ করে থাকি। মিযানও তেমনি একটি মানদণ্ড। এর দুটি পাল্লাতে মানুষের সকল আমল ওজন করা হবে। এর এঁক পাল্লায় থাকবে পুণ্য এবং অন্য পাল্লায় উঠানো হবে পাপ। যে ব্যক্তির পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে সে হবে জান্নাতি। আর যে ব্যক্তির পুণ্যের পাল্লা হালকা হবে ও পাপের পাল্লা ভারী হবে সে হবে জাহান্নামি। 

২৩। তাওহিদ ও নৈতিকতা বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: তাওহিদ অর্থ একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালা তাঁর সত্তা ও গুণাবলিতে এক ও অদ্বিতীয় এ বিশ্বাসকে তাওহিদ বলা হয়। আর নৈতিকতা হলো নীতিমূলক, নীতি সম্বন্ধীয় অর্থাৎ কথাবার্তা, আচার আচরণে নীতির অনুসরণ করাকেই নৈতিকতা বলা হয়। তাওহিদ ও নৈতিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তাওহিদের শিক্ষা মানুষকে নৈতিকতার দিকে পরিচালনা করে। যে ব্যক্তি তাওহিদে বিশ্বাসী সে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url