সপ্তম শ্রেণি, বাওবি দ্বিতীয় অধ্যায় (বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য) || Class Seven, BGS Chapter 2 (Culture and cultural diversity of Bangladesh)
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. লোকসংস্কৃতি কী?
উত্তর: যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষ যে সংস্কৃতি লালন করে আসছে, তাই লোকসংস্কৃতি।
২. বাংলাদেশে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়টি ছোট?
উত্তর: খ্রিষ্টান সম্প্রদায়।
৩. কার জীবন ঘিরে বৈশাখী পূর্ণিমায় উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়?
উত্তর: গৌতম বুদ্ধের।
৪. বড়দিন কী?
উত্তর: যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন।
৫. বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের সংস্কৃতিকে আমরা কয় ভাগে ভাগ করতে পারি?
উত্তর: ২ ভাগে।
৬. জল সেচ করা হয় কোন মেশিন দিয়ে?
উত্তর: শ্যালো মেশিন।
৭. জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার বেশি ব্যবহার করার প্রভাবে কী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?
উত্তর: ছোট মাছ আর মাছের ডিম।
৮. গ্রামের মানুষ কী খায়?
উত্তর: সাধ্যমতো মাছ, ভাত, শাকসবজি, ডাল ইত্যাদি খায়।
৯. বর্ষায় যাতায়াতের বাহন কোনটি?
উত্তর: নৌকা।
১০. মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কী?
উত্তর: ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা।
১১. কোন ধর্মের মানুষ নানা রকম পূজা উৎসব উদযাপন করে?
উত্তর: হিন্দুধর্মের।
১২. বৌদ্ধপূর্ণিমা কাদের ধর্মীয় উৎসব?
উত্তর: বৌদ্ধধর্মের মানুষের।
১৩. শহরে কোনটি পাওয়া কঠিন?
উত্তর: খোলা মাঠ।
১৪. শহরের মানুষ কী নিয়ে ব্যস্ত থাকে?
উত্তর: যার যার পেশা।
১৫. কোন সমাজের মধ্য থেকে লোকসংস্কৃতির যাত্রা শুরু হয়েছে?
উত্তর: গ্রামীণ কৃষিজীবী সমাজের।
১৬. দৃষ্ট আত্মাগুলো কী করে?
উত্তর: ভূত হয়ে মানুষকে ভয় দেখায়।
১৭. কারা সন্তান কামনায় শিবের মন্দিরে পূজা দেয়?
উত্তর: নিঃসন্তান হিন্দু মহিলারা।
১৮. লোকসংস্কৃতির উপাদান কয়টি?
উত্তর: ২ টি।
১৯. অবস্তুগত উপাদানের প্রধান বিষয় কী?
উত্তর: সাহিত্য।
২০. রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ কোন অঞ্চলে বাস করে?
উত্তর: কক্সবাজার ও পটুয়াখালী।
২১. বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে কোন নৃগোষ্ঠী?
উত্তর: চাকমা, মারমা, রাখাইন ইত্যাদি।
২২. মণিপুরিদের সবচেয়ে প্রিয় কী?
উত্তর: নাচ করা।
২৩. গোপী নাচ কী?
উত্তর: রাধা-কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নাচ করাকে মণিপুরিরা গোপী নাচ বলে।
২৪. মণিপুরিরা কখন হোলি উৎসব পালন করে?
উত্তর: বসন্তকালে।
২৫. ওঁরাওরা কী বিশ্বাস করে?
উত্তর: পৌষ মাসে গৃহনির্মাণ ও ছাউনি দেওয়া অকল্যাপ।
২৬. মাহাতোরা কোন মাসে বিয়ে করে না?
উত্তর: অগ্রহায়ণ মাসে।
২৭. মারমা নারীদের পোশাককে কী বলে?
উত্তর: থামি।
২৮. নাখাম কী?
উত্তর: শুঁটকি মাছ।
২৯. গারোদের প্রিয় খাদ্য কি?
উত্তর: নাখাম।
৩০. ওঁরাওদের খাদ্যের মধ্যে জনপ্রিয় কোনটি?
উত্তর: পিঠা-পুলি।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১। ধর্মের মূল শিক্ষা কী? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। এসব মানুষের আচার অনুষ্ঠানও ভিন্ন। এসব ভিন্নতাকে অতিক্রম করে মানবিক মূল্যবোধে সব ধর্মের, সব ভাষার, সব পেশার, সব দেশের মানুষ শান্তিতে সম্প্রীতিতে বাস করতে পারে। আর এটাই হলো সব ধর্মের মূল শিক্ষা।
উত্তর: পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। এসব মানুষের আচার অনুষ্ঠানও ভিন্ন। এসব ভিন্নতাকে অতিক্রম করে মানবিক মূল্যবোধে সব ধর্মের, সব ভাষার, সব পেশার, সব দেশের মানুষ শান্তিতে সম্প্রীতিতে বাস করতে পারে। আর এটাই হলো সব ধর্মের মূল শিক্ষা।
২। মানুষ কেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে?
উত্তর: একসময় বাংলাদেশকে বলা হতো একটি বড় প্রায়। কিছু কিছু অঞ্চলে শহর গড়ে উঠলেও তাতে গ্রামের প্রভাবই ছিল বেশি। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে এবং বড় বড় শহর গড়ে ওঠে । জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। শুধু কৃষির উপর নির্ভর করে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মানুষ নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে।
৩। গ্রামীণ সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: মানুষ যা করে ও যা ভাবে এমন সকল কিছুই তার সংস্কৃতি। গ্রামের মানুষ নানা ধরনের পেশার সাথে যুক্ত থাকে। আর এভাবে সে যে আচরণ করে, যা সৃষ্টি করে বা যে ভূমিকা রাখে তার একত্রিভরূপই গ্রামীণ সংস্কৃতি। যেসব পেশাজীবী গ্রামে বাস করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কৃষক, জেলে, তীতি, কামার, কুমার, মাঝি, দর্জি, কবিরাজ, ডাক্তার, ওঝা, বৈদ্য, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত প্রভৃতি।
৪। আগের মতো গ্রামে এখন মাছ সহজলভ্য নয় কেন?
উত্তর: মাছেভাতে বাঙালি কথাটা কিছুকাল আগেও গ্রামের মানুষের জন্য প্রযোজ্য ছিল। নদীনালা ও খালবিলে প্রচুর মাছ থাকত। এখন নদীনালা অনেক ভরাট হয়ে গেছে। জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার বেশি ব্যবহার করায় এসবের নির্যাস পানিতে পড়ছে। এর প্রভাবে ছোট ছোট মাছ আর মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আগের মতো মাছ গ্রামে সহজলভ্য নয়।
৫। গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: গ্রামের মানুষ এক সময় পায়ে হেঁটেই চলাফেরা করত। কোনো কোনো অঞ্চলে গরুর গাড়ির ব্যবহার ছিল। বর্ষায় যাতায়াতের বাহন ছিল নৌকা। এখন রাস্তাঘাটের উন্নতি হওয়ায় রিকশা ও মোটরগাড়িতে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠা বাওয়া নৌকার বদলে এখন অনেক ক্ষেত্রে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ব্যবহার হচ্ছে।
৬। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে সংস্কার মানতে গিয়ে কী ধরনের লোকসংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে লেখ।
উত্তর: এখন যদিও অনেক কমে গেছে, তবুও বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের কোনো কোনো সংস্কার একেবারে হারিয়ে যায়নি। যেমন- অনুষ্ঠানে অনেকে সবাই হলুদ দিতে পারবে, কিন্তু বিধবা এবং বাচ্চা হয় না যে মহিলাদের তারা হলুদ দিতে পারবে না। কারণ বিশ্বাস ছিল এরা হলুদ দিলে তা কানের জন্য অশুভ হবে।
৭। লোকসংস্কৃতির বস্তুগত উপাদানগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর: লোকসংস্কৃতির যেসব উপাদান ধরা যায় ও ছোঁয়া যায় তা বস্তুগত উপাদান। যেমন-
লোকশিল্প: তাঁতশিল্প, শাখা বা শঙ্খশিল্প, কাঁসাশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশিকাঁথা, বেতশিল্প ইত্যাদি।
লোকবিজ্ঞান: তাঁতশিল্পের চরকা, মাছ ধরার চাই, লাঙল-কাস্তে ইত্যাদি তৈরির কারিগরি শিল্প ইত্যাদি।
লোকযান: নৌকা, পালকি ইত্যাদি। এসব ছাড়াও রয়েছে লোকক্রীড়া, লোকতৈজসপত্র, লোকবাদ্য, লোকখাদ্য, লোকচিকিৎসা, লোকঅলঙ্কার ইত্যাদি।
৮। অবস্তুগত উপাদানের প্রধান বিষয়টিই হচ্ছে সাহিত্য।- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: যেসব সাংস্কৃতিক বিষয় ধরা যায় না ও ছোঁয়া যায় না, অর্থাৎ মানুষের চিন্তা থেকে জন্ম নেয় এবং মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, তাকে লোকসংস্কৃতির অবস্তুগত উপাদান বলা হয়। অবস্তুগত উপাদানের প্রধান বিষয়টিই হচ্ছে সাহিত্য। এসব সাহিত্যের লিখিতরূপ নেই। মানুষের মুখে মুখে তা ছড়িয়ে আছে। এ ধারার সাহিত্য লোকসাহিত্য নামেও পরিচিত। যেমন- লোককাহিনী বা কিসসা, লোকগীতি, লোকসঙ্গীত, প্রবাদ - প্রবচন, ডাকের কথা, খনার বচন ছেলে ভোলানো ছড়া, বাঁধা, লোকনাটক ইত্যাদি।
৯। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক সম্প্রদায় বাংলাদেশ বসবাস করে। তবে এদের বেশিরভাগ বসবাস করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এ অঞ্চলে বসবাস করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বর্ম, খুমিসহ আরও অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। বৃহত্তর ময়মনসিংহে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হচ্ছে গারো ও হাজং। সিলেট অঞ্চলে রয়েছে খাসিয়া ও মণিপুরিদের বাস। উত্তরবঙ্গ বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলে বাস করে সাঁওতাল ও ওরাওসহ অন্য অনেক সম্প্রদায়। আর কক্সবাজার ও পটুয়াখালী অঞ্চলে বাস করে রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ।
১০। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নানাভাবে প্রকৃতিকে রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরে কেন?
উত্তর: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ একসময় প্রকৃতি পূজা করত। প্রকৃতির প্রতি এ মমত্ববোধ ও ভক্তি এখনও তাদের মাঝে বিদ্যমান। তারা বিশ্বাস করে যে, মানুষ প্রকৃতির অধীন, প্রকৃতি মানুষের অধীন নয়। এ কারণেই তারা পূজা পার্বণ, সামাজিক রীতিনীতি, দৈনন্দিন জীবনযাপন সর্বত্র নানাভাবে প্রকৃতিকে রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরে।
১১। প্রকৃতির জায়গায় প্রার্থনার বিষয়ে পরিণত হয় বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত সত্তা।— বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ এক সময় প্রকৃতি পূজা করত। কিন্তু ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক শক্তির সংস্পর্শে আসার ফলে এবং আধুনিক নগররাষ্ট্রের আওতাভুক্ত হয়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার ধর্ম, বিশ্বাস, রীতি - নীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেক সম্প্রদায় নতুন ধর্ম গ্রহণ করে। যেমন- চাকমা, মারমা, রাখাইনসহ অনেক নৃগোষ্ঠী বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে। আবার গারো, সাঁওতাল, ওঁরাওসহ অনেক নৃগোষ্ঠী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। ফলে প্রকৃতির জায়গায় প্রার্থনার বিষয়ে পরিণত হয় বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক সত্তা।
১২। টোটেম বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আনক নৃগোষ্ঠীর মানুষ বিশ্বাস করে কোনো একটি প্রাণী হচ্ছে তাদের গোত্রের প্রতীক। এ বিশ্বাসকে টোটেম বলে। সাধারণত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছে তাদের নিজ নিজ টোটেম খাওয়া নিষিদ্ধ। যে কোনো ধরনের নেশা, পান কিংবা মাংস ভক্ষণ রীতি চিরাচরিতভাবে মণিপুরিদের সমাজে নিষিদ্ধ। ধর্মীয় উৎসবাদিতে মাছও নিষিদ্ধ।