সপ্তম শ্রেণি, বাওবি দ্বিতীয় অধ্যায় (বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য) || Class Seven, BGS Chapter 2 (Culture and cultural diversity of Bangladesh)
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. লোকসংস্কৃতি কী?
উত্তর: যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষ যে সংস্কৃতি লালন করে আসছে, তাই লোকসংস্কৃতি।
২. বাংলাদেশে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়টি ছোট?
উত্তর: খ্রিষ্টান সম্প্রদায়।
৩. কার জীবন ঘিরে বৈশাখী পূর্ণিমায় উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়?
উত্তর: গৌতম বুদ্ধের।
৪. বড়দিন কী?
উত্তর: যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন।
৫. বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের সংস্কৃতিকে আমরা কয় ভাগে ভাগ করতে পারি?
উত্তর: ২ ভাগে।
৬. জল সেচ করা হয় কোন মেশিন দিয়ে?
উত্তর: শ্যালো মেশিন।
৭. জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার বেশি ব্যবহার করার প্রভাবে কী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?
উত্তর: ছোট মাছ আর মাছের ডিম।
৮. গ্রামের মানুষ কী খায়?
উত্তর: সাধ্যমতো মাছ, ভাত, শাকসবজি, ডাল ইত্যাদি খায়।
৯. বর্ষায় যাতায়াতের বাহন কোনটি?
উত্তর: নৌকা।
১০. মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কী?
উত্তর: ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা।
১১. কোন ধর্মের মানুষ নানা রকম পূজা উৎসব উদযাপন করে?
উত্তর: হিন্দুধর্মের।
১২. বৌদ্ধপূর্ণিমা কাদের ধর্মীয় উৎসব?
উত্তর: বৌদ্ধধর্মের মানুষের।
১৩. শহরে কোনটি পাওয়া কঠিন?
উত্তর: খোলা মাঠ।
১৪. শহরের মানুষ কী নিয়ে ব্যস্ত থাকে?
উত্তর: যার যার পেশা।
১৫. কোন সমাজের মধ্য থেকে লোকসংস্কৃতির যাত্রা শুরু হয়েছে?
উত্তর: গ্রামীণ কৃষিজীবী সমাজের।
১৬. দৃষ্ট আত্মাগুলো কী করে?
উত্তর: ভূত হয়ে মানুষকে ভয় দেখায়।
১৭. কারা সন্তান কামনায় শিবের মন্দিরে পূজা দেয়?
উত্তর: নিঃসন্তান হিন্দু মহিলারা।
১৮. লোকসংস্কৃতির উপাদান কয়টি?
উত্তর: ২ টি।
১৯. অবস্তুগত উপাদানের প্রধান বিষয় কী?
উত্তর: সাহিত্য।
২০. রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ কোন অঞ্চলে বাস করে?
উত্তর: কক্সবাজার ও পটুয়াখালী।
২১. বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে কোন নৃগোষ্ঠী?
উত্তর: চাকমা, মারমা, রাখাইন ইত্যাদি।
২২. মণিপুরিদের সবচেয়ে প্রিয় কী?
উত্তর: নাচ করা।
২৩. গোপী নাচ কী?
উত্তর: রাধা-কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নাচ করাকে মণিপুরিরা গোপী নাচ বলে।
২৪. মণিপুরিরা কখন হোলি উৎসব পালন করে?
উত্তর: বসন্তকালে।
২৫. ওঁরাওরা কী বিশ্বাস করে?
উত্তর: পৌষ মাসে গৃহনির্মাণ ও ছাউনি দেওয়া অকল্যাপ।
২৬. মাহাতোরা কোন মাসে বিয়ে করে না?
উত্তর: অগ্রহায়ণ মাসে।
২৭. মারমা নারীদের পোশাককে কী বলে?
উত্তর: থামি।
২৮. নাখাম কী?
উত্তর: শুঁটকি মাছ।
২৯. গারোদের প্রিয় খাদ্য কি?
উত্তর: নাখাম।
৩০. ওঁরাওদের খাদ্যের মধ্যে জনপ্রিয় কোনটি?
উত্তর: পিঠা-পুলি।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:
১. লোকযান হলো-
i. মোটর গাড়ি
ii. পালকি
iii. নৌকা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ২ ও ৩ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
২. ‘?’ চিহ্নিত স্থানে কোন বিষয়টি হবে?
ক. লোকসংস্কৃতি খ. গ্রামীণ সংস্কৃতি
গ. উপসংস্কৃতি ঘ. শহুরে সংস্কৃতি
৩. উক্ত বিষয়-
i. বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ
ii. বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে পড়ে
iii. সাধারণ মানুষের সংস্কৃতি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
৪. বাংলাদেশে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষ কী?
ক. অস্ট্রিক খ. দ্রাবিড়
গ. আর্য ঘ. বাঙালি
৫. নৃগোষ্ঠীর মানুষ একসময় কিসের পূজা করত?
ক. দেব দেবীর খ. পিঁপড়ার
গ. প্রকৃতির ঘ. মূর্তির
৬. চাকমা, মারমা ও রাখাইনরা কোন ধর্মের অনুসারী?
ক. ইসলাম খ. বৌদ্ধ
গ. খ্রিষ্টান ঘ. সনাতন
৭. ভিন্ন নৃগোষ্ঠীর আনন্দ-উৎসবের অধিকাংশ কিসের সাথে সম্পৃক্ত?
ক. মাছ ধরার সাথে খ. ঘর বানানোর সাথে
গ. পূজা-পার্বণের সাথে ঘ. ফসল উৎপাদনের সাথে
৮. কোন সমাজে সর্বকনিষ্ঠ কন্যা সমুদয় সম্পত্তির অধিকারী হয়?
ক. খাসিয়া ও গারো খ. চাকমা ও গারো
গ. মারমা ও খাসিয়া ঘ. রাখাইন ও চাকমা
৯. দকমান্দা ও দকশাড়ি কোন নৃগোষ্ঠীর নারীদের ঐতিহ্যগত পোশাক?
ক. চাকমা খ. রাখাইন
গ. মণিপুরি ঘ. গারো
১০. বাংলাদেশে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগ বসবাস করে-
ক. পটুয়াখালীতে খ. নেত্রকোনায়
গ. রংপুরে ঘ. পার্বত্য চট্টগ্রামে
১১. গোরী ও তার সম্প্রদায়ের লোকজন একসময় প্রকৃতি পূজা করলেও বর্তমানে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী। গোরী ও তার সম্প্রদায়ের লোকজন কোন নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত?
ক. গারো খ. চাকমা
গ. মারমা ঘ. রাখাইন
১২. কোন নৃগোষ্ঠীর রাধা-কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নাচ করা সবচেয়ে প্রিয়?
ক. মণিপুরি খ. খাসিয়া
গ. গারো ঘ. মারমা
১৩. রাধা-কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে মণিপুরীদের নাচ করাকে বলা হয়-
ক. ঝুমুর নাচ খ. গোপী নাচ
গ. ঝিকা নাচ ঘ. দোন নাচ
১৪. বসন্তকালে জাঁকজমকের সাথে হোলি উৎসব পালন করে কারা?
ক. মনিপুরিরা খ. খুমিরা
গ. রাখাইনরা ঘ. কোচরা
১৫. শ্রীমতি সোহরাই উৎসবে নেচে-গেয়ে আনন্দ করে থাকে। সে কোন নৃগোষ্ঠীর সদস্য?
ক. ওরাওঁ খ. খুমি
গ. খাসিয়া ঘ. সাঁওতাল
১৬. পৌষ মাসে গৃহনির্মাণ ও ছাউনি দেওয়াকে কারা অকল্যাণ মনে করে?
ক. খুমিরা খ. গারোরা
গ. ওরাওঁরা ঘ. চাকমারা
১৭. রাতে ঘর ঝাড়ু দিয়ে ময়লা বাইরে ফেলাকে কারা অকল্যাণ মনে করে?
ক. গারোরা খ. মারমারা
গ. রাখাইনরা ঘ. হাজংরা
১৮. কারা মনে করে যে, নবজাতক সন্তানকে ছুঁতে হলে আগুনে হাত একটু গরম করে নিতে হয়?
ক. কোচরা খ. রাখাইনরা
গ. খিয়ারা ঘ. ওরাওঁরা
১৯. কাদের মতে, মাঘ মাসে মুলা খাওয়া উচিত নয়?
ক. খিয়াং খ. হাজং
গ. খুমি ঘ. বর্মণ
২০. নববর্ষকে বরণ করতে কারা ফাগুয়া উৎসব পালন করে?
ক. মারমারা খ. রাখাইনরা
গ. খাসিয়ারা ঘ. ওরাওঁরা
২১. ওরাওঁরা কোন মাস থেকে বছর গণনা শুরু করে?
ক. মাঘ খ. ফাল্গুন
গ. চৈত্র ঘ. বৈশাখ
২২. ‘ক’ একটি ভিন্ন নৃগোষ্ঠী। তারা অগ্রহায়ণ মাসে বিয়ে করে না। ‘ক’ নৃগোষ্ঠীর সাথে কোন নৃগোষ্ঠীর মিল রয়েছে?
ক. পাংখেয় খ. গারো
গ. মাহাতো ঘ. রাখাইন
২৩. কোন নৃগোষ্ঠীর মেয়েরা উপরের অংশে এক ধরনের ব্লাউজ পরে?
ক. চাকমা খ. ওরাওঁ
গ. রাখাইন ঘ. সাঁওতাল
২৪. মারমা নারীদের পোশাকের নাম হলো-
ক. থামি খ. পিনোন
গ. গমবং ঘ. আঞ্জি
২৫. সঞ্জয়দের সমাজে মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। তাদের সমাজ কোন নৃগোষ্ঠীর সমাজকে নির্দেশ করেছে?
ক. খাসিয়া খ. মণিপুরি
গ. কোচ ঘ. মারমা
২৬. মণিপুরিদের ধর্মীয় উৎসবাদিতে কোনটি খাওয়া নিষিদ্ধ?
ক. মাংস খ. মাছ
গ. শাক-সবজি ঘ. ফল-মূল
২৭. গারোদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য কোনটি?
ক. শুঁটকি মাছ খ. পিঠা-পুলি
গ. মিউয়া ঘ. সিঁদোল
২৮. ওরাওঁদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার কোনটি?
ক. মাছ খ. মাংস
গ. শুঁটকি মাছ ঘ. পিঠা-পুলি
২৯. কারা মনে করে যে, জুলাই মাসে বিয়ে করা বা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াও নিষিদ্ধ?
ক. পাংখেয়রা খ. মণিপুরিরা
গ. চাকমারা ঘ. মারমারা
৩০. মাহাতোরা বিয়ে করে না-
ক. পৌষ মাসে খ. ফাল্গুন মাসে
গ. অগ্রহায়ণ মাসে ঘ. মাঘ মাসে
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. ধর্মের মূল শিক্ষা কী? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। এসব মানুষের আচার অনুষ্ঠানও ভিন্ন। এসব ভিন্নতাকে অতিক্রম করে মানবিক মূল্যবোধে সব ধর্মের, সব ভাষার, সব পেশার, সব দেশের মানুষ শান্তিতে সম্প্রীতিতে বাস করতে পারে। আর এটাই হলো সব ধর্মের মূল শিক্ষা।
উত্তর: পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। এসব মানুষের আচার অনুষ্ঠানও ভিন্ন। এসব ভিন্নতাকে অতিক্রম করে মানবিক মূল্যবোধে সব ধর্মের, সব ভাষার, সব পেশার, সব দেশের মানুষ শান্তিতে সম্প্রীতিতে বাস করতে পারে। আর এটাই হলো সব ধর্মের মূল শিক্ষা।
২. মানুষ কেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে?
উত্তর: একসময় বাংলাদেশকে বলা হতো একটি বড় প্রায়। কিছু কিছু অঞ্চলে শহর গড়ে উঠলেও তাতে গ্রামের প্রভাবই ছিল বেশি। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে এবং বড় বড় শহর গড়ে ওঠে । জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। শুধু কৃষির উপর নির্ভর করে চলাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মানুষ নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে।
৩. গ্রামীণ সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: মানুষ যা করে ও যা ভাবে এমন সকল কিছুই তার সংস্কৃতি। গ্রামের মানুষ নানা ধরনের পেশার সাথে যুক্ত থাকে। আর এভাবে সে যে আচরণ করে, যা সৃষ্টি করে বা যে ভূমিকা রাখে তার একত্রিভরূপই গ্রামীণ সংস্কৃতি। যেসব পেশাজীবী গ্রামে বাস করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কৃষক, জেলে, তীতি, কামার, কুমার, মাঝি, দর্জি, কবিরাজ, ডাক্তার, ওঝা, বৈদ্য, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত প্রভৃতি।
৪. আগের মতো গ্রামে এখন মাছ সহজলভ্য নয় কেন?
উত্তর: মাছেভাতে বাঙালি কথাটা কিছুকাল আগেও গ্রামের মানুষের জন্য প্রযোজ্য ছিল। নদীনালা ও খালবিলে প্রচুর মাছ থাকত। এখন নদীনালা অনেক ভরাট হয়ে গেছে। জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার বেশি ব্যবহার করায় এসবের নির্যাস পানিতে পড়ছে। এর প্রভাবে ছোট ছোট মাছ আর মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আগের মতো মাছ গ্রামে সহজলভ্য নয়।
৫. গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: গ্রামের মানুষ এক সময় পায়ে হেঁটেই চলাফেরা করত। কোনো কোনো অঞ্চলে গরুর গাড়ির ব্যবহার ছিল। বর্ষায় যাতায়াতের বাহন ছিল নৌকা। এখন রাস্তাঘাটের উন্নতি হওয়ায় রিকশা ও মোটরগাড়িতে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠা বাওয়া নৌকার বদলে এখন অনেক ক্ষেত্রে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ব্যবহার হচ্ছে।
৬. গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে সংস্কার মানতে গিয়ে কী ধরনের লোকসংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে লেখ।
উত্তর: এখন যদিও অনেক কমে গেছে, তবুও বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের কোনো কোনো সংস্কার একেবারে হারিয়ে যায়নি। যেমন- অনুষ্ঠানে অনেকে সবাই হলুদ দিতে পারবে, কিন্তু বিধবা এবং বাচ্চা হয় না যে মহিলাদের তারা হলুদ দিতে পারবে না। কারণ বিশ্বাস ছিল এরা হলুদ দিলে তা কানের জন্য অশুভ হবে।
৭. লোকসংস্কৃতির বস্তুগত উপাদানগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর: লোকসংস্কৃতির যেসব উপাদান ধরা যায় ও ছোঁয়া যায় তা বস্তুগত উপাদান। যেমন-
লোকশিল্প: তাঁতশিল্প, শাখা বা শঙ্খশিল্প, কাঁসাশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশিকাঁথা, বেতশিল্প ইত্যাদি।
লোকবিজ্ঞান: তাঁতশিল্পের চরকা, মাছ ধরার চাই, লাঙল-কাস্তে ইত্যাদি তৈরির কারিগরি শিল্প ইত্যাদি।
লোকযান: নৌকা, পালকি ইত্যাদি। এসব ছাড়াও রয়েছে লোকক্রীড়া, লোকতৈজসপত্র, লোকবাদ্য, লোকখাদ্য, লোকচিকিৎসা, লোকঅলঙ্কার ইত্যাদি।
৮. অবস্তুগত উপাদানের প্রধান বিষয়টিই হচ্ছে সাহিত্য।- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: যেসব সাংস্কৃতিক বিষয় ধরা যায় না ও ছোঁয়া যায় না, অর্থাৎ মানুষের চিন্তা থেকে জন্ম নেয় এবং মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, তাকে লোকসংস্কৃতির অবস্তুগত উপাদান বলা হয়। অবস্তুগত উপাদানের প্রধান বিষয়টিই হচ্ছে সাহিত্য। এসব সাহিত্যের লিখিতরূপ নেই। মানুষের মুখে মুখে তা ছড়িয়ে আছে। এ ধারার সাহিত্য লোকসাহিত্য নামেও পরিচিত। যেমন- লোককাহিনী বা কিসসা, লোকগীতি, লোকসঙ্গীত, প্রবাদ - প্রবচন, ডাকের কথা, খনার বচন ছেলে ভোলানো ছড়া, বাঁধা, লোকনাটক ইত্যাদি।
৯. বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক সম্প্রদায় বাংলাদেশ বসবাস করে। তবে এদের বেশিরভাগ বসবাস করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এ অঞ্চলে বসবাস করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বর্ম, খুমিসহ আরও অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। বৃহত্তর ময়মনসিংহে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হচ্ছে গারো ও হাজং। সিলেট অঞ্চলে রয়েছে খাসিয়া ও মণিপুরিদের বাস। উত্তরবঙ্গ বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলে বাস করে সাঁওতাল ও ওরাওসহ অন্য অনেক সম্প্রদায়। আর কক্সবাজার ও পটুয়াখালী অঞ্চলে বাস করে রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ।
১০. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নানাভাবে প্রকৃতিকে রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরে কেন?
উত্তর: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ একসময় প্রকৃতি পূজা করত। প্রকৃতির প্রতি এ মমত্ববোধ ও ভক্তি এখনও তাদের মাঝে বিদ্যমান। তারা বিশ্বাস করে যে, মানুষ প্রকৃতির অধীন, প্রকৃতি মানুষের অধীন নয়। এ কারণেই তারা পূজা পার্বণ, সামাজিক রীতিনীতি, দৈনন্দিন জীবনযাপন সর্বত্র নানাভাবে প্রকৃতিকে রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরে।
১১. প্রকৃতির জায়গায় প্রার্থনার বিষয়ে পরিণত হয় বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত সত্তা।— বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ এক সময় প্রকৃতি পূজা করত। কিন্তু ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক শক্তির সংস্পর্শে আসার ফলে এবং আধুনিক নগররাষ্ট্রের আওতাভুক্ত হয়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার ধর্ম, বিশ্বাস, রীতি - নীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেক সম্প্রদায় নতুন ধর্ম গ্রহণ করে। যেমন- চাকমা, মারমা, রাখাইনসহ অনেক নৃগোষ্ঠী বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে। আবার গারো, সাঁওতাল, ওঁরাওসহ অনেক নৃগোষ্ঠী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। ফলে প্রকৃতির জায়গায় প্রার্থনার বিষয়ে পরিণত হয় বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক সত্তা।
১২. টোটেম বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আনক নৃগোষ্ঠীর মানুষ বিশ্বাস করে কোনো একটি প্রাণী হচ্ছে তাদের গোত্রের প্রতীক। এ বিশ্বাসকে টোটেম বলে। সাধারণত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছে তাদের নিজ নিজ টোটেম খাওয়া নিষিদ্ধ। যে কোনো ধরনের নেশা, পান কিংবা মাংস ভক্ষণ রীতি চিরাচরিতভাবে মণিপুরিদের সমাজে নিষিদ্ধ। ধর্মীয় উৎসবাদিতে মাছও নিষিদ্ধ।
সৃজনশীল প্রশ্ন:
১. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বাংলা প্রথম মাসের প্রথম দিন। ফরিবা, রাইসা, রুপন্তি, প্রিয়তী সকলে মিলে ঠিক করে তারা রমনার বটমূলে যাবে। সকলে লাল-সাদা রঙের শাড়ি পরবে। সেখানে মেলায় গান ও কবিতা শুনবে। প্রতি বছরই এখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়। তারা মুখোশ পরে, গায়, গান অনেকে আবার মুখে বিভিন্ন ছবি আঁকে। সারাদিন আনন্দ উচ্ছ্বাসে কাটায়।
ক. বাংলা প্রথম মাসের নাম কি?
খ. বাংলাদেশের কৃষি প্রধানত কীসের উপর নির্ভরশীল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বাংলার কোন মেলার কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিকাশে উদ্দীপকের বর্ণিত মেলার ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
২. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
শান্তা ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারের সন্তান। অন্তরা শান্তার সাথে ময়মনসিংহ তার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে দেখলো শান্তার বাবা শান্তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করে। শান্তা অন্তরাকে জানালো যে সে পরিবারের ছোট কন্যা হওয়াতে বিয়ের পরও এ বাড়িতে থাকবে এবং সমুদয় সম্পত্তির মালিক হবে। শান্তারা এক সময় গাছপালা, সমুদ্র, পাহাড় ইত্যাদির পূজা করতো। এখন তারা টিভি দেখে। তাদের এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা এখন ব্যাপকভাবে লেখাপড়া শিখছে ফলে তাদের খাওয়া-দাওয়া পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদিরও পরিবর্তন এসেছে।
ক. ‘গোপী নাচ’ কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব?
খ. ‘বৈসাবি’ বলতে কী বোঝায়?
গ. শান্তা কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত? উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “শান্তার মতো অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে”—বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
৩. নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আজ ঈদের দিন। মাইকেল, পাভেল বড়ুয়া ও সুমন পাল মেহেদীদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। মেহেদীর আম্মু তাদেরকে সেমাই খেতে দেন। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব তাদের। এ সময়ে ঝগড়াতো দূরের কথা, কেউ কাউকে না দেখলে একটা দিনও থাকতে পারেনি। তারা সবাই একটি উৎসবে যোগদান করে আনন্দে মেতে ওঠে।
ক. মানুষের ব্যক্তি ও সমাজজীবনে কোনটি বড় ভূমিকা পালন করে?
খ. বাঙালি সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন বিষয়ের ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর মাইকেল, পাভেল, সুমন ও মেহেদী ধর্মীয়ভাবে একে অপর থেকে আলাদা হলেও তাদের মূল্যবোধ একই? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
৪. নিচের চিত্রদুটি লক্ষ্য করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
চিত্র-১: ঈদ এবং ঈদের আনন্দ।
চিত্র-২: দূর্গা পূজা
ক. গ্রামীণ জীবন প্রধানত কীসের সাথে জড়িত?
খ. গ্রামীণ সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়
গ. চিত্র-১ ও চিত্র-২ এ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কোন দিকটি তুলে ধরা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পেতে উদ্দীপকের চিত্র দুটিই যথেষ্ট? যুক্তিপূর্ণ মতামত দাও।
.jpg)