সপ্তম শ্রেণি, বাওবি প্রথম অধ্যায় (বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম) || Class Seven, BGS Chapter 1 (Bangladesh Independence Struggle)

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. জিন্নাহ কত সালে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন?
উত্তর: ১৯৪৮ সালে।

২. পাকিস্তান সরকার কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করে?
উত্তর:
উর্দু ভাষা।

৩. মুক্তিযুদ্ধ কত সালে শুরু হয়?
উত্তর:
১৯৭১ সালে।

৪. ছাত্ররা কোন ধ্বনিতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়?
উত্তর:
'না, না, না' ধ্বনিতে।

সপ্তম শ্রেণি, বাওবি প্রথম অধ্যায় (বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম)

৫. ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর:
লিয়াকত আলী খান।

৬. কোন ভাষা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া যুক্তিযুক্ত ছিল? 
উত্তর:
বাংলা ভাষা।

৭. পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মধ্যে বাঙালির সংখ্যা কত ছিল?
উত্তর:
৪ কোটি ৪০ লাখ।

৮. কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়?
উত্তর:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

৯. ছাত্ররা কোন দিন গণপরিষদ ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত নেয়?
উত্তর:
২১ শে ফেব্রুয়ারি।

১০. ২১ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা কত ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে?
উত্তর:
১৪৪ ধারা।

১১. ২১ শে ফেব্রুয়ারি মিছিলের নেতৃত্বে কে ছিলেন? 
উত্তর:
আবদুল মতিন ও গাজীউল হক।

১২. ভাষাশহিদ ওলিউল্লাহর বয়স কত ছিল?
উত্তর:
৯ বছর।

১৩. ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারি যারা নিহত হয়েছিলেন তারা কী বলে পরিচিত?
উত্তর:
ভাষাশহিদ।

১৪. বড় শহিদ মিনার তৈরি করা হয় কখন?
উত্তর:
১৯৬৩ সালে।

১৫. পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান কত সালে রচিত হয়? 
উত্তর:
১৯৫৬ সালে।

১৬. নভেম্বর মাসের কত তারিখে ইউনেস্কো বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার ঘোষণা দেয়?
উত্তর:
১৭ তারিখে।

১৭. বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে কত সালে?
উত্তর:
১৯৯৯ সালে।

১৮. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কোন দল বিজয় লাভ করে?
উত্তর:
যুক্তফ্রন্ট।

১৯. ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয় কত সালে? 
উত্তর:
১৯৬৬ সালে।

২০. মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রবক্তা কে? 
উত্তর:
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

২১. কত সালে পাকিস্তানে শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর:
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে।

২২. কখন ভাষার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়?
উত্তর:
১৯৪৮ সালের ১১ ই মার্চ।

২৩. কাদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়?
উত্তর:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে।

২৪. কোন সংস্থা ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়?
উত্তর:
ইউনেস্কো।

২৫. কত সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় ? 
উত্তর: ১৯৪৯ সালে।

২৬. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক কী ছিল?
উত্তর:
নৌকা।

২৭. যুক্তফ্রন্ট জনগণের সামনে কত দফা কর্মসূচি প্রকাশ করে?
উত্তর:
২১ দফা কর্মসূচি।

২৮. কে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন চালু করেন?
উত্তর:
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মুহম্মদ।

২৯. ছয় দফা দাবিতে কে শঙ্কিত হন?
উত্তর:
আইয়ুব খান।

৩০. কোন আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো পাকিস্তান কেঁপে ওঠে?
উত্তর:
১১ দফা আন্দোলন।

৩১. কোনটি স্বাধীনতা অর্জনের অনুপ্রেরণা জোগায়? 
উত্তর:
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।

৩২. কোন সালের সংবিধানে বাঙালির অধিকার ক্ষুণ্ন হয়?

উত্তর: ১৯৬২ সালের সংবিধানে।


অনুধাবণ মূলক প্রশ্ন:
১. শহিদ মিনার কেন নির্মাণ করা হয়?
উত্তর: ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে বাংলা ভাষার দাবিতে কতিপয় ছাত্র - জনতা শহিদ হন। শহিদ ছাত্র - জনতার মধ্যে সালাম, শফিউর, জব্বার, রফিক, বরকত অন্যতম ছিলেন। এ ছাড়াও নাম না জানা আরও অনেকেই বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠাল আন্দোলনে বুকের তাজা রক্তে রাজপদ রঞ্জিত করেন। এ শহিদগণের স্মৃতি আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অম্লান করে রাখতেই শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

২. পাকিস্তান কীভাবে নীতি ও আদর্শের সংকটে পড়ে?
উত্তর: পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর রাষ্ট্রের নীতি ও আদর্শ নি বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। ক্ষমতাসীন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবর্গ যারা দেশেই তাদের ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। অথচ জিন্নাহসহ প্রথম সারির নেতারাই আবার পাঞ্জাবি বাঙালি সিদ্ধি - পাখতুন পরিচয় ভুলে পাকিস্তানি পরিচয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। তাদের দুমুখো নীতি বাঙালি জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলে রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান নীতি আদর্শের সংকটে পড়ে।

৩. বাংলার জনগণের মাঝে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে কীভাবে?
উত্তর:
১৯৪৭-৭১ পর্যন্ত মোট ২৪ বছরে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধুলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল। সর্বস্তরের বাঙালি জনগণ তা মেনে নিতে পারেনি। ফলে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে। সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ছায়ানট' প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুরো ষাটের দশকে চলমান সাংস্কৃতিক আন্দোলন বাঙালি জনগণের মাঝে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটায়।

৪. বাঙালিরা কেন ভাষা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিল?
উত্তর:
পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তানের শাসকরা শুধু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে অনড় রইলেন পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য আন্দোলন করেছিল এবং পাকিস্তানের শাসকদের ভাই বলে মেনে নিয়েছিল। অথচ শত্রুতেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বাঙালির প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলার উপর আঘাত করেছিল। ফলে শাসকদের দৃষ্টবুদ্ধি তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। এ কারণেই বাঙালিরা সিদ্ধান্ত নিল, আন্দোলন করে তারা মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করবে।

৫. যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করল কেন? 
উত্তর:
যুক্তফ্রন্ট জনগণের সামনে তাদের ২১ দফা কর্মসূচি প্রকাশ করে। এতে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি, জমিদারি প্রথা বাতিল, পাটশিল্প জাতীয়করণ, কৃষিব্যবস্থা, বিনাপয়সায় ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাদান করে। এছাড়া সব অন্যায় আইনকানুন বাতিল, ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে শহিদ মিনার নির্মাণ, ২ ফব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘোষণা এবং পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের কথাও বলা হয় যে কারণে জনগণের সমর্থন যুক্তফ্রন্টের পক্ষে যায় এবং যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে।

৬. আইয়ুব খান কীভাবে নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর:
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখিয়ো ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৮ সালের ৭ ই অক্টোবর দেশে সামরিক আইন জারি করেন। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলে প্রধান সামরিক শাসক নিযুক্ত করা হয় প্রধান সেনাপতি মুহম্মদ আইয়ুব খানকে। ২০ দিনের মধ্যেই আইয়ুব খান তার নিয়োগকর্তা ইস্কান্দার মির্জাকে পদচ্যুত করে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেন এবং নিজেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।

৭. শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেয় কেন?
উত্তর:
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিমাতামূলক আচরণের কারণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম শুরু করেন। ৫২'র ভাষা আন্দোলন থেকে আগরতলা মামলা পর্যন্ত তিনি বাংলা ও বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে বারবার কারাবরণ করেন। দুঃখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটানোর অবদানস্বরূপ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে কারামুক্তির পর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) শেখ মুজিবকে সংবর্ধনা জানায়। এখানেই ছাত্র জনতা বাঙালিদের প্রতি তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ মহান নেতাকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করে।

৮. বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবি স্বাধীনতার দাবিতে রূপান্তরিত কেন?
উত্তর:
১৯৫৮ সালে জারি সামরিক শাসনে রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড, সংসদ কার্যক্রম, মৌলিক অধিকার সব স্থগিত করে রাখা হয়। আইয়ুব আমলে বাঙালি রাজনীতিবিদদের জেল, জরিমানা ছাড়াও বিভিন্ন আদেশ ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এমনকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বঙ্গবন্ধুকে প্রহসনের বিচারে ফাঁসি দেওয়ার জন্য তাকেসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও তাদের সরকার গঠন করতে দেয়নি। ফলে পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে বাঙালির স্বায়ত্তশাসন দাবি স্বাধীনতার দাবিতে রূপান্তরিত হয়।

৯. ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কারণে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশ লাভ করে কেন?
উত্তর:
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আইয়ুব খানের শাসনামলে সবচেয়ে শক্তিশালী আন্দোলন ছিল। সাধারণ দাবি নিয়ে এ আন্দোলন শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে তা জনগণের স্বায়ত্তশাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পরিণত হয়। মাত্র তিন মাসের মধ্যে আন্দোলন ঢাকা শহর পেরিয়ে প্রাম - গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। জনগণের ঐকা ও জাগরণ যে স্বৈরাচারী শাসকদের বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী তা এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়। এভাবে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে জনুপ্রেরণা জোগায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url