কম্পিউটার প্রজন্ম || Computer Generation

 কম্পিউটার প্রজন্ম  

কম্পিউটার বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। পরিবর্তন বা বিকাশের একেকটি পর্যায় বা ধাপকে একেকটি প্রজন্ম (Generation) বলা হয়। একেকটি প্রজন্মের পরিবর্তনের সময় নতুন বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাধান্য লাভ করতে থাকে এবং একইসঙ্গে পুরনো ব্যবস্থাও পাশাপাশি অবস্থান করে। পরবর্তীতে এক সময় পুরনো ব্যবস্থা উঠে যায় এবং নতুন প্রজন্মের সৃষ্টি হয়। এভাবেই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের সূচনা হয়। কম্পিউটারে ইলেকট্রনিক্সের প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে কয়েকটি প্রজন্মে ভাগ করা যায়। 
নিচে বিভিন্ন জেনারেশনের (Generation) বৈশিষ্ট্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:

প্রথম প্রজন্ম কম্পিউটার (First Generation Computer) (১৯৫১-১৯৫৯ ): পঞ্চাশ দশকের কম্পিউটারকেই প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বায়ুশূন্য টিউব দ্বারা এ সময়ের কম্পিউটার তৈরি হতো। হাজার হাজার ডায়োড ও ট্রায়োড ভালভ , রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হতো বলে এরা আকারে অনেক বড় ছিল এবং এসব টিউব ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ বরচও পড়তো অনেক বেশি।

কম্পিউটার প্রজন্ম

প্রথম প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য: 
১. ভ্যাকুয়াম টিউববিশিষ্ট ইলেকট্রনিক বর্তনীর ব্যবহার। 
২. চুম্বকীয় ড্রাম মেমরির ব্যবহার , 
৩. মেশিন ভাষার মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে কোডের ব্যবহার। 
৪. ডেটা সংরক্ষণের জন্য ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক টিউবের ব্যবহার।
৫. Input / output ব্যবস্থার জন্য পাঞ্চকার্ডের ব্যবহার।
৬. বিশাল আকৃতির ও সহজে বহন অযোগ্য , 
৭. কম নির্ভরশীলতা ও স্বল্পগতি সম্পন্ন , 
৮. অত্যধিক বিদ্যুৎ শক্তির খরচ এবং
৯. রক্ষণাবেক্ষণ ও উত্তাপ সমস্যা। 

উদহারণ : UNIVACI , IBM 650 , IBM 704 , IBM 709 , Mark II , Mark III ইত্যাদি। 

দ্বিতীয় প্রজন্ম কম্পিউটার ( Second Generation Computer ) ( ১৯৫৯–১৯৬৫ ) : ১৯৫৯ সাল থেকে কম্পিউটারে ভালভের পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত হতে শুরু করে । ১৯৪৭ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে উইলিয়াম বি শকলে ( William B. Shokly ) , জন বার্ডিন ( Jon Berdeen ) এবং এইচ ব্রাটেন ( H. Bratain ) সম্মিলিতভাবে ট্রানজিস্টর তৈরি করেন । ট্রানজিস্টর আবিষ্কৃত হওয়ার পর কম্পিউটার প্রযুক্তির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হয়। 

দ্বিতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য:
১. ট্রানজিস্টরের ব্যবহার। 
২. চুম্বকীয় কোর মেমরির ব্যবহার।
৩. ম্যাগনেটিক ডিস্কের উদ্ভব।
৪. উচ্চ গতিবিশিষ্ট ইনপুট / আউটপুট সরঞ্জাম। 
৫. ফরট্রান ও কোবলসহ উচ্চতর ভাষাক উদ্ভব। 
৬. আকৃতির সংকোচন। 
৭. তাপ সমস্যার অবসান। 
৮. টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণের ব্যবস্থা। 
৯. গতি ও নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি। 

এ প্রজন্মের একটি কম্পিউটার IBM 1620 দিয়ে ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয়। এ কম্পিউটারটি ঢাকার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে সুদীর্ঘ কয়েক বছর চালু ছিল। 

উদাহরণ : Honeywell 200 ,  আইবিএম-১৬২০, আইবিএম-১৪০০, CDC 1604 , RCA 301. RCA 501 , NCR 300 , GE 200 , আইবিএম-১৬০০ ইত্যাদি। 

তৃতীয় প্রজন্ম কম্পিউটার (Third Generation Computer) (১৯৬৫-১৯৭১): তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ইনটিগ্রেটেড সার্কিট বা সমন্বিত চিপ (Integrated Circuit বা IC) থাকে যাতে অনেক অর্ধপরিবাহী ডায়োড , ট্রানজিস্টর এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ থাকে। এর ফলশ্রুতিতে কম্পিউটারের আকার আরো ছোট হয়ে আসে , দাম কমে যায় , বিদ্যুৎ খরচ কমে যায় ; কাজের গতি ও নির্ভরশীলতা বহুগুণে বেড়ে যায়।

তৃতীয় প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য:
১. ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ( IC ) ব্যাপক প্রচলন। 
২. অর্ধপরিবাহী মেমরির উদ্ভব ও বিকাশ। 
৩. আকৃতির সংকোচন 
৪. উন্নত কার্যকারিতা ও নির্ভরযোগ্যতা। 
৫. মিনি কম্পিউটারের প্রচলন।
৬. উচ্চতর ভাষার বহুল প্রচলন।
৭. ভিডিও মনিটর ও লাইন প্রিন্টারের প্রচলন।

উদাহরণ: আইবিএম-৩৬০, আইবিএম-৩৭০, PDP - 8 PDP - 11 , GE 600 ইত্যাদি। 

চতুর্থ প্রজন্ম কম্পিউটার (Fourth Generation Computer) (১৯৭১ - বর্তমানকালে): বর্তমানে আমরা যে সকল কম্পিউটার ব্যবহার করছি এ সকল কম্পিউটারই চুতর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত। এ সময় থেকে কম্পিউটারে অর্ধপরিবাহী মেমরি প্রবর্তিত হয় এবং LSI (Large Scale Integration) ও VLSI (Very Large Scale Integration) প্রযুক্তি মাধ্যমে তৈরি মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor) ব্যবহার হয়। ফলে কম্পিউটারের আকার ও দাম আরো কমে যায় এবং কাজ করার ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। 

চতুর্থ প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য: 
১. বৃহদাকার একীভূত বর্তনী ( VLSI )। 
২. মাইক্রোপ্রসেসর ও মাইক্রো কম্পিউটারের প্রসার ও প্রচলন। 
৩. বর্ধিত ডেটা ধারণক্ষমতা। 
৪. নির্ভরযোগ্যতার উন্নতি। 
৫. প্রোগ্রাম প্যাকেজের ব্যাপক প্রচলন। 

উদাহরণ: IBM 3033 , HP 3000 , IBM 4341 , TRS 80, Sharp PC- 1211, IBM PC Power PC ইত্যাদি। 

পঞ্চম প্রজন্ম কম্পিউটার (Fifth Generation Computer) (ভবিষ্যৎ প্রজন্ম): ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এখনো চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার প্রচলিত আছে। আমেরিকা ও জাপান পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার চালুর অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। Super VLSI (Very Large Scale Integration) চিপ ও অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বয়ে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের অবতারণা করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ও প্রচুর ডেটা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার। 

পঞ্চম প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য : 
১. বহু মাইক্রোপ্রসেসরবিশিষ্ট একীভূত বর্তনী। 
২. কৃত্রিম বুদ্ধির ব্যবহার। 
৩. কম্পিউটার বর্তনীতে Optical Fiber ব্যবহার।
৪. প্রোগ্রাম সামগ্রীর উন্নতি। 
৫. স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ এবং শ্রবণযোগ্য শব্দ দিয়ে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করা থাকে।
৬. চৌম্বক বাবল মেমরি। 
৭. ডেটা ধারণ ক্ষমতার ব্যাপক উন্নতি। 
৮. অধিক সমৃদ্ধশালী মাইক্রোপ্রসেসর ও মাইক্রোকম্পিউটার।
৯. বিপুল শক্তিসম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন ইত্যাদি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url