এইচ. এস. সি. সমাজবিজ্ঞান ১ম অধ্যায় সাজেশন || Sociology Chapter 1 Suggestion

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. সমাজবিজ্ঞান কী? 
উত্তর: বিজ্ঞানের যে শাখা মানবাচরণ ও সমাজ সম্পর্কে পঠন - পাঠন এবং গবেষণা করে তাই সমাজবিজ্ঞান। 

২. কোন কোন শব্দের সমন্বয়ে ' Sociology ' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে? 
উত্তর: ল্যাটিন শব্দ 'Socius' এবং গ্রিক শব্দ 'Logos'- এর সমন্বয়ে ইংরেজি ' Sociology ' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। 

৩. সমাজ মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য কী? 
উত্তর: সমাজ মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য হলো সমাজের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির আচরণ বা ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ।

৪. "সমাজবিজ্ঞান হলো অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান"— সংজ্ঞাটি কার? 
উত্তর: ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমের। 

৫. সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শাস্ত্র কোনটি? 
উত্তর: সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শাস্ত্র হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান। 

৬. সমাজবিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য কী? 
উত্তর: সামাজিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ। 

৭. সামাজিক বিজ্ঞানের কোন শাখাটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হয়? 
উত্তর: সামাজিক বিজ্ঞানের সমাজবিজ্ঞান শাখাটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হয়। 

৮. সমাজবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় প্রত্যয় কোনটি? 
উত্তর: সমাজকাঠামো হলো সমাজবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় প্রত্যয়। 
সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র

৯. সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় কী? 
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সমাজবদ্ধ মানুষের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সম্পর্ক।

১০. কখন নগর সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে? 
উত্তর: ২০শতকের ১ম ধাপে নগর সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে। 

১১. কোন মতবাদ গোষ্ঠী সমাজ বিশ্লেষণে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ করার ওপর গুরুত্ব দেন ? উত্তর: দৃষ্টবাদী মতবাদ গোষ্ঠী সমাজ বিশ্লেষণে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ করার ওপর গুরুত্ব দেন। 

১২. কীসের অভাবে সমাজকে তার বাস্তব রূপ দেওয়া অসম্ভব? 
উত্তর: সামাজিক জ্ঞানের অভাবে সমাজকে তার বাস্তব রূপ দেওয়া অসম্ভব। 

১৩. সামাজিক সমস্যার সমাধানে কোন শাস্ত্রটির অধ্যয়ন প্রয়োজন? 
উত্তর: সামাজিক সমস্যার সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন প্রয়োজন।

১৪. সমাজবিজ্ঞানের জনক কে? 
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের জনক ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ। 

১৫. "Sociology" শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন?
উত্তর: ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে 'Sociology' শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। 

১৬. 'The New Science' গ্রন্থটির রচয়িতা কে? 
উত্তর: 'The New Science' গ্রন্থটির রচয়িতা ইতালিয়ান রাজনৈতিক দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও আইনবিদ গিয়ামবাতিস্তা ভিকো। 

১৭. জীববিজ্ঞানের বিবর্তন তত্ত্বের প্রবর্তক কে? 
উত্তর: জীববিজ্ঞানের বিবর্তন তত্ত্বের প্রবর্তক হলেন ইংরেজ প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইন। 

১৮. সমাজবিজ্ঞান ও সমাজতন্ত্রের অন্যতম আদি প্রবক্তা বলে হয় কাকে? 
উত্তর: French philosopher St. Simon কে সমাজবিজ্ঞান ও সমাজতন্ত্রের অন্যতম আদি প্রবক্তা বলে গণ্য করা হয়।
১৯. 'Social Reform in France' গ্রন্থের রচয়িতা কে ? উত্তর: 'Social Reform in France' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ফ্রেডারিখ লো প্লে।

২০. 'Utopia' গ্রন্থের রচয়িতা কে? 
উত্তর : ‘ Utopia ' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন ইংরেজ সমাজ - দার্শনিক টমাস মুর।

২১. 'Wealth of Nation' গ্রন্থের রচয়িতা কে? 
উত্তর: 'Wealth of Nation' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন স্কটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ। 

২২. দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ প্রক্রিয়া কার মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল? 
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ প্রক্রিয়া আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্সের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল। 

২৩. বুৎপত্তিগতভাবে নৃবিজ্ঞানের অর্থ কী? 
উত্তর: বুৎপত্তিগতভাবে নৃবিজ্ঞানের অর্থ হলো 'মানুষ সম্পর্কিত পাঠ'। 

২৪ . সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত কোন দুটি শাস্ত্রকে 'জমজ বোন' হিসেবে অভিহিত করা হয়? 
উত্তর: সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান শাস্ত্রকে 'জমজ বোন' হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

২৫. কোন শাস্ত্রের সম্যক জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ অনুধাবন প্রায় অসম্ভব? 
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের সম্যক জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ অনুধাবন প্রায় অসম্ভব। 

২৬. রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মানুষকে কী হিসেবে ধরে নেয়া হয়? উত্তর: রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মানুষকে রাজনৈতিক জীব হিসেবে ধরে নেয়া হয়। 

২৭. আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করা হয় কোন শাস্ত্রকে? 
উত্তর: আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করা হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে।

২৮. সমাজের মৌল কাঠামো কী? 
উত্তর: সমাজের মৌল কাঠামো অর্থনীতি।

২৯. অর্থনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয় কয়টি? 
উত্তর: অর্থনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয় তিনটি। যথা- উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ। 

৩০. ইতিহাস কী? 
উত্তর: ইতিহাস হলো মানবসমাজের অতীত ঘটনার ধারাবাহিক বিবরণ। 

৩১. সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের মানসিক প্রক্রিয়াসমূহ নিয়ে অধ্যয়ন করে কোন শাস্ত্র? 
উত্তর: সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের মানসিক প্রক্রিয়াসমূহ নিয়ে অধ্যয়ন করে সমাজ মনোবিজ্ঞান।

৩২. সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্য কী? 
উত্তর: সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্য হচ্ছে- সমাজজীবনে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করতে গিয়ে মানুষ যেসব বাধা - বিপত্তির সম্মুখীন হয় সেগুলোকে সমাধান করে মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. সমাজবিজ্ঞান বলতে কী বুঝ? 

উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Sociology' শব্দটি ল্যাটিন 'Socius' এবং গ্রিক 'Logos' শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্ট। 'Socius' শব্দের অর্থ সঙ্গী (Companion)। যেহেতু সঙ্গী - সাথী মিলে সমাজ গড়ে ওঠে সেহেতু পরোক্ষভাবে এর - মানে হচ্ছে সমাজ। অন্যদিকে 'Logos' শব্দটির অর্থ অধ্যয়ন বা বিজ্ঞান (Study or Science)। সুতরাং শাব্দিকভাবে সমাজবিজ্ঞান জ্ঞানের সেই শাখা যা সাধারণীকরণ বা বিমূর্তায়ন পর্যায়ে সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করে। ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি সমাজচিন্তাবিদ ও দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ তাঁর 'Positive Philosophy' গ্রন্থে সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন। 
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, "সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান"।

২ . সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে শিল্প বিপ্লবের ভূমিকা- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: পাশ্চাত্যের শিল্পবিপ্লবকালীন পরিস্থিতি সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শিল্প বিপ্লবকালে ইউরোপীয় সমাজে এক বৈপ্লবিক সামাজিক পরিবর্তন সূচিত হয়। শিল্প নির্ভর পাশ্চাত্য সমাজের শ্রমিক শ্রেণির দুঃখ দুর্দশা নিরসনকল্পে সেইন্ট সাইমন, রবার্ট ওয়েন, কঁদরসে প্রমুখ সমাজ চিন্তাবিদগণ সমাজ সম্পর্কে ধ্যান - ধারণা লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। বিশেষ করে ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের ফলে সংঘটিত হওয়া নগরায়ণ, সামাজিক পরিবর্তন, গতানুগতিক সমাজের গড়ন প্রভৃতি বিষয় এসব মনীষীকে সমাজ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখায়। এরই ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় সমাজবিজ্ঞান। 

৩. 'সমাজবিজ্ঞানের বিকাশের মূলে জীববিজ্ঞানের বিবর্তন তত্ত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।'- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তির মূলে জীববিজ্ঞানে ব্যবহৃত বিবর্তনবাদী তত্ত্ব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। জীববিজ্ঞানের বিবর্তনবাদী তত্ত্বের প্রবর্তক চার্লস ডারউইন। সমাজবিজ্ঞানীগণ দেখলেন যে, সমাজজীবনেও বিবর্তনবাদী তত্ত্ব ভীষণভাবে প্রযোজ্য। যারা সমাজকে জীবদেহের সাথে তুলনা করে এর বিবর্তনবাদী ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাদের মধ্যে মর্গান, হার্বার্ট স্পেন্সার, ওয়েস্টারমার্ক প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব সমাজবিজ্ঞানী জীবজগতের সাথে সমাজের তুলনামূলক আলোচনা করে দেখাতে সক্ষম হন যে, সমাজ কীভাবে সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থায় বিবর্তিত হচ্ছে। মার্কসের সমাজতান্ত্রিক আলোচনায়ও বিবর্তনবাদের প্রভাব লক্ষণীয় । তাদের এসব আলোচনা সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

৪. "সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান।"- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: সমাজবিজ্ঞানে গোটা সমাজের নিখুঁত বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা থাকে বলে সমাজবিজ্ঞানকে বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান বলা হয়। সমাজবিজ্ঞান কেবল সমাজের ঘটনাবলির আলোচনাই করে না, বরং ঐ ঘটনাসমূহের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের প্রচেষ্টাও চালায়। এক্ষেত্রে যুক্তিবাদী বিচার - বিশ্লেষণের সহায়তা নেয়া হয়। আর এ জন্য সমাজবিজ্ঞানকে একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান বলা হয়।

৫ . সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ বলা হয় কেন? 

উত্তর: সমাজবিজ্ঞান সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করায় শাস্ত্রটিকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ বলে। সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত একটি বিজ্ঞান। সামাজিক মানুষের আচার - আচরণ, আদর্শ - মূল্যবোধ, কার্যাবলি, রীতিনীতি কীভাবে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং কীভাবে এর চলমানতা বজায় থাকে তা নিয়ে অধ্যয়ন করতে গিয়ে গোটা সমাজের মধ্যেই এর অনুসন্ধান করতে হয়। তাই সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ বলা হয়। 

৬ . "সমাজবিজ্ঞান হলো মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান" — কথাটি বুঝিয়ে লিখ। 

উত্তর: সমাজবিজ্ঞান ন্যায় - অন্যায় বোধ নিরপেক্ষ অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিপ্রবণ বিজ্ঞান বলে শাস্ত্রটিকে মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান বলা হয়। বিজ্ঞানের প্রধান ধর্মই হচ্ছে নৈতিকতার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা। আর তাই সমাজবিজ্ঞানও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। সমাজবিজ্ঞানীগণ সামাজিক বা ব্যক্তিগত মূল্যবোধের দ্বারা কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয়ে যাবতীয় সামাজিক ঘটনা বিচার - বিশ্লেষণ করেন। এ কারণেই সমাজবিজ্ঞানকে মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

৭. শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান বলতে কী বোঝ? -ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে, শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক অনুসন্ধানের একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র। শিক্ষাকে সমাজতাত্ত্বিক যতম শাখা হিসেবে শিক্ষা সমাজবিজ্ঞানের ’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা বা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি। শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবিষয় বহির্ভূত নানাবিধ কার্যকলাপ, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশাসনিক দিক, শিক্ষার মাধ্যম, ব্যবস্থার ধরন, শিক্ষার সাথে সামাজিক শ্রেণির সম্পর্ক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের সামাজিক দিক নিয়ে শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান গভীর অনুসন্ধান করে। এছাড়া এটি সমাজের অন্যান্য বিষয় যথা: অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিধি ব্যবস্থা, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদির সাথে শিক্ষার সম্পর্ক নিয়েও পঠন - পাঠন এবং গবেষণা করে।

৮. সামাজিক ইতিহাস অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা -ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: অতীতের সমাজব্যবস্থা জানার ক্ষেত্রে সামাজিক ইতিহাসের অধ্যয়ন অতীব প্রয়োজনীয়। সামাজিক ইতিহাস আমাদের সামনে একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের অতীতের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সমাজব্যবস্থার পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরে। ভবিষ্যতে সমাজকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হলে অতীতের মানবগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা, অতীত সমাজের আইন - কানুন, রীতি নীতি আমাদের জানতে হবে । আর এ জন্যই সামাজিক ইতিহাস অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 

৯. "সমাজবিজ্ঞান সমাজের পূর্ণাঙ্গ পাঠ''— বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: সমাজকে সামগ্রিক এবং ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করে বলে সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের পূর্ণাঙ্গ পাঠ বলা হয় । রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজকল্যাণ, নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি সামাজিক বিজ্ঞানসমূহ সমাজের এক একটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করে। এ সকল সামাজিক বিজ্ঞানের কোনোটাই সমাজ সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়নের দাবি করতে পারে না। পক্ষান্তরে, গোটা সমাজই সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয় বা ক্ষেত্র। তাই সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের পূর্ণাঙ্গ পাঠ বলা হয়।

১০. সমাজবিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা যায় না কেন?- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: বৈশিষ্ট্যগত ও পদ্ধতিগত কারণে সমাজবিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা যায় না। সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজসম্পর্কিত বিজ্ঞান। আর প্রাকৃতিক বিজ্ঞান হলো প্রকৃতিসম্পর্কিত বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে বিভিন্ন সূত্র দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে যেমনভাবে পরীক্ষা - নিরীক্ষা ও পরীক্ষাগারে নিয়ে কাটা - ছেঁড়া করা যায়, সমাজের মানুষের আচার - আচরণকে তা করা সম্ভব নয়, এ কারণে সমাজবিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা যায় না।

১১. সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ বলা হয় কেন?  

উত্তর: সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলে বলে সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। সাহিত্যের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং সমাজকাঠামোর সাথে সাহিত্যের সম্পর্ক অনুসন্ধানই সাহিত্যের সমাজবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য। সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন ঘটে। বিভিন্ন যুগে রচিত নানা ধরনের সাহিত্যকর্মের মধ্যে সংশ্লিষ্ট যুগের সমাজ প্রতিবিম্বিত হয়ে থাকে। তাই কোনো যুগের সমাজ সম্পর্কে জানতে হলে সেই যুগের সাহিত্য অধ্যয়ন করা জরুরি। এভাবে প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগে রচিত বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যকর্ম, যেমন : নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্প, পুঁথি, জীবনচরিত, আত্মজীবনী ইত্যাদির মধ্যে সমাজজীবনের খুঁটিনাটি বিষয় অতি সূক্ষ্মভাবে ফুটে ওঠে। তাই সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ বলা হয়।

১২. সমাজবিজ্ঞানকে "মানব সম্পর্কের বিজ্ঞান'' বলা হয় কেন?- ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: সমাজবিজ্ঞান যেহেতু মানব আচরণ ও সমাজ সম্পর্কে পঠন - পাঠন ও গবেষণা করে তাই একে 'মানব সম্পর্কের বিজ্ঞান' বলা হয়। বস্তুত সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজ সম্পর্কিত বস্তুনিষ্ঠ পাঠ বা বিশ্লেষণ। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য থাকলেও তাদের প্রদত্ত সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞার মধ্যে একটি বিষয়ে মিল লক্ষ করা যায়। আর তা হচ্ছে , সমাজবিজ্ঞানের প্রায় সকল সংজ্ঞাতেই সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ- সমাজবিজ্ঞান মূলত সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েই আলোচনা করে থাকে। এ জন্যই সমাজবিজ্ঞানকে 'মানব সম্পর্কের বিজ্ঞান' বলা হয়ে থাকে। 

১৩. রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সমাজবিজ্ঞানের বিশেষীকৃত শাখা বলা হয় কেন? 

উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর মিল থাকায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সমাজবিজ্ঞানের বিশেষীকৃত শাখা বলা হয়। সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হলো, সমগ্র মানবজীবনের কেবল রাজনৈতিক দিকটির আলোচনা। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান হলো একটি মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান, যার উপজীব্য বিষয় হলো, মানুষের সমাজজীবন। যার কারণে সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র ব্যাপক। তাই বলা হয় যে, সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানলাভ সম্ভব নয়। আর এ কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সমাজবিজ্ঞানের বিশেষীকৃত শাখা বলা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url