দ্বি - জাতি তত্ত্ব || Two Nation Theory
দ্বি - জাতি তত্ত্ব কি?
দ্বি - জাতি তত্ত্বের তাৎপর্য
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি - জাতি তত্ত্বের ধারণা তৎকালীন ভারতবর্ষের মুসলিম সমাজকে ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছিল। দ্বি - জাতি তত্ত্ব ভারতীয় মুসলিম সমাজকে এক নবচেতনায় উজ্জীবিত করে। তৎকালীন মুসলিম সমাজের প্রেক্ষাপটে এ তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হলো:
১. জিন্নাহর দ্বি - জাতি তত্ত্ব ভারতীয় মুসলমানদের নিজস্ব স্বতন্ত্র ধর্মীয় চেতনায় উজ্জীবিত করে। ধর্ম যে জাতি গঠনের একটি শক্তিশালী উপাদান দ্বি - জাতি তত্ত্বের মাধ্যমে তা তিনি ভারতীয় মুসলমানদের উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২. দ্বি - জাতি তত্ত্বের ধারণা ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে দৃঢ় সাম্প্রদায়িক ঐকাবোধ জাগ্রত করে। দ্বি - জাতি তত্ত্ব ঘোষণার পর মুসলমানরা নতুন করে উপলব্ধি করে, আর্থ - সামাজিক মুক্তির জন্য তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
৩. দ্বি - জাতি তত্ত্ব ভারতীয় মুসলিম সমাজকে রাজনৈতিক চেতনায় উজ্জীবিত করে। এতে করে তারা নিজেদের স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চিন্তাধারার চর্চা নিশ্চিত করার জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়।
৪. তৎকালীন ভারতের মুসলিম সমাজে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিকাশ সাধনে দ্বি - জাতি তন্তু সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ তত্ত্ব ভারতের মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য , সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে।
৫. জিন্নাহর দ্বি - জাতি তত্ত্ব তৎকালীন ভারতে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক আবহ সৃষ্টি করে মূলত তার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শেষপর্বে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি - জাতি তত্ত্ব এ অঞ্চলের মুসলমানদের নতুন চেতনায় উজ্জীবিত করে তাদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবিকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪০ সালে উত্থাপিত লাজ্যের প্রস্তাব ছিল এ দ্বি - জাতি তত্ত্বেরই ধারাবাহিকতা। লাহোর প্রস্তাব দ্বি - জাতি তত্ত্বের ধারণাকে আরও স্পষ্ট ও বাস্তব করে তোলে। দ্বি - জাতি তত্ত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই তৎকালীন ভারতের মুসলমানরা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। এর চূড়ান্ত পরিণতিতে ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয় স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র।