দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যাবলি || Functions of Anti - Corruption Commission

 দুর্নীতি দমন কমিশন 

সীমাহীন লোভ আর কারচুপির সুযোগের কারণে দুর্নীতির উৎপত্তি। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ছোট বড় কোনো খাতই প্রলয়ঙ্করী দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়। দুর্নীতি বিশ্বজুড়েই উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। সাধারণ অর্থে দুর্নীতি বলতে নীতিবিহীন কাজ করাকে বোঝায়। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতির দৌরাত্ম্য বেশি থাকে। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বিশ্বের অনেক দেশের মতো এ দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় খাতের রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। 

দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার পর থেকে দুর্নীতি দমন ব্যুরো (Bureau of Anti corruption) নামে একটি সংস্থা কাজ করে আসছিল। কিন্তু এটি একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ায় সংস্কারের দাবি ওঠে। একটি কার্যকর ও স্বাধীন দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য দাতাগোষ্ঠীও চাপ দিতে থাকে। অবশেষে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির পর এটি আইনে পরিণত হলে ২০০৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করা হয়। কমিশনের কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালের ৯ মে।


 দুর্নীতি দমন কমিশনের গঠন 

 দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠিত। এর প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত। তবে প্রয়োজনে দেশের যেকোনো স্থানে এর শাখা স্থাপন করা যাবে। তিনজন কমিশনারের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে রাষ্ট্রপতি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেন। কমিশনারদের কার্যকাল চার বছর। পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি কমিশনার পদে নিয়োগের সুপারিশ করবে। এই কমিটির সদস্যরা হবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক হাইকোর্টের একজন বিচারক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের মধ্যে কেউ যদি রাজি না হন তাহলে বর্তমান সচিবই কমিটির সদস্য হবেন। 

কমিশনারদের যোগ্যতার মাপকাঠি হলে আইন, শিক্ষা, প্রশাসন, বিচার অথবা শৃঙ্খলা বাহিনীতে কমপক্ষে ২০ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা। ঋণখেলাপি, দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত, বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ডপ্রাপ্ত অথবা আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তিরা এ পদের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। কমিশনের সদস্যরা (কমিশনার) কমারসানের প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবে। কমিশনারদের পারিশ্রমিক, ভাড়া ও সুবিধাদি সরকার নির্ধারণ করবে। সাচিবিক দায়িত্ব পালনের জন্য কমিশন একজন সচিব নিযুক্ত করবে। একই সাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারীও থাকবে। তাদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে।


দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যাবলি 

দুর্নীতি দমন কমিশন আর্থিকসহ বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা, মামলা দায়ের ও পরিচালনা, দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ প্রদান, দুর্নীতির ভয়াবহতা এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি বিভিন্ন উৎস চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি  কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নির্মূল করার জন্য দুদকের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ উদ্দেশ্যকে কার্যকর করার জন্য দুদক যে সব কার্য সম্পাদন করতে পারবে-

১. স্বপ্রণোদিত হয়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পক্ষে অন্য কারো দাখিলকৃত আবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান,

২. সুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর তফসিলে উল্লিখিত অপরাধসমূহের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা,

৩. দুর্নীতি সম্পর্কিত অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনার ভিত্তিতে আইনের অধীন মামলা দায়ের ও পরিচালনা,

৪. দুর্নীতি দমন বিষয়ে আইন দ্বারা কমিশনকে ডার্পিত যেকোনো দায়িত্ব পালন করা,

৫. দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়ে গবেষণা পরিকল্পনা তৈরি করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে করণীয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করা; 

৬. দূর্নীতি প্রতিরোধের জন্য কোনো আইনের অধীন স্বীকৃত ব্যবস্থাদি পর্যালোচনা এবং কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করা; 

৭. আর্থ - সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা এবং সে অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করা; 

৮. কমিশনের কার্যাবলি বা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এমন সব বিষয়ের ওপর সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা; 

৯. দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা; 

১০. দুর্নীতির অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন পদ্ধতি নির্ধারণ করা; 

১১. দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচিত অন্য যে কোনো কার্য সম্পাদন করা। প্রতি পঞ্জিকা বছরের মার্চ মাসের মধ্যে কমিশন পূর্ববর্তী বছরে সম্পাদিত তার কার্যাবলি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে দো করবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন,

১২. দুর্নীতি দমন আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কমিশন রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদনক্রমে এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url