প্রোটোপ্লাস্ট || Protoplast

 প্রোটোপ্লাস্ট

কোষ প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত সমুদয় পদার্থ একসাথে প্রোটোপ্লাস্ট নামে পরিচিত। উদ্ভিদকোষ , ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকে জড় কোষ প্রাচীরের নিচেই প্রোটোপাস্টের অবস্থান। প্রোটোপ্লাস্ট দু'ভাগে বিভক্ত। যথা- সজীব প্রোটোপ্লাজম ও নির্জীব বস্তু বা অপ্রোটোপ্লাজমীয় উপাদান নিয়ে এদের বর্ণনা দেয়া হলো-

প্রোটোপ্লাজম ( Protoplasm ): কোষের অভ্যন্তরে স্বচ্ছ, আঠালো এবং জেলির ন্যায় অর্ধতরুণ, কলয়ডালধর্মী সজীব পদার্থকে প্রোটোপ্লাজম বলে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী কোষবিদ ফেলিক্স ডুজারডিন (Felix Dujardin) কোষের মধ্যে জেলির মত থকথকে পদার্থকে সারকোড ( sarcode ) নামে অভিহিত করে। প্রোটোপ্লাজম শব্দটি ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী পার্কিনজে (Purkinje) সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ( Gk. proto= আদি + plasma = সংগঠন অর্থাৎ আদি বস্তু)। বিজ্ঞানী হাক্সলে (Huxley) - এর মতে প্রোটোপ্লাজম হচ্ছে জীবনের ভৌত ভিত্তি। কারণ প্রোটোপ্লাজমই কোষের তথা দেহের সকল মৌলিক জৈবিক কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে। এ জন্যই প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে ৭০ % -৯০ % পানি থাকে। এ থেকেই বোঝা যায় কেন পানির অপর নাম জীবন। পানিকে ফ্লুইড অব লাইফ বলা হয় কারণ, কোষের সমস্ত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া পানির উপস্থিতি ছাড়া সম্ভব নয়। পানির অভাবে প্রোটোপ্লাজম শুকিয়ে কোষ মারা যেতে পারে। এছাড়া , উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য পানির প্রয়োজন।
Protoplast

প্রোটোপ্লাজমের ভৌত বৈশিষ্ট্য 

( i ) প্রোটোপ্লাজম অবস্থচ্ছ , বর্ণহীন , জেলি সদৃশ অর্ধতরল আঠালো পদার্থ।

( ii ) এটি দানাদার ও কলয়ডালধর্মী।

 ( iii ) ইহা কোষন্থ পরিবেশ অনুযায়ী জেলি থেকে তরলে এবং তরু থেকে জেলিতে পরিবর্তিত হতে পারে।

 ( iv ) প্রোটোপ্লাজমের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা বেশি।

 ( v ) উত্তাপ , অ্যাসিড ও অ্যালকোহলের প্রভাবে প্রোটোপ্লাজম জমাট বাঁধে। 

প্রোটোপ্লাজমের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য 

 রাসায়নিকভাবে প্রোটোপ্লাজমে জৈব এবং অজৈব পদার্থ আছে। এতে অধিক পরিমাণে আছে পানি। জৈব পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন , এরপর আছে কার্বোহাইড্রেট ও লিপিড ও ভিটামিন। এছাড়াও আছে অক্সিজেন , হাইড্রোজেন , নাইট্রোজেন, কার্বন, কপার, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন ইত্যাদি। 

প্রোটোপ্লাজমের জৈবিক বৈশিষ্ট্য 

প্রোটোপ্লাজম বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনায় সাড়া দেয় গাদ্য তৈরি , খাদ্য হজম , আত্তীকরণ , শ্বসন , বৃদ্ধি , জনন ইত্যাদি সকল মেটাবলিক কার্যকলাপ প্রোটোপ্লাজম করে থাকে। প্রোটোপ্লাজমের জৈবিক বৈশিষ্ট্যই জীবের বৈশিষ্ট্য। অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রোটোপ্লাজম পানি গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারে। এসেরও মৃত্যু ঘটে।

প্রোটোপ্লাজমের চলন

প্রোটোপ্লাজম কখনো স্থির থাকে না । প্রোটোপ্লাজমের ও গতিময়তাকে চলন (Movement) বলে। কোষ প্রাচীরযুক্ত ও কোষ প্রাচীরবিহীন প্রোটোপ্লাজমের চলনে ভিন্নতা দেখা যায় কোষ প্রাচীরযুক্ত প্রোটোপ্লাজমে জলস্রোতের মতো যে চলন দেখা যায় তাকে আবর্তন বা সাইক্লোসিস ( cyclosis ) বলে আবর্তন আবার দু'ধরনের হয়ে থাকে। 

( i ) একমুখী আবর্তন : যে চলনে প্রোটোপ্লাজম একটি গহ্বরকে কেন্দ্র করে কোষপ্রাচীরের পাশ দিয়ে নির্দিষ্ট পথে একদিকে ঘুরতে থাকে তাকে একমুখী আবর্তন (rotation) বলে । যেমন- পাতা ঝাঁঝির কোষস্থ প্রোটোপ্লাজমের চলন।

 (ii ) বহুমুখী আবর্তন : যে চলনে প্রোটোপ্লাজম কতগুলো গহ্বরকে কেন্দ্র করে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন দিকে ঘুরতে থাকে তাকে বহুমুখী আবর্তন (Circulation) বলে। যেমন- Tradescantia- র কোষস্থ প্রোটোপ্লাজমের চলন।

  প্রোটোপ্লাজয়ের প্রধান অংশসমূহ: প্লাজমামেমব্রেন বা কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস— এ তিনটি হলো প্রোটোপ্লাজমের প্রধান অংশ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url