কম্পিউটার বিবর্তনের ইতিহাস || History of Computer Evolution

 

কম্পিউটার বিবর্তনের ইতিহাস

ইতিহাস ঘেটে যতটুকু জানা যায়, প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে চীনাদের তৈরি অ্যাবাকাস নামক গণনাকারী যন্ত্রটিই প্রথম গণনাকারী যন্ত্র। যাকে কম্পিউটারের পূর্বপুরুষ বলা হয়। তখন থেকে আজ অবধি অনেক পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান আধুনিক কম্পিউটার আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আধুনিক কম্পিউটারের মৌলিক রূপরেখা তৈরি করেন ব্রিটিশ গণিত বিশারদ চার্লস ব্যাবেজ (Charles Babbage)। ১৮৩৩ সালে তিনি পূর্ব প্রজন্মের সব যন্ত্রগণকের জন্য স্মৃতিভাণ্ডারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে' অ্যানালিটিকেল' নামক একটি যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন।

বিভিন্ন কারণে তাঁর এ প্রচেষ্টা বাস্তব রূপদানে সমর্থ না হলেও তাঁর এ পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করেই আজকের আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়েছে। এ কারণে চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের আদি পিতা বা কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে। 

১৮৮৭ সালে ড. হারম্যান হলেরিখ যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি কাজে ব্যবহারের জন্য ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ব্যবস্থায় পাঞ্চকার্ডের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণের যন্ত্র আবিষ্কার করেন। যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত আদমশুমারির রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। ১৮৯৬ সালে হলেরিখ এ যন্ত্র তৈরির জন্য “হলেরিথ টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানি" নাম দিয়ে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এ জাতীয় আরো কয়েকটি কোম্পানি মিলে বিখ্যাত কম্পিউটার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন কর্পোরেশন সংক্ষেপে IBM- এর জন্য হয়। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক হাওয়ার্ড এইচ আইকেন আইবিএম -এর চারজন প্রকৌশলীর সহযোগিতায় ১৯৪৪ সালে Mark -1 নামে প্রথম স্বয়ংক্রিয় সাধারণ ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি করেন। 

১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড . জন মউসলি এবং তাঁর এক ছাত্র পর একটি ENIAC নামে তৈরি করেন প্রথম প্রজন্মের ডিজিটাল কম্পিউটার। ১৯৪৬ সালে হজরীয় গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান সংরক্ষিত প্রোগ্রাম (Internal Stored Propam) ধারাটি উদ্ভাবন করেন। তিনিই প্রথম কম্পিউটারের তথ্য ও নির্দেশ সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেন। 

এরপর জন মউসলি ও প্রেসপার একার্ট নিজেদের কোম্পানিতে ১৯৫১ সালের মার্চ মাসে ইউনিভ্যাক -১ (UNIVAC = Universal Automatic Calculator) তৈরি করেন। এটিই সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে তৈরি ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। 

১৯৪৮ সালে ট্রানজিস্টর (Transistor) আবিষ্কৃত হওয়ার পর কম্পিউটারে ভালবের বদলে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার শুরু হয়। ট্রানজিটের ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলো আকারে ছোট হয়ে যেতে শুরু করে। এ কম্পিউটারগুলো আগের কম্পিউটার অপেক্ষা উন্নত ছিল। 

ট্রানজিস্টরের পর আসে আইসি (IC) - এর ব্যবহার। সিলিকন বা সেমিকন্ডাক্টর - এর একটি ক্ষুদ্র অংশে একাধিক ট্রানজিস্টর সন্নিবেশিত করা হলে তাকে বলা হয় আইসি বা সমন্বিত সার্কিট (Integrated Circle - IC) । আইসি ব্যবহার করে তৈরি হলো নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার। 

কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় বিপ্লব ঘটে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭১ সালে আমেরিকার ইন্টেল (Intel) নামক কোম্পানি সর্বপ্রথম মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor) তৈরি করে। ফলে দাম কমে যায়, ব্যবহারের সুবিধা বেড়ে যায় এবং কাজের ক্ষমতা হাজার হাজার গুণ বেড়ে যায়। মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি কম্পিউটারকেই আধুনিক মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার বলা হয়।

 কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ

 কম্পিউটার নিম্নোলিখিত চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। যথা-

 ১. সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারী কর্তৃক তৈরি প্রোগ্রাম (Program) কম্পিউটার গ্রহণ করে মেমরিতে (Messory) সংরক্ষণ করে এবং ব্যবহারকারীর নির্দেশে কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্বাহ (Execute) করে।

২. কিবোর্ড, মাউস, জয়স্টিক, ডিস্ক ইত্যাদি ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটার ডেটা (Data) গ্রহণ করে।

৩. ডেটা প্রসেস (Process) করে এবং 

৪. মনিটর, প্রিন্টার, ডিস্ক ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url