আঙুলের ছাপ এবং হাতের রেখা শনাক্তকরণ || Fingerprint and hand line identification

 আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণ

বর্তমানে আঙুলের ছাপ (Finger print) নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি জনপ্রিয় বায়োমেট্রিক সিস্টেম। যে বায়োমেট্রিক্স ডিভাইসে মানুষের আঙুলের ছাপ ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করার পর তা পূর্বে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপের টেম্পলেটের সাথে ম্যাচ করে ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা হয়, তাকে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার বলে। এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট বায়োমেট্রিক্স সিস্টেম আবিষ্কারের সাথে একজন সাধারণ বাঙালির নাম জড়িত আছে। তিনি হলেন খান বাহাদুর কাজী আজিজুল হক। ১৮৯৭ সালে ব্রিটিশ কর্মকর্তা স্যার এডওয়ার্ড রিকার্ড হ্যানরির তত্ত্বাবধানে কাজ করার সময় তিনি আঙুলের ছাপের গাণিতিক শ্রেণিবিন্যাস উদ্ভাবন করেছিলেন। 

এ পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট অপটিক্যাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আঙুলের ছাপের ইমেজ নেয়া হয়। ফিংগার প্রিন্ট রিডার আঙুলের রেখার বিন্যাস, ত্বকের টিস্যু ও ত্বকের নিচের রক্ত সঞ্চালনের ওপর ভিত্তি করে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপচিত্র তৈরি করে। ইনপুটকৃত ইমেজের অর্থাৎ আঙুলের ছাপের বিশেষ কিছু একক বৈশিষ্ট্যকে ফিল্টার করা হয় এবং এনক্রিপ্টেড বায়োমেট্রিক্স কী হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্টের হিমেজকে সংরক্ষণ না করে সংখ্যার সিরিজ (বাইনারি কোড) -কে ভেরিফিকেশনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।

 ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেমের এলগরিদমে বাইনারি কোডকে ইমেজে পুনরূপান্তর করা যায় না। তাই কেউ ফিঙ্গারপ্রিন্টকে নকল (ডুপ্লিকেট) করতে পারে না। বায়োমেট্রিক্স ডিভাইস, যেমন- ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডারে থাকে একটি রিডার অথবা স্ক্যানিং ডিভাইস ও সফটওয়্যার, যা স্ক্যান করা তথ্যকে ডিজিটাল ফর্মে রূপান্তর করে এবং ম্যাচিং পয়েন্টগুলো তুলনা করে। বায়োমেট্রিক্স ডিভাইসগুলোর মধ্যে বিশ্বজুড়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডারের জনপ্রিয়তা সর্বাধিক। 

তুলনামূলকভাবে কম দামি , নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি ও প্রচুর ডেটা রাখতে পারে বলে আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী ও অন্যান্যদের প্রবেশ ও বের হবার জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডারগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি এ পদ্ধতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রদান, প্রকৃত কর্মীদেরকে শনাক্তকরণ , হাজিরার ডেটা সংরক্ষণ এবং তাদের। সিস্টেম বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখছে। 

আঙুলের ছাপ এবং হাতের রেখা শনাক্তকরণ

ফিঙ্গারপ্রিন্ট বায়োমেট্রিক্সের সুবিধা 

১. সঠিকতা ( অ্যাকিউরিসি ) অত্যন্ত উচ্চমানের।
২. উন্নত ও সহজলভ্য বায়োমেট্রিক্স ডিভাইস। 
৩. সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং এর database মেইনটেইনে অল্প মেমোরির প্রয়োজন হয়ে থাকে।
 

ফিঙ্গারপ্রিন্ট বায়োমেট্রিক্সের অসুবিধা 

১. হাতের আঙুলে ঘাম, ময়লা বা দাগ প্রভৃতি থাকার কারণে বায়োমেট্রিক্স ডিভাইসে সঠিক ফলাফল পেতে দেরি হতে পারে বা অকৃতকার্য হতে পারে। যেমন- শ্রমিকরা যেহেতু সবসময় হাতের কাজ করে, তাই তাদের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট বায়োমেট্রিক্স সমস্যার সৃষ্টি করে। 

২. বৃদ্ধ কিংবা আঙুলহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই প্রযুক্তি কার্যকর নয়। 

ফিঙ্গারপ্রিন্ট বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার 

১. বিভিন্ন অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা প্রভৃতি স্থানে উপস্থিতি নির্ণয়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। 

২. Mobile, Laptop  প্রভৃতি ডিভাইসে একসিস (প্রবেশ) -এর ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

হাতের রেখা শনাক্তকরণ

মানুষের হাতের আকৃতি ও জ্যামিতিক গঠনে ভিন্নতা রয়েছে। যে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে মানুষের ব্যান্ডের জ্যামিতিক আকার ও পঠন বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা হয়, তাকে হ্যান্ড জিওমেট্রি সিস্টেম বলে। হ্যান্ড জিওমেট্রি রিডারের সাহায্যে হাতের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ডেটা কম্পিউটারের ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে আবার হ্যান্ড জিওমেটি রিডারের সাহায্যে হাড়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ডেটা ইনপুট নিয়ে আগের ডেটার সাথে মিলিয়ে শনাক্ত করা হয়।

 হাতের রেখা শনাক্তকরণ পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে

  হ্যান্ড জিওমেট্রি বায়োমেট্রিক্স ডিভাইসের সাধারণ কনসেপ্ট হলো এটি একজন মানুষের হাতের দৈর্ঘ্য , প্রস্থ, পুরুত্ব এবং এর সারফেস এরিয়াকে ক্যাপচার করে । এই ডেটাগুলো ক্যাপচার করার জন্য এই ডিভাইসে একটি চার্জ কাপন্ড ডিভাইস বা সিসিডি (Charge Coupled Device - CCD) ক্যামেরা ব্যবহার করে হাতের তালুর পৃষ্ঠটির একটি সেলুলয়েড ইমেজ গ্রহণ করা হয়। এটি হাতের উপরের পৃষ্ঠের এবং এর একটি সাইড ইমেজ গ্রহণ করে। এই সেলুলয়েড ইমেজ থেকে হাতটির আঙুলগুলোর দৈর্ঘ্য , আঙুলের গাঁটগুলোর মধ্যেকার দূরত্ব , হাতের রেখার বিন্যাস , আঙুলগুলোর উচ্চতা ও পুরুত্ব প্রভৃতি ডেটা পরিমাপ করে। অতঃপর একে নিউমেরিক ডেটায় রূপান্তরিত করা হয়। এই নিউমেরিক ডেটাকে পূর্বে কোডিং করে রাখা উক্ত ব্যক্তিটির হ্যান্ড জিওমেট্রির টেম্পলেটের সাথে ম্যাচ করিয়ে ব্যক্তিটিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা হয়। 

হ্যান্ড জিওমেট্রি বায়োমেট্রিক্সের সুবিধা 

১. বিশেষ hardware   ব্যবহৃত হয় বিধায় একে যে কোনো সিস্টেমের সাথে সমন্বয় করা সম্ভব।

২. ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করতে এখানে যে ডেটা প্রসেস করা হয় , তার পরিমাণ কম হওয়ায় এটি সহজেই স্মার্টকার্ডে ব্যবহৃত হতে পারে। 

হ্যান্ড জিওমেট্রি বায়োমেট্রিক্সের অসুবিধা 

১. অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। 
২. কায়িক পরিশ্রম করে এমন মানুষ বিশেষ করে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি খুব বেশি কার্যকর নয়। 
৩. বাত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর নয়। 
৪. হাতে কিছু লেগে থাকলেও এ পদ্ধতির কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয় না। 

হ্যান্ড জিওমেট্রির বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার 

১. personal  নম্বর জেনারেশনে যেখানে একাধিক বায়োমেট্রিক সিস্টেম সমন্বিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে হ্যান্ড জিওমেট্রি সিস্টেম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 
২. বিভিন্ন দেশের এয়ারপোর্টের (airport) ইমিগ্রেশন (immigration) সিস্টেমে অথেনটিকেশনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url