আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহ || Domains of Artificial Intelligence
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহ
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ৬ টি ক্ষেত্র হলো:
১. মেশিন লার্নিং
২. ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং
৩. স্পিচ রিকগনিশন
৪. রোবটিক্স
৫. ভিশন
৬. এক্সপার্ট সিস্টেম
নিচে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো
মেশিন লার্নিং (Machine Learning): মেশিন লার্নিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সবচেয়ে সফল ক্ষেত্র , যা মেশিনগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে প্রোগ্রামিং না করে অভিজ্ঞতার আলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেখার দক্ষতা প্রদান করে । মেশিন লার্নিং তিন ধরনের হতে পারে। যথা-
১. Supervised Learning ,
২. Reinforcement Learning ,
৩. Unsupervised Learning .
এগুলোর মধ্যে বর্তমানে Reinforcement Learning বহুল পরিচিত, যার মূল ভিত্তি হচ্ছে ট্রায়াল অ্যান্ড ইন্নর পদ্ধতির অ্যালগরিদম। অর্থাৎ , এক্ষেত্রে একটি যন্ত্রকে পৃথকভাবে কোনো কিছু শেখানো হবে না। মেশিন তার নিকট ইনপুট দেয়া ব্যাপক পরিমাণ ডেটা থেকে নিজে নিজে শিখে নেবে। শেখার সময় ভুল করলে সেই ভুল থেকে নতুন করে শিক্ষা নিয়ে তার অভিজ্ঞতাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে। এভাবে Reinforcement Leaming মেশিনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে তুলবে।
ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (Natural Ennguage Processing - NLP): এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র , যার মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেম মানুষের ভাষা (ইংরেজি , বাংলা ইত্যাদি) বুঝতে সক্ষম হয় । এর ফলে কম্পিউটার সিস্টেম মানুষের ভাষা অনুবাদ ও তথ্য সমন্বয় করার মাধ্যমে মানুষের দেয়া যে কোনো নির্দেশ বুঝতে পারে । উদাহরণস্বরূপ , Siri , Google Assistani প্রভৃতির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।
স্পিচ রিকগনিশন (Speech Recognition): স্পিচ রিকগনিশন হলো এমন একটি প্রযুক্তি , যা একটি মেশিনকে কথা ভাষা বুঝতে এবং মেশিন পঠনযোগ্য ফরমেটে অনুবাদ করতে সক্ষম করে। এর দুটি উপক্ষেত্র হলো টেক্সট টু স্পিচ এবং স্পিচ টু টেক্সট।
রোবটিক্স (Robotics): প্রযুক্তির যে শাখায় রোবটের নকশা বা ডিজাইন, গঠন, পরিচালন প্রক্রিয়া, কাজ ও প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, সেই শাখাকে রোবটিক্স বলা হয়। রোবট হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এক ধরনের ইলেক্ট্রা-যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের অনুরূপ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে।
ভিশন (Vision): ভিশন দুই প্রকার। একটি হলো মেশিন ভিশন এবং অপরটি হলো ইমেজ প্রসেসিং। মেশিন ভিশন। একটি কম্পিউটার ভিশন অ্যাপ্লিকেশন, যা কোন মেশিনকে বিভিন্ন অবজেক্টকে শনাক্ত করতে সক্ষম করে। এক বা একাধিক ভিডিও ক্যামেরা, অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল কনভারসেশন ও ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং ব্যবহার করে মেশিন ভিশন ভিজ্যুয়াল তথ্য ক্যাপচার ও বিশ্লেষণ করে। অন্যদিকে ইমেজ প্রসেসিং বলতে বোঝায় ডিজিটাল কোন ইমেজের ওপর নানান রকম ম্যাথমেটিক্যাল অপারেশন চালিয়ে , সেই ইমেজ বা ফ্রেম - এর নানান রকমের বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ বের করে আনা এবং সেগুলোকে ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভের চেষ্টা করা।
এক্সপার্ট সিস্টেম (Expert System): আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে ব্যবহৃত বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচাইতে জনপ্রিয় হলো এক্সপার্ট সিস্টেম। এক্সপার্ট সিস্টেম হলো একটি প্যাকেজ সফটওয়্যার, যা সুসংগঠিত তথ্য ব্যবহার করে কম্পিউটারকে কোনো বিষয়ে দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ করে তোলে। এক্সপার্ট সিস্টেম হলো একধরনের সিদ্ধান্ত সমর্থন পদ্ধতি , যা নির্দিষ্ট বিষয়ে মানুষের ন্যায় কৃত্রিম দক্ষতা নিয়ে তৈরি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনেকগুলো মাইক্রোপ্রসেসর ও চিপ ব্যবহার করে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করা হয়।
ব্যবহারকারীরা এ সিস্টেম থেকে প্রশ্ন করে উত্তর জানতে পারেন। যেমন- ডাক্তাররা চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিল সমস্যার কথা ক্যাডুলাস ও মাইসিন নামক এক্সপার্ট সিস্টেম থেকে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারে। কম্পিউটার ডিজাইনাররা R1 নামক এক্সপার্ট সিস্টেমকে প্রশ্ন করে সাহায্য নিতে পারে , এক্সপার্ট সিস্টেম কারিগরকে সাহায্য করতে পারে জটিল যন্ত্র সারিয়ে তুলতে , যুদ্ধের কৌশল শিক্ষা দিতে পারে সামরিক অফিসারকে । কম্পিউটার যত দ্রুত হবে এক্সপার্ট সিস্টেমও তত বেশি এক্সপার্ট হতে পারবে। এক্সপার্ট সিস্টেম গঠনে সহায়তাকারী উপাদানগুলো হলো- নলেজ বেজ (Knowledge Base) ও সফটওয়্যার রিসোর্স।
প্রোগ্রামিং ভাষা LISP, PROLOG , C / C ++, CLISP, Java, MATLAB, Python, SHRDLU, R ইত্যাদি ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাস্তব প্রয়োগ হলো রোবট। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্রমেই বিস্তৃতি লাভ করছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে কম্পিউটারের চিন্তাভাবনাগুলো মানুষের মতোই হয়। মানুষ একই সময়ে বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করতে পারে না, কিন্তু কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে একই সময়ে বিভিন্ন কাজ দ্রুত করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে যন্ত্রের মধ্যে যৌক্তিক চিন্তা, জ্ঞান, পরিকল্পনা, শিক্ষণ, যোগাযোগ, উপলব্ধি এবং যন্ত্র চলাচল করার সামর্থ্য পায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গেমের ক্যারেক্টারগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রদান করা হয়, যার ফলে গেমসের ক্যারেক্টারগুলো গেম ব্যবহারকারীদের চিন্তা ও কার্যক্রমের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপনা তথা কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে।