বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট || Bangabandhu Satellite-1

 বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশের নিজস্ব কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ (BS - 1) - কে যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন ৯ এর মাধ্যমে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। বাংলাদেশের নিজস্ব এই বিএস -১ স্যাটেলাইটটির নকশা ডিজাইন ও নির্মাণের কাজটি করেছে ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস কোম্পানি। রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিক - এর কাছ থেকে কেনা ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমার জিওস্টেশনারি অরবিট স্লটে ( কক্ষপথে ) প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে এটি প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার করে পৃথিবী পরিক্রমণ করছে। 

বিএস -১ উপগ্রহটির Launch Mass (ভর) হলো ৩,৫০০ কেজি এবং এটি একই সাথে ৪০০০ স্পেসবাস ও ৬ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। এতে ২৬ টি KU Band এবং ১৪ টি C Band এর ট্রান্সপান্ডার সংযোজিত রয়েছে। অর্থাৎ এতে সংযোজিত মোট ৪০ টি ট্রান্সপান্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্জ । বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ এর সফল উৎক্ষেপণের ফলে বাংলাদেশ এখন ৫৭ তম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো , ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান , ভি - স্যাট ও রেডিওগুলো এ মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হতে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায় , সেগুলো হলো:

১. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে স্থাপিত অত্যাধুনিক ক্যামেরাসহ আরও নানান সূক্ষ্ম প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের অনেক মূল্যবান তথ্য - উপাত্ত সংগ্রহ করা। 

২. বাংলাদেশের নিজস্ব উপগ্রহ নির্ভর ডিশ সার্ভিস চালু হওয়ায় দেশি টিভি চ্যানেলগুলোকে আর বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করতে হচ্ছে না। ফলে ভাড়া বাবদ ব্যাপক অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। 

৩. বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইটটি বাংলাদেশের কাছাকাছি অন্য অনেক দেশকে কভার করবে, কাজেই সেই দেশগুলোও বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট থেকে প্রয়োজনীয় সেবা কিনতে পারবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

৪. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে দেশের ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত এলাকা যেমন- দুর্গম পার্বত্য ও হাওর অঞ্চলের মানুষ অনলাইন ব্যাংকিং , টেলিমেডিসিন , দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা কার্যক্রমসহ নানাবিধ সেবা গ্রহণে সক্ষম হবেন।

৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে বিপর্যয় ঘটলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সার্বিক যোগাযোগ চালু রাখা সম্ভব।

জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস হলো এমন একটি স্যাটেলাইটনির্ভর একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা , যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যে কোনো স্থানের অবস্থান নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যায়। তথ্য প্রযুক্তির এ উৎকর্ষিত প্রযুক্তির ফলে এখন মোবাইলের মাধ্যমে যে কোনো বস্তু বা যে কোনো ব্যক্তির অবস্থান যথাযথভাবে নির্ণয় , ট্র্যাকিংসহ আরও নানা সুবিধা ভোগ করা যায়। জিপিএস প্রতিনিয়ত স্যাটেলাইট থেকে তথ্য গ্রহণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন সার্ভারে প্রেরণ করে। 

বর্তমানে জিপিএস রিসিভারগুলো তথ্য গ্রহণ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অ্যাকুরেসি বা নির্ভুলতা প্রদান করে। গাড়ি, জাহাজ, অ্যারোপ্লেন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ আধুনিক অধিকাংশ ডিভাইসে জিপিএস রিসিভার সংযুক্ত থাকে। জিপিএস ব্যবস্থা নির্ভর বাংলাদেশি একটি জনপ্রিয় সেবা হলো ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারা। নির্দিষ্ট মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে মেসেজ পাঠিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভ্রমণরত যে কোনো ট্রেনের সুনির্দিষ্ট ও নির্ভুল অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর ফলে ট্রেনের প্যাসেঞ্জাররা এ অনুযায়ী স্টেশনে গমন করতে পারে। জনপ্রিয় এ সেবাটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ফোন ও রেলওয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রদান করা হয়ে থাকে।

জিপিএস যেভাবে অবস্থান নির্ণয় করে 

জিপিএস সেবা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৫ সালে ২৪ টি স্যাটেলাইটের এমন একটি সমন্বিত স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম স্থাপন করে যাতে করে , এই স্যাটেলাইটগুলো ৬ টি অরবিটে দিনে দুবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারে এবং পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় কমপক্ষে এর চারটি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হতে পারে। এ স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়ত LI ও L2 নামক দুই ধরনের সংকেত প্রেরণ করে যাচ্ছে , যার মধ্যে L। হলো বেসামরিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। সংকেতগুলো প্রেরিত হয় আলোর গতিতে এবং এদের প্রতিটির সেন্ডিং টাইম লেখা থাকে। কোনো নির্দিষ্ট স্থানের জিপিএস রিসিভার একাধিক স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত সংকেতগুলো গ্রহণ করার পর এদেরকে গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাব - নিকাশের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে থাকে। সবশেষে এই বিশ্লেষণ থেকে উক্ত ডিভাইসের নির্ভুল অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়। 

জিআইএস বা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম

 জিআইএস ( GIS ) হলো এমন একটি স্বয়ংক্রিয় কমপিউটার সিস্টেম , যা ভৌগোলিক যে কোন স্থাপনার পরিবর্তন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঐ স্থানের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করে। বিভিন্ন অঞ্চলের অবকাঠামোগত সমস্যা পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ , নগরায়ণ ও আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে GIS গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভূমি ব্যবহার, আদমশুমারি, নগর পরিকল্পনা, বন, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস উত্তোলন শিল্প , বিভিন্ন সেবাখাত, পরিবহণ ব্যবস্থাসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে GIS প্রযুক্তি আজকাল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। GIS স্থাপনার জন্য বেশকিছু উপকরণ প্রয়োজন। যেমন - কম্পিউটার, ডিজিটাইজার, জিপিএস, প্লুটার, নেটওয়ার্ক, সিডি - রম ড্রাইভ, প্রিন্টার ও জিয়াইএস ভিত্তিক সফটওয়্যার , যেটি এর উপকরণের সংযোগ সাধনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে প্রোগ্রামটিকে কার্যক্ষম করে।

 হাবল টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope - HST): মহাকাশে স্থাপিত একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র। ১৯৭৫ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ও নাসা মহাকাশে দূরবিন স্থাপনের জন্য একত্রে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল মহাকাশে বিশ্বের প্রথম টেলিস্কোপ বা দূরবীন চালু হয়। মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুইন হারণের সম্মানে এর নাম রাখা হয় ' হাবল টেলিস্কোপ বা হারল দূরবিন। এটি প্রতি ৪৭ মিনিটে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। হাবল দূরবিন পৃথিবী থেকে ৫৬৮ কিলোমিটার দূরে মহাকাশে স্থাপিত হয়েছে। স্থাপনের পর থেকে এই দূরবিন অনেক আকাশণঙ্গা মিল্কিওয়ে, নিহারিকাসহ অন্যান্য ছবি মিলে ৭ লাখেরও অধিক ছবি পাঠিয়েছে। এই ছবিগুলো দেখে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url