বায়োইনফরমেটিক্স কি? || What is Bioinformatics?

 বায়োইনফরমেটিক্স / জৈবতথ্যবিজ্ঞান 

বায়োইনফরমেটিক্স জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত ও পরিসংখ্যানের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিষয়। মূলত এ বিষয়টির জন্য হয়েছে জীববিজ্ঞানের বিশাল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করে সেগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য। অর্থাৎ জীববিজ্ঞানে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ হলো বায়োইনফরমেটিক্স। জীববিজ্ঞানের সমস্যাগুলো যখন কম্পিউটার প্রযুক্তি কৌশল (কম্পিউটেশনাল টেকনিক) ব্যবহার করে সমাধান করা হয়, তখন সেটাকে বলা হয় বায়োইনরমেটিক্স। 

গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যখন ১৩ বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ডিএনএ - র গঠন (মানব জিনোম সিকোয়েন্স) জানা গেল, বোঝা গেল DNA এর গুরুত্ব; ক্রমাগত বাড়তে থাকলো জৈবতথ্য নিয়ে গবেষণা। বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ডিএনএ সিকোয়েন্সিং উদ্ভাবনের ফলে দ্রুত বাড়তে থাকলো জৈবতথ্যের সমাহার। তাই জীববিজ্ঞানে বাড়তে থাকলো গণকবিদ্যা বা কম্পিউটেশনাল টেকনিক, তথ্যবিদ্যা বা ইনফরমেটিক্সের প্রয়োজনীয়তা, জন্ম নিলো বায়োইনফরমেটিক্স। যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে হিসাব - নিকাশ করা হয় , তার মধ্যে রয়েছে প্যাটার্ন রিকগনিশন , ডেটা মাইনিং , যান্ত্রিক শিক্ষা ইত্যাদি। 

খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষিতেও বায়োইনফরমেটিক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অণুপ্রাণ বিজ্ঞানীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রজেক্টের ডেটাগুলোর তথ্য জানানো। কারণ, প্রথাগতভাবে গবেষণাগারে অনুপ্রাণ বিজ্ঞানীরা কাজ করতেন সীমিত Data নিয়ে , কিন্তু প্রচুর সংখ্যক Data নিয়ে কাজ করার জন্য এ গবেষণার সাথে কম্পিউটার যুক্ত করা হয়। কেননা সিকোয়েন্স জেনারেট (Sequence Generate) করা, সাব - সিকোয়েন্স (Sub-Sequence) সংরক্ষণ করা, ডেটা রূপান্তর ও বিশ্লেষণ ইত্যাদি সব কাজই কম্পিউটারনির্ভর কাজ। তবে বিভিন্ন লেভেলে একটি অণুজীব পরীক্ষা করার কাজটি খুব জটিল। 

বায়োইনফরমেটিক্স বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হলো বিশাল জৈবডেটার ভাণ্ডারকে সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষণ, এতে সহজ বিচরণ ( Access ) এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা প্রদানের দায়িত্ব পালন করা। বিশ্লেষণের পূর্বে যে কোনো ডেটা একেবারে অর্থহীন। অবস্থায় থাকে । একজন প্রশিক্ষিত জীববিজ্ঞানীর পক্ষেও এটি নিয়ে ম্যানুয়েলি কাজ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই বিভিন্ন জৈব ডেটাকে অর্থপূর্ণ জৈবতথ্য প্রদানের উপযোগী করতে কম্পিউটারের ডেটা প্রসেসিং টেকনিক ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে ৪ টি ভিন্ন শাখার উপাদান ও কৌশলের সমন্বয়ে বায়োইনফরমেটিক্স পদ্ধতি কাজ করে থাকে। যথা 

বায়োইনফরমেটিক্স

১. আণবিক জীববিদ্যা: ডেটার উৎস বিশ্লেষণের কাজ করে। 

২. ডেটাবেজ: জৈবতথ্যের টেক্সট মাইনিং ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের কাজ করে থাকে। 

৩. প্রোগ্রামিং: উপাত্ত বিশ্লেষণ অ্যালগরিদম যা দ্বারা বায়োইনফরমেটিক্স কঠোরভাবে সুনির্দিষ্ট করা হয়।

৪. গণিত ও পরিসংখ্যান: এর সাহায্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। 

বায়োইনফরমেটিক্স সময় অনেক কমিয়ে অর্থ সাশ্রয় করে। যেমন- কোনো একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে পেপটাইড ভ্যাক্সিন তৈরি করা হবে। এ ভাইরাসের জন্য হয়তো একশটি পেপটাইড সম্ভব। পেপটাইড হলো এমিনো এসিডে সরলরৈখিক সিকোয়েন্স। কিন্তু এদের মধ্যে হয়তো দু'টি থেকে পাঁচটি পেপটাইড ভ্যাক্সিন হিসেবে কাজ করবে, বাকিগুলো করবে না । এখন এ একশটি এক্সপেরিমেন্ট ওয়েটল্যাবে (গবেষণাগারে বিভিন্ন রাসায়নিক রি - এজেন্ট ব্যবহার করে পরীক্ষা) করতে গেলে বিশাল খরচ, পরিশ্রম ও সময় লাগবে। এক্ষেত্রে বায়োইনফরমেটিক্স সহায়তা করে। 

যখন জৈৱতথ্য নিয়ে কম্পিউটারের মধ্যে গবেষণা করা হয়, তখন তাকে বলে ড্রাইল্যাব। এখানে রি - এজেন্ট (এক প্রকার রাসায়নিক বস্তু) প্রয়োজন হয় না। ড্রাইল্যাবে বিজ্ঞানীরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নানা ধরনের বিশ্লেষণ করে, ত্রিমাত্রিক মডেলিং, সিমুলেশন বিশ্লেষণ করে যারা কাজ করতে পারে সম্ভাব্য এমন দশটা পেপটাইড বের করে আনতে পারেন। অতঃপর ওয়েটল্যাবে একশতটি পেপটাইড নিয়ে কাজ না করে এই দশটি পেপটাইড নিয়ে কাজ করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেতে পারেন। এভাবে বায়োইনফরমেটিক্স দশভাগ কাজ, সময়, পরিশ্রম ও অর্থ কমিয়ে দেয়। ধান, পাট , গমসহ নানাবিধ ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন, মিউটেশন ব্রিডিং বা সংকরায়ন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। সংকরায়ন পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত এক বা একাধিক গুণাবলি নির্ভর কয়েকটি জিনকে কোনো একটি জাতের মধ্যে আনা হয়। আর জটিল এ কাজটি সহজ করে দেয় বায়োইনফরমেটিক্স। তাই খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষিতে বায়োটেকনোলজির গুরুত্ব অপরিসীম।

বায়োইনফরমেটিক্স - এর ব্যবহার 

মলিকুলার মেডিসিন, ভেটেরিনারি বিজ্ঞান, বায়োটেকনোলজি, এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স, জেনেটিক ও জিনোম ডেটার মধ্যে তুলনা, মলিকুলার বায়োলজির বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ, জিন ফাইন্ডিং গবেষণা, মাইক্রোবেস - এর ফরেনসিক বিশ্লেষণ, পার্সোনালাইজড মেডিসিন, প্রিভেনটেটিভ মেডিসিন, জীবাণু অস্ত্র উৎপাদন, জৈব বিবর্তনের নকশা তৈরি, জিন থেরাপি, বিবর্তন শিক্ষা, ডিএনএ অ্যানালাইসিস, ঔষধ উন্নয়ন, শস্য উন্নয়ন, নতুন ডিএনএ সিকুয়েন্স তৈরি, মাইক্রোবিয়াল জিনোম অ্যাপ্লিকেশন, কীট প্রতিরোধ, ওয়াস্ট ক্লিনআপ, পুষ্টির মান উন্নয়ন, খরা প্রতিরোধ উন্নয়ন, প্রোটিন টু প্রোটিন মিথস্ক্রিয়া, বিকল্প শক্তি উৎস, ভবিষ্যতে প্রতিটি মানুষের জন্য, আবহাওয়া পরিবর্তন শিক্ষা, ক্যান্সারের ওপর গবেষণা, বিবর্তনের রহস্য উন্মোচন, আলাদা আলাদা নিজস্ব ঔষধ তৈরি।

বায়োইনফরমেটিক্স - এর সুবিধাসমূহ 

১. মলিকুলার ( আণবিক ) জেনেটিক্স (Molecular  Genetics) - এর ভিজ্যুয়ালাইজেশনকে সম্ভব করে তোলে। 
২. বিপুল পরিমাণ পুনরাবৃত্তিমূলক এবং অ - পুনরাবৃত্তিমূলক তথ্যসমূহ সংরক্ষণে সহায়তা করে। 
৩. অ্যালগরিদমিক ডেটা মাইনিং করা সম্ভব। 
৪. প্যাটার্ন রিকগনিশন করা যায়। 

বায়োইনফরমেটিক্স - এর অসুবিধাসমূহ 

১. এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি প্রযুক্তি। প্রকল্প চালিয়ে যেতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ে। 
২. জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফসল কিংবা গৃহপালিত পশুপাখি 'সুপার স্পিশিজ' সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। 
৩. ব্যাপক হারে বায়োইনফরমেটিক্স - এর প্রয়োগের ফলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 
৪. অজানা কোনো রাসায়নিক তৈরি হতে পারে, যা পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

বায়োইনফরমেটিক্স এর বৈশিষ্ট্য কি?

বায়োইনফরমেটিক্স একটি শাখা যা জীববিজ্ঞান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের সমন্বয় করে জীবগত তথ্য, সম্প্রতি ডিএনএ, আরএনএ, এবং প্রোটিন সিকোয়েন্সের সাথে সংক্ষিপ্ত। নিম্নলিখিত বায়োইনফরমেটিক্সের মৌলিক বৈশিষ্ট্য এবং বৈশিষ্ট্যগুলি আছে:

  1. 1. সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ: বায়োইনফরমেটিক্স প্রধানভাবে বায়োলমোলের সিকোয়েন্স, যেমন ডিএনএ, আরএনএ, এবং প্রোটিন সিকোয়েন্সের বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করে। এটি সিকোয়েন্স এলাইনমেন্ট, সদৃশ্য অনুসন্ধান, এবং মোটিফ সন্ধান প্রশ্নে সহায়ক।


  2. 2. জেনোমিক ডেটা বিশ্লেষণ: বায়োইনফরমেটিক্স পূর্ণ জীবগত তথ্য, যেমন সম্পূর্ণ জেনোম সিকোয়েন্সিং, জীবণ প্রকাশন প্রোফাইলিং, এবং জেনোম এনোটেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


  3. 3. কাঠামোতাত্ত্বিক জীববিজ্ঞান: এটি বায়োমোলেকুল, যেমন প্রোটিন এবং আরএনএ মোলেকুলের ত্রৈতীয় মৌলেকুলার গঠনের পূর্বাভাস করতে এবং তাদের কার্যের এবং পরস্পরক্রিয়ায় গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।


  4. 4. বৈদ্যুতিন বায়োলজি: জীবপ্রজাতির বায়োমোলেকুলের জীবপ্রজাতির সঙ্গে প্রজননীয় সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত ডিএনএ এবং প্রোটিন সিকোয়েন্সের সম্বন্ধে আদর্শ এবং বিশ্লেষণ করতে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহৃত হয়। জীবজগতের মধ্যকার গঠন নির্ধারণ একটি সাধারণ আবেদন।


  5. 5. কার্যাত্মক এনোটেশন: এটি বায়োমোলেকুলের সিকোয়েন্সের উপর ভিত্তি করে জীবগত কার্য জন্য জীবদ্বারা কাজ প্রদানের জন্য জীবদ্বারা জীবগত কার্য জন্য জীবদ্বারা কাজ প্রদান করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url