ডিএনএ পর্যবেক্ষণ ও কণ্ঠস্বর যাচাইকরণ || DNA test & Voice Recognition
ডিএনএ পর্যবেক্ষণ
ডিএনএ হলো জীবদেহের নীলনকশা (ব্লুপ্রিন্ট)। প্রতিটি ব্যক্তির আঙুলের ছাপের ন্যায় তার কোষস্থ DNA- এর গঠনও একক ও অদ্বিতীয়। DNA এর পার্থক্যের ভিত্তিতে ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা যায়। ডিএনএ পর্যবেক্ষণ (DNA test) হলো একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোষের মধ্যে অবস্থিত DNA বিশ্লেষণ করে কোনো মানুষের একটি প্রোফাইল বা প্রতিকৃতি তৈরি করা, যেটি উক্ত ব্যক্তিকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জেনেছেন যে, মানুষের DNA- এর মধ্যে এমন কিছু নিউক্লিওটাইডের পুনরাবৃত্তি থাকে, যা নির্দিষ্ট মাতা ও পিতার সঙ্গে কেবল তাদের সন্তানেরাই ভাগ করে নেয়। রক্তের শ্বেত কণিকাতে বা শুক্ররসে , চুলের গোড়ায় অথবা অস্থিতে অবস্থিত কোষ থেকে DNA সংগ্রহ করে এই DNA প্রোফাইল বা DNA ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রস্তুত করা হয়।
DNA হচ্ছে জেনেটিক কোডের সংক্ষিপ্ত নাম। DNA-এর পুরো নাম deoxyriboneucleic acid এটি মূলত অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন এর দ্বারা গঠিত মাইক্রোমলিকিউল। এটি রাসায়নিক তথ্যের অনুবর্তী ফিতার মতো বস্তু। আমাদের দেহকোষ বা সেলের নিউক্লিয়াসে এর অবস্থান। নিউক্লিয়াস এসিড নামে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু বা মলিফিউল দিয়ে ডিএনএ তৈরি। আমাদের ডিএনএ এসব ক্ষুদ্রতর অণু একটি সুনির্দিষ্ট ধারাক্রমে সাজানো থাকে। ঠিক যেমনটি সাজানো থাকে একটি বাক্যে একর পর এক অক্ষর । DNA- কে বংশ বিস্তারের ব্লু প্রিন্ট বলা যেতে পারে । ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিশ্রণের সময় শুক্রাণুর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বাদ যায় , এবং শুধু মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA স্থান পায়।
আমাদের মানব সমাজে অনেক সময় কোনো শিশুর প্রকৃত পিতা - মাতার পরিচয় শনাক্ত করতে হয়। কিংবা দুর্ঘটনায় অনেক সময় নিহত ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধার করা যায় না। এই ধরনের সমস্যা সমাধানে বায়োমেট্রিক্স ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শনাক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে বায়োমেট্রিকে DNA টেস্টের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তিকে অত্যন্ত নিখুঁত ও প্রশ্নাতীতভাবে শনাক্ত করা যায়। এক্ষেত্রে মানব শরীরের যেকোনো উপাদান যেমন- রক্ত , চুল , আঙ্গুলের নখ , মুখের লালা হতে (যে ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে) নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর এগুলোর গঠন - প্রকৃতি শনাক্তের দ্বারা ম্যাপ বা ব্লু - প্রিন্ট বায়োলজিক্যাল ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে যে সকল ব্যক্তিদের সাথে তুলনা করা হবে , তাদের ডেটার সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। যদি উভয়ের ডেটা মিলে যায় , তবেই সঠিক ব্যক্তি শনাক্ত হবে। এভাবেই ডিএনএ পর্যবেক্ষণ করে অদ্বিতীয় ব্যক্তি শনাক্ত করা যায়।
ডিএনএ পর্যবেক্ষণ যেভাবে কাজ করে
১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের Leicester বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যালেক জেফ্রিস (Alec Jeffrezs) DNA প্রোফাইলিং আবিষ্কারের মাধ্যমে ফরেনসিক গবেষণায় এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনেন। ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় তিনি একটি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের DNA- এর এক্স - রে ফিল্মের মধ্যে মিল খুঁজে পান, যা তার DNA প্রোফাইলিং পদ্ধতি আবিষ্কারের মূলভিত্তি। বর্তমানে এই পদ্ধতি National DNA database এ ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত National Forensic DNA Profiling Laboratory হলো বাংলাদেশের একমাত্র DNA Test করার প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন মানুষের DNA প্রোফাইলে ৯৯.৯৯ % মিল থাকলেও এর ০.১ % প্রত্যেক মানুষের জন্য ইউনিক। DNA ফিঙ্গারপ্রিন্টে এর ০.১ % স্বতন্ত্রতাই ব্যক্তি শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
DNA টেস্ট বায়োমেট্রিক্সের সুবিধা
১. পদ্ধতিগত কোনো ত্রুটি না থাকলে শনাক্তকরণের সফলতার পরিমাণ প্রায় শতভাগ।
২. মানবদেহের যে কোনো প্রত্যঙ্গ বা জৈবিক উপাদান যা কোষ ধারণ করে, সেখান থেকেই DNA স্যাম্পল সংগ্রহ করা সম্ভব।
ডিএনএ টেস্ট বায়োমেট্রিক্সের অসুবিধা
১. সহোদর যমজদের ক্ষেত্রে DNA টেস্ট সম্পূর্ণ এক হয়। ফলে অনেক সময় তা ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে।
২. প্রোফাইলিং করার সময় সংকরায়ন ও প্রোবিং পদ্ধতির ত্রুটি DNA টেস্ট ত্রুটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
DNA টেস্ট বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার
১. অপরাধী শনাক্তকরণে DNA টেস্ট ব্যবহৃত হয়।
২. পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নিয়ে বিবাদ দেখা দিলে তা সমাধানে DNA টেস্ট কাজে লাগে।
কণ্ঠস্বর যাচাইকরণ
কণ্ঠস্বর যাচাইকরণ পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে
ভয়েস রিকগনিশন বায়োমেট্রিক্সের সুবিধা
১. স্বল্পসময়ে রিকগনিশন সম্ভব।
২. তুলনামূলক সস্তা প্রযুক্তি।
৩. উচ্চমানের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা।
ভয়েস রিকগনিশন বায়োমেট্রিক্সের অসুবিধা
১. অ্যাকিউরিসি - এর পরিমাণ নিম্ন।৩. অসুস্থতার জন্য গলা বসে গেলে এটি ঠিকমতো কাজ করবে না।