আইরিশ ও মুখমণ্ডলের অবয়ব শনাক্তকরণ || Irish and face Recognition

 আইরিস শনাক্তকরণ 

আইরিস শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে চোখের মণির চারপাশে বেষ্টিত রঙিন বলয় বা আইরিশ বিশ্লেষণ করে মানুষকে শনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিটি অধিক সুবিধাজনক ও কার্যকর পদ্ধতি।

আইরিস শনাক্তকরণ যেভাবে কাজ করে 

আইরিস স্ক্যান বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তিকে তার মাথা ও চোখকে স্থির অবস্থায় ক্যামেরা সংযুক্ত একটি ডিভাইসের সম্মুখে স্থাপন করতে হয়। উক্ত ক্যামেরাটি চোখের দুটো ফটোগ্রাফ গ্রহণ করে, যার মধ্যে একটি সাধারণ আলোতেও অদৃশ্য আলো তথা ইনফ্রারেড আলোতে গ্রহণ করা হয়। সাধারণ আলোর ফটোগ্রাফটি চোখের তারার দৃশ্যমান রঙিন অংশকে পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ইনফ্রারেড আলোয় নেয়া ফটোগ্রাফটি চোখের তারার গাঢ় কালো অংশটি পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। এই দুই ফটোগ্রাফকে কমপিউটারে নেয়ার পর এর অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হয় এবং এখান থেকে প্রায় ২৪০ টি অদ্বিতীয় বিন্দুকে শনাক্ত করা হয়। এগুলোকে একটি নিউমেরিক কোডে রূপান্তর করে তা আইরিস কোড হিসেবে এক্সট্র্যাক্ট করা হয়। অতঃপর পূর্বে সংরক্ষণ করা আইরিস কোডের সাথে তা ম্যাচিং করে কোনো ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা হয়।

আইরিশ ও মুখমণ্ডলের অবয়ব শনাক্তকরণ

আইরিস স্ক্যানিং বায়োমেট্রিক্সের সুবিধা 

১. অত্যন্ত হাই অ্যাকিউরিসি পাওয়া সম্ভব। 
২. এই প্রত্যঙ্গগুলোকে সহজে ডুপ্লিকেট করা সম্ভব নয়। 
৩. মৃত ব্যক্তির রেটিনা দ্রুত পচন ধরে বিধায় বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করা সম্ভব নয়।
৪. এটি নকল করা কঠিন।
৫. তুলনামূলকভাবে সময় কম লাগে।

আইরিস স্ক্যানিং বায়োমেটিক্সের অসুবিধা 

১. অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। 
২. প্রচুর মেমোরি প্রয়োজন হয়।  
৩. ক্যামেরার খুব কাছাকাছি চোখ রাখতে হয় , যা অস্বস্তিকর। 
৪. চোখের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর।  
৫. কন্ট্রাক্ট লেন্স পরা থাকলে এ পদ্ধতি কার্যকর নয়।
 

আইরিস ভ্যানিং বায়োমেট্রিক্সের ব্যবহার 

১. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরকারি সংস্থা যেমন - এফবিআই , নাসাতে ব্যক্তি শনাক্তকরণে আইরিশ স্ক্যান ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২. সম্প্রতি কারাগার , এটিএম বুথ প্রভৃতিতে ভেরিফিকেশনে আইরিশ স্ক্যান ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩. মোবাইল ফোন লগ ইন অথেনটিকেশনে ব্যবহৃত হয়।

মুখমণ্ডলের অবয়ব শনাক্তকরণ 

মানুষের চেহারায় ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একজনের চেহারার সাথে আরেকজনের চেহারা মিলে না। যে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে মানুষের মুখের জ্যামিতিক আকার ও গঠনকে পরীক্ষা করে উক্ত ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা হয়, তাকে ফেইস রিকগনিশন সিস্টেম বলে। ফেইস রিকগনিশন পদ্ধতিতে মুখ বা চেহারার বৈশিষ্ট্য (facial characteristics) বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করা হয়। দুই চোখের মধ্যকার দূরত্ব , নাকের দৈর্ঘ্য বা ব্যাস, চোয়ালের কৌণিক মাপ ইত্যাদি পরিমাপের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। সম্প্রতি ল্যাপটপ , নোটবুক ও পিডিএ - তে লগইন করতে বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
 

মুখমণ্ডলের অবয়ব শনাক্তকরণ পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে 

ফেইস রিকগনিশন পদ্ধতিতে একটি সাধারণ ডিজিটাল ক্যামেরার সামনে মাত্র কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ালে এটি ঐ ব্যক্তির মুখের একটি ইমেজ নিয়ে তা সংযুক্ত কম্পিউটারে প্রেরণ করে। কম্পিউটার কেবল ঐ মুখের কিছু নির্দিষ্ট বিষয় যেমন চোখ, মুখ ও নাকের দূরত্ব, এদের অবস্থান ইত্যাদি ডেটা নিয়ে একটি নিউমেরিক কোড তৈরি করে। অতঃপর প্রাপ্ত নিউমেরিক ডেটাকে পূর্বে ঐ ব্যক্তির ফেইস থেকে জেনারেট করা নিউমেরিক কোডের সাথে মিলিয়ে ব্যক্তিটিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা হয়। এটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতির মতোই প্রায় শতভাগ সফলতা প্রদান করতে সক্ষম হয় এবং তা সর্বোচ্চ ৫ সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মুখে ময়লা বা ঘাম ইত্যাদি থাকলেও তা শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে কোনো ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না।

ফেইস রিকগনিশন বায়োমেট্রিক্সের সুবিধা 

১. বেশিরভাগ নিরাপত্তা সফটওয়্যারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 
২. তুলনামূলক সস্তা প্রযুক্তি।

ফেইস রিকগনিশন বায়োমেট্রিক্সের অসুবিধা 

১. মুখে আলোর প্রতিফলন ঘটলে মাঝে মাঝে এ সিস্টেমটি মুখমণ্ডল চিনতে পারে না। 
২. চোখে সানগ্লাস পরা থাকলে মুখমণ্ডল চিনতে অসুবিধা দেখা দেয়।

ফেইস রিকগনিশনের ব্যবহার 

১. অধিকাংশ পার্সোনাল ডিভাইসে (যেমন : স্মার্টফোন , ল্যাপটপ, ট্যাব প্রভৃতি) বিল্ট ইন ফেইস ক্যামেরা থাকায় এ সমস্ত ডিভাইস অ্যাক্সেস বা অথেনটিকেশনে এখন ফেইস রিকগনিশন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 
২. স্মার্ট অ্যাডভার্টাইজিং (Smart Advertising) বয়স অনুযায়ী অ্যাড মার্কেটিং গ্রুপ নির্ধারণে ফেইস রিকগনিশন System  ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 
৩. ডিজিটাল ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ফেইস রিকগনিশন সিস্টেম ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

হাতে করা স্বাক্ষর যাচাইকরণ 

এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর হাতের স্বাক্ষরকে পরীক্ষা করে সত্যতা যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের কলম ও প্যাড ব্যবহার করে স্বাক্ষরের আকার, লেখার গতি , সময় ও কলমের চাপ পরীক্ষা করা হয়। অন্যান্য বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতির চেয়ে খরচ কম। ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্বাক্ষর শনাক্তকরণের কাজে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

সিগনেচার ভেরিফিকেশন বায়োমেট্রিক্সের সুবিধা 

১. স্বল্পসময়ে রিকগনিশন সম্ভব। 
২. সস্তা প্রযুক্তি। 

সিগনেচার ভেরিফিকেশন বায়োমেট্রিক্সের অসুবিধা 

১. সঠিকভাবে শনাক্তকরণের ব্যাপারটি একটু কঠিন। 
২. সিগনেচারের প্যাটার্ন (Signature Pattern) না মিললে কাজ করবে না। 

কীবোর্ড টাইপিং গতি যাচাইকরণ 

কীবোর্ড কিংবা এ জাতীয় কোনো ইনপুট ডিভাইসে নির্দিষ্ট কোনো পাসওয়ার্ড (গোপন কোড) টাইপ করে এন্ট্রি করা হয় এবং বিশ্লেষণ করা হয়। এক্ষেত্রে তার পূর্বের ও বর্তমান টাইপিং - এর সময় তুলনা করে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। 

বায়োমেট্রিক্সে কোন পদ্ধতি সর্বাধিক জনপ্রিয়? 

ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্তকরণে ব্যবহৃত নিরাপদ বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ডিএনএ, আইরিস ও রেটিনা স্ক্যানিং, ফেইস রিকগনিশন, ভয়েস ও সিগনেচার রিকগনিশন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে দামে সস্তা, সহজ ব্যবহার, শতভাগ বিশ্বাসযোগ্যতা, দ্রুত ও নির্ভুল ফলাফল প্রাপ্তি প্রভৃতি বিচারে ফিঙ্গার প্রিন্ট বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তিটিই বর্তমানে অধিক জনপ্রিয় এবং বহুলভাবে ব্যবহৃত।

বায়োমেট্রিক বার্থ ( জন্ম ) সার্টিফিকেট 

বর্তমানে অনেক দেশের হাসপাতালে সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিশু যাতে অন্য শিশুর সাথে পাল্টে না যায় এবং চুরি না হয়, এ জন্য বায়োমেট্রিক বার্থ (জন্ম) সার্টিফিকেট প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এক্ষেত্রে শিশুর ডিএনএ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চুলের নমুনা, রক্ত ইত্যাদি তথ্য জন্ম সার্টিফিকেটের মেমোরি চিপে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ ধরনের রিডারের মাধ্যমে স্ক্যান করে এসব তথ্য রিড করা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url