ওআইসি-এর উদ্দেশ্য || Purpose of OIC

 ওআইসি - র গঠন ও উদ্দেশ্য

পৃথিবী জুড়ে মুসলিম জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের তেমন কোনো অন্তর্জাতিক সংগঠন ছিল না। ১৯৬৯ সালে সারাবিশের মুসলিম দেশগুলো তাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও তীয় ঐক্যানুভূতিকে একাত্ম করার লক্ষ্য নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গোড়াপত্তন করে। যার নাম ওআইসি (OIC) এর পূর্ণরূপ হলো Organization of Islamic Co-operation। যদিও প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে OIC- এর পূর্ণরূপ ছিল Organization of Islamic Conference। ২০১১ সালের ২৮ জুন নাম পরিবর্তন করে Organization of Islamic Co-operation করা হয় । প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর সদস্য রাষ্ট্র ছিল ২৫ টি । বর্তমানে OIC- এর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ৫৭ টি। এছাড়া ওআইসির পর্যবেক্ষক হিসেবে ৫ টি রাষ্ট্র , ১ টি ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ও ৫ টি আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে।

ওআইসি -র গঠন 

 ১৯২৪ সালে ওসমানি খিলাফতের বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে মুসলিম জাতিসত্তার ঐক্যের শেষ কেন্দ্রবিন্দু নিঃশেষ হয়ে যায় তারপর থেকে জাতি - রাষ্ট্রের ধারণার প্রবল তোড়ে মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলো একের পর এক স্বাধীন হতে থাকে এবং ভৌগোলিক অবস্থান , ভাষা , সংস্কৃতি আর ইতিহাস - ঐতিহ্য ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার চেতনাকে ছাপিয়ে যায়। এমতাবস মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের কাছ থেকে শুধু বিচ্ছিন্নই হয়নি বরং তারা পরস্পর নানাবিধ ভন্দ্ব ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং এ সুযোগে বিভিন্ন অত্যাচারী, সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী চক্র যুসলমানদের ওপর তাদের আদিত্যকে ক্রমশ বৃদি করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অনেক পরে হলেও ১৯৬৯ সালে বায়তুল মোকাদ্দাসে ইহুদিরা অগ্নিসংযোগ করলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। তখনই তারা মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা শুরু করে। ওআইসি মূলত তাদের সে অনুভূতি থেকেই জন্ম নেওয়া একটি সমস্যা। 

১৯৫৭ সালের আরব - ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে। আর তার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদ ও তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় গোটা মুসলিম বিশ্বে। ২৫ আগস্ট ১৪ টি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিসরের রাজধানী কায়রোতে আলোচনায় বসেন। ঐ বৈঠকে সৌদি আরব প্রস্তাব করে যে, যেহেতু বিষয়টি গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য স্পর্শকাতর তাই বিষয়টি সম্পর্কে সকল মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ঠিক করা জরুরি। মরক্কোর রাজধানী রাবাতে দ্রুততার সাথে সে বছর ২২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর তিনদিনব্যাপী একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৭০ সালের ২২ থেকে ২৭ মার্চ প্রপ্তমবারের মতো মুসলিম দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে সৌদি আরলে জেলায় তৃতীয় পররাষ্ট সম্মোলনে ওআইসি - এর একটি খসড়া সনদ অনুমোদিত হয়। শুরু হয় ওআইসি - এর যাত্রা। 
ওআইসি-এর উদ্দেশ্য

ওইসি - র সাংগঠনিক কাঠামো 

ইসলামিক কনফারেন্স তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ করে চলেছে। এগুলো হলো- 

১. মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের কনফারেন্স

২. মুসলিম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কনফারেন্স ও 

৩.ইসলামি সেক্রেটারিয়েট ও পার্শ্ব সংগঠনসমূহ।

 রাষ্ট্রপ্রধানদের কনফারেন্সই ওআইসির সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল সংস্থা। মুসলিম বিশ্বের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ বিবেচনা করা এবং ওআইসির নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধন করাই এর প্রধান কাজ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কনফারেন্স প্রতিবছর একবার অনুষ্ঠিত হয় এবং দুই - তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন যেকোনো সিদ্ধান্ত কনফারেন্সে কোরাম হয় দুই - তৃতীয়াংশ সদস্য দ্বারা।

সেক্রেটারিয়েট হলো ইসলামি কনফারেন্সের প্রধান কার্যনির্বাহী সংস্থা। এ সেক্রেটারিয়েট একজন সেক্রেটারি জেনারেল ও তিনজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলসহ প্রয়োজনীয় স্টাফদের নিয়ে গঠিত। সেক্রেটারিয়েটের কাজ হলো কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং কনফারেন্সের কাছে কাজের রিপোর্ট প্রদান। তাছাড়া সেক্রেটারিয়েট পার্শ্ব সংগঠনসমূহের কার্যাবলিও দেখাশোনা করে।

ওআইসি - র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 

ওআইসির ৭ টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো— 
১. সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ইসলামি সংহতি বৃদ্ধি করা। 

২ . অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক এবং কাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা সংহত করা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা।

৩. সব ধরনের বর্ণ বৈষম্যের অবসান এবং সবরকমের ঔপনিবেশবাদের বিলোপ সাধনের চেষ্টা করা।

৪. সুবিচারভিত্তিক আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রয়োজনীয় সমর্থন দান।

৫. পবিত্র স্থানসমূহের নিরাপত্তা বিধানের সংগ্রামকে সমন্বিত, সুসংহত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য সংগ্রামকে সমর্থন করা এবং তাদের অধিকার আদায় ও দেশ মুক্ত করার কাজে সাহায্য প্রদান।

৬. মুসলমানদের মান - মর্যাদা, স্বাধীন ও জাতীয় অধিকার সংরক্ষণের সকল সংগ্রামে মুসলিম জনগণকে শক্তি যোগানো।

৭. সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url