সবুজ রসায়ন || Green Chemistry

 সবুজ রসায়নের মূলনীতি 
Paul Anastas এবং John C Warner গ্রীন রসায়নের যার ১২ টি মৌলিক নীতি বিবেচনা করে এর ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করেছেন। এ নীতিগুলি সবুজ রসায়ন সম্বন্ধে আমাদের যে ধারণা দেয় তা হলো: 
১. এমন রাসায়নিক প্রযুক্তি / পদ্ধতি বের করা যাতে বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদের রূপান্তর সর্বোচ্চ হয়।
২. নিরাপদ, পরিবেশ বান্ধব রাসায়নিক পদার্থ এমনকি পরিবেশ বান্ধব দ্রাবক ব্যবহার করা, যদি সম্ভব হয়।
৩. এমন শিল্প কারখানা উদ্ভাবন করতে হবে যেখানে শক্তির অপচয় সর্বনিম্ন হয়। 
৪. শিল্পবর্জ্যের নিরাপদ বর্জন করতে হবে।
সবুজ রসায়ন

উপরোক্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে সবুজ রসায়ন প্রবর্তিত বার ১২টি মৌলিক নীতি হলো:
১. শিল্পবর্জ্যের অপকারিতা রোধ করার চেয়ে শিল্পবর্জ্য যাতে উৎপন্ন না হয় সেদিকে নজর রাখা উচিত। কারণ শিল্প বর্জ্য পরিষ্কারকরণ বা এর ক্ষতিকারক প্রয়োগ রোধ করতে প্রচুর অর্থনৈতিক ব্যয় বিবেচনা করতে হয়। 
২. এমন শিল্প পদ্ধতি কারখানা পরিকল্পনা করতে হবে যেন সকল কাঁচামাল উৎপাদে পরিণত হয়।
৩. সংশ্লেষণ পদ্ধতি এমন হবে যেন উৎপন্ন পদার্থ মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য স্বল্প ক্ষতিকারক বা ক্ষতিকারকহীন হয়।
৪. উৎপন্ন রাসায়নিক পদার্থের ক্ষতিকারক প্রভাব কমিয়ে ফেলার সময় পদার্থের গুণাগুণ যেন হ্রাস না পায়।
৫. সহযোগী রাসায়নিক পদার্থ যেমন দ্রাবক, পৃথকীকৃত বিকারক দ্রব্য প্রভৃতির ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় ও পদ্ধতির পক্ষে নির্বিঘ্ন (nontoxic) হতে হবে। 
৬. শিল্পে ব্যবহৃত শক্তি যেন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ও পরিবেশ সহায়ক হয়। সংশ্লেষণ পদ্ধতির তাপমাত্রা ও ছাপ যেন পারিপার্শ্বিক (ambient) অবস্থার মতো হয় । 
৭. পদ্ধতিগতভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে যখন কোন শিল্প কারখানা কাজ শুরু করে তখন ব্যবহৃত কাঁচামাল যেন নবায়নযোগ্য (renewable) হয়। কোন অবস্থাতেই কাঁচামাল যেন নিঃশেষিত (depleting) না হয়। অর্থাৎ ব্যবহারের পর উৎসটি যেন একেবারে শেষ না হয়ে যায়। 
৮. জাতক প্রস্তুতির সুযোগ যেন না থাকে বা কম হয় । পার্শ্ব বিক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক সময় বিক্রিয়ক অণু ঈস্পিত উৎপাদে পরিণত হওয়ার পূর্বে বা পরে অপর উৎপাদে যেন পরিণত না হয় । অপ্রয়োজনীয় জাতক উৎপাদন পরিহার করতে হবে। 
৯. প্রভাবকীয় পদার্থসমূহ যথাসম্ভব নির্বাচনীয় (selective) হতে হবে। বিক্রিয়কের চেয়ে এরা যেন উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন হয়।
১০. রাসায়নিক উৎপাদগুলো যেন এমন হয় যে , তাদের ব্যবহারের পর এরা পরিবেশে দীর্ঘ দিন উপস্থিত না থাকে এবং প্রাকৃতিক প্রভাবে বিয়োজিত হয়ে নির্বিতে (harmless or nontoxic) পরিণত হয়।
১১. বিশ্লেষণীয় পদ্ধতিগুলো আরো উন্নত করে শিল্পোৎপাদনের প্রকৃত সময় , পদ্ধতি চলাকালীন পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ গঠনের পূর্বে যেন জানা যায়।
১২. বিক্রিয়ক পদার্থ এবং পদার্থের অন্য কোন গঠন রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহারের পূর্বে দেখতে হবে যেন এরা রাসায়নিক দুর্ঘটনা , বিস্ফোরণ এবং আগুনের কারণ না হয়। এরা পরিবেশে যুক্ত হলেও যেন ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

সবুজ রসায়নের জনক কে?
সবুজ রসায়নের মূলনীতি ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী পল টি অ্যানাস্তাস এবং জন সি ওয়ারনার সবুজ রসায়নের বিষয়টি প্রস্তাব করেন ৷

সবুজ রসায়নের প্রবণতা 
বর্তমানে ' সবুজ রসায়ন ' এর ক্ষেত্র কেবল কোন নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদ্ধতির সবুজত্বের (greenness) পরিমাণই পরিমাপ করে না, তা শিল্পের অন্যান্য পরিমাপক বা চলকের (variables) বিভিন্ন নিয়ামক (factors) নিয়ে কাজ করে। যেমন রাসায়নিক উৎপাদন মাত্রা (chemical vield), বিক্রিয়কের বাজার মূল্য, ব্যবহারের সহজসাধ্যতা বা নিরাপত্তা , হার্ডওয়ার চাহিদা, শিল্পোদ্যোগের শক্তি ব্যয় এবং উৎপাদের প্রয়োগের ও বিশোধনের সহজসাধ্যতা ইত্যাদি। সবুজ রসায়ন তার বিস্তার সকল ধরনের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিস্তৃত করেছে। একটি উদাহরণ দিলে তা পরিস্কার হবে। সবুজ গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, নাইট্রোবেনজিন হতে অ্যানিলিনের বিজারণ বিক্রিয়া 100 এর মধ্যে 64 পয়েন্ট বিশিষ্ট হয়। পক্ষান্তরে, একটি অ্যামাইড যৌগ সংশ্লেষণ বিক্রিয়া 32 পয়েন্ট পায়। এ থেকে বুঝা যায়, প্রথম বিক্রিয়ার পদ্ধতিটি সবুজ রসায়নের বিচারে গ্রহণযোগ্য।

গবেষকরা পরিবেশের ওপর ন্যানো কৌশলবিদ্যার প্রভাব মূল্যায়নে সবুক্ত রসায়নকে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার (tool) বলে মনে করেন। ন্যানো কৌশলে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের উন্নয়ন পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এটি বিবেচনা করে এদের দীর্ঘমেয়াদী গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়।

সবুজ রসায়ন বর্তমানে এতটা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী পণ্য কতটা পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য সহায়ক তা নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইনও ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। এদের মধ্যে দূষণ প্রতিরোধ আইন (pollution prevention act), বিষাক্ত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (toxic substances control act) প্রভৃতি কার্যকর রয়েছে।

সবুজ রসায়নের প্রয়োজনীয়তা
সবুজ রসায়ন হলো একটি রাসায়নিক দর্শন, যার মূল লক্ষ্য পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো। এই ধারণা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে সৃষ্ট দূষণ হ্রাস করতে উদ্ভাবিত হয়েছিল।  সবুজ রসায়নের গুরুত্বকে নিম্নলিখিত দিকগুলোতে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:
1. পরিবেশগত সুরক্ষা: সবুজ রসায়ন কম দূষণ ঘটানোর চেষ্টা করে, যা পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক। এটি বায়ু, পানি, এবং মাটিতে বিষাক্ত রাসায়নিক প্রবেশ কমিয়ে দেয়।

2. নবায়নযোগ্য উপকরণের ব্যবহার: সবুজ রসায়নে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক ও নবায়নযোগ্য উপাদানের ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়, যা জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমায়।

3. শক্তি সঞ্চয়: সবুজ রসায়নের প্রক্রিয়া অধিকতর শক্তি সাশ্রয়ী হয়, ফলে উৎপাদন খরচ কমে এবং পরিবেশে কার্বনের নিঃসরণ কম হয়।

4. জনস্বাস্থ্যের উন্নতি: বিষাক্ত রাসায়নিক ও দ্রাবকের ব্যবহার হ্রাসের মাধ্যমে সবুজ রসায়ন মানবস্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করে।

5. ব্যবসায়িক লাভ: সবুজ রসায়ন অধিক সাশ্রয়ী এবং টেকসই হওয়ায়, এটি শিল্পগুলিকে আরও কার্যকরীভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এভাবে, পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনে ব্যবসায়িক লাভও বাড়ে।

সবুজ রসায়ন টেকসই উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, বরং অর্থনীতি এবং সমাজের জন্যও সমানভাবে উপকারী।

সবুজ রসায়নের কাজ
সবুজ রসায়নের প্রধান কাজ হলো এমন রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা, যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সহায়ক। এটি মূলত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে। সবুজ রসায়নের কিছু প্রধান কাজ হলো:
1. নিরাপদ রাসায়নিকের উদ্ভাবন: এমন রাসায়নিক উপাদান তৈরি করা যা মানবস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর।

2. বিষাক্ত দ্রাবক ও উপাদানের বিকল্প খুঁজে বের করা: পরিবেশে বিষাক্ত পদার্থ ও দ্রাবকের ব্যবহার হ্রাস করে নিরাপদ বিকল্প ব্যবহারে জোর দেওয়া।

3. শক্তি-সাশ্রয়ী প্রক্রিয়া উদ্ভাবন: এমন রাসায়নিক প্রক্রিয়া তৈরি করা, যা কম শক্তি খরচ করে এবং কম দূষণ ঘটায়।

4. নবায়নযোগ্য উপাদানের ব্যবহার: রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলিতে প্রাকৃতিক ও পুনর্নবীকরণযোগ্য উপাদান ব্যবহার করা, যা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমায়।

5. বর্জ্য হ্রাস করা: উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময় কম বর্জ্য তৈরি হয়, এমন প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

6. ক্যাটালিস্ট ব্যবহার: রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নিরাপদ ও কার্যকর ক্যাটালিস্ট (উত্প্রেরক) ব্যবহার করা, যা কম শক্তি খরচ করে এবং বর্জ্য কমায়।

সবুজ রসায়নের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং নিরাপদ রাসায়নিক প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ও সমাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সবুজ রসায়নের পটভূমি 
আমরা জানি , সবুজ রসায়ন বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীব্যাপি তাদের কর্মকান্ড বিস্তৃত করেছে। শিল্পোন্নত থেকে স্বল্প শিল্পোন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের সকল শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনে পরিবেশ রক্ষার নির্দেশিকা (guidelines to the safety for environments) মানতে বাধ্য। তাছাড়া ব্যবহার্য রাসায়নিক পদার্থ বা বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের সহায়ক হবে কিংবা পরিবেশের কম ক্ষতির কারণ হবে- এমন নিশ্চয়তা শিল্প উৎপাদনকারী কর্তৃপক্ষ দিতে বাধ্য থাকবেন। এটাই সবুজ রসায়নের মূল বক্তব্য। নিচে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে সবুজ রসায়নের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:

১. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও গ্রীন হাউজ প্রভাবের বৃদ্ধি (Global Warming and the Increased Green House Effect) : গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কয়লা প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি বর্তমানে বিশ্বের জলবায়ু (climate) পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে এবং এর কারণ হলো অতিমাত্রায় কার্বন - ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপাদন। আমরা জানি , কার্বন ডাইঅক্সাইড একটি গ্রীন হাউস গ্যাস। কিন্তু এটিই একমাত্র দায়ী গ্যাস নয়।

দেখা যায় যে, কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে ক্ষতিকর আরো অনেক গ্যাস রয়েছে যারা গ্রীন হাউসে অধিক প্রভাব রাখে। গ্রীন হাউস গ্যাস হিসেবে কোন গ্যাসের প্রভাব কতটুকু তা ' আপেক্ষিক গ্রীন হাউজ ফ্যাক্টর (relative green house factors) দ্বারা পরিমাপ করা যায়। যে গ্যাসের ক্ষেত্রে এ ফ্যাক্টরের মান বেশি সে গ্যাস পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বেশি অবদান রাখে । নিচের সারণি হতে দেখা যায় যে, কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে অপরাপর সকল গ্যাসেরই অবলোহিত রশ্মি (IR বিকিরণ) শোষণের ক্ষমতা বেশি। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ডাইনাট্রোজেন অক্সাইড, ট্রাইক্লোরফ্লোরমিথেন  এ সফল গ্যাসকে গ্রীন হাউস গ্যাস ' বলা হয়। কারণ এরা অবলোহিত রশ্মি শোষণ করে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। গ্রীন হুজায়ন তাদের সংবেদনশীল নির্দেশিকা (guidelines) প্রচার করে এবং গ্রীন হাউস গ্যাসের উৎপাদন হ্রাসে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপাদনকারী কারখানার কার্যক্রম বন্ধে উল্লেখ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে। 

২. মানব সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন (Anthropogenic and Natural Climate Change): মানব সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বলতে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের দ্বারা (যথা জীবাশ্ম জ্বালানির নতুন বন উজাড় (deforestation) প্রভৃতি) আবহাওয়ার জন্ম পরিবর্তনকে বুঝায়। প্রাকৃতিক জলবায়ু পরিবর্তন (natural climate change) বলতে পৃথিবীতে সংঘটিত প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে বুঝায়। উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্রের পানিতে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের দ্রবীভূত হওয়া এবং এর ফলে কার্বনেট শিলা গঠনে অবদান রাখা । সুতরাং জীবাশশ্ম জ্বালানি বা অন্যান্য মানব সৃষ্ট বা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের দরুণ বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ধীরে ধীরে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে । এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, 1750 সনে বায়ুমন্ডলে CO, এর পরিমাণ ছিল 280 ppm (parts per million) 2005 সনে তা বেড়ে 379 ppm হয়েছে । 

সুতরাং 250 বছরে 100 ppm বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা ধারণা করা হয় যে , মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ এবং এর দুই - তৃতীয়াংশ আসে জীবাশ্ম জালানীর (কয়লা ও পেট্রোলিয়াম) মাধ্যমে , আর বাকী এক - তৃতীয়াংশ আসে ভূমি ব্যবহার (land - use) পরিবর্তনের দরুণ যথা বন উজাড়, কৃষি কাজ সম্প্রসারণ প্রভৃতি। উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইডের 45% বাতাসে থেকে যায়, 30% সমুদ্র দ্বারা শোষিত হয় এবং 25% পৃথিবী পৃষ্ঠের উদ্ভিদ দ্বারা গৃহীত হয়। গ্রীন রসায়ন আমাদেরকে এরূপ তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ জানায় এবং তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য করণীয় কী তা বলে দেয় । 

৩. বিমান পরিবহন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Air traffic and global warming): মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারণ হলো আকাশে বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা। উচ্চ আকাশে উড্ডয়নশীল জেট বিমানগুলো ঘনীভূত জলীয় বাষ্পের পশ্চাদ্ধারা (contrails) সৃষ্টি করে। এটি তাত্ত্বিকভাবে কোন বায়ু দূষক নয়, তবে একে কৃত্রিম মেঘ (artificial clouds) বলা হয়। যাহোক, এ কৃত্রিম মেঘ দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবীর ওপর ভূমিকা রাখে বলে গ্রীন রসায়ন প্রমাণ করেছে । জেট ইঞ্জিন নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহও নির্গমন করে। এটি গ্রীন হাউস গ্যাস। ওজোন স্তরকে গ্রীন হাউস গ্যাস ছিদ্র করে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিসহ অন্যান্য মহাজাগতিক ক্ষতিকর রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url