সপ্তম শ্রেণি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, প্রথম অধ্যায় (প্রাত্যহিক জীবনে তথ্য ও প্রযুক্তি) || Class Seven, ICT, Chapter 1

 সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন: 
১। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কী? বর্ণনা দাও।
উত্তর: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এমন একটি প্রযুক্তি যেগুলো আমাদের সবার জীবনেই কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলেছে। পৃথিবীতে মনে হয় একজন মানুষকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কোনো না কোনোভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেনি কিংবা তার জীবনে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি কোনো না কোনো পরিবর্তন আনে নি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শুধু যে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে বড় বড় বিষয়ে কিংবা আন্তর্জাতিক জগতে ব্যবহার হয় তা নয় একেবারে সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনেও সেটি ব্যবহার হয়।

২। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার লিখ।
উত্তর: দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির নানামুখী ব্যবহার রয়েছে। এরকম কয়েকটি ব্যবহার নিচে দেওয়া হলো:
১. মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টাকা পাঠানো এবং গ্রহণ।
২. মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই পরীক্ষার ফলাফল জানা।
৩. অনলাইন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে ঘরে বসেই চাকরির দরখাস্ত করা এবং প্রবেশ নামানো।
৪. অনলাইন টিকেটিং সিস্টেম এর মাধ্যমে ঘরের বাইরের না গিয়েই বা স্টেশনে না গিয়েই ট্রেনের এবং প্লেনের টিকিট কিনতে পারা। 
৫. অনলাইনে ইন্টারনেট এর সহায়তায় সব ধরনের পত্রিকা (যা ইন্টারনেটে থাকে) পড়তে পারা।
৬. ইন্টারনেট - এ ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্যের অর্ডার দেওয়া এবং বিল পে করা।

৩। ই - বুক রিডার বলতে কী বুঝ? 
উত্তর: ই-বুক রিডারের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক বুক রিডার। ই-বুক রিডার হচ্ছে ই-বুক পড়ার একটি সফটওয়্যার। ই-বুক রিডারে সহস্রাধিক বই ডাউনলোড করে রাখা যায়। পরবর্তীতে ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো বই ওপেন করে সাধারণ বইয়ের মতো পড়া যায়। বইয়ের মতো এখানে পৃষ্ঠা উল্টানো যায় । প্রয়োজনে যেকোনো পৃষ্ঠায় চলে যাওয়া যায়।

৪। জিপিএস কী? এর কাজ লিখ।
উত্তর: যে যন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো জায়গার অবস্থান বের করা যায় সেই যন্ত্রকে জিপিএস বলে। GPS এর পূর্ণ নাম Global Positioning System. গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে আমাদের পথঘাট চিনতে হবে। কেউ যদি পথঘাট চিনতে না পারে তাহলে সে কেমন করে গন্তব্যে পৌছবে। অথচ মজার ব্যাপার হল কোথাও যেতে হলে এখন কাউকে পথঘাট চিনতে হয় না পৃথিবীটাকে ঘিরে অনেক উপগ্রহ ঘুরছে তারা পৃথিবীতে সংকেত পাঠায়, সেই সংকেতকে বিশ্লেষণ করে যে কোনো মানুষ বুঝে ফেলতে পারে সে কোথায় আছে। তার সাথে একটা জায়গার ম্যাপকে জুড়ে দিতে পারলেই একজন মানুষ যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারবে। 

আজকাল নতুন সব গাড়িতেই জিপিএস লাগিয়ে দেওয়া হয় কোথায় যেতে হবে সেটি জিপিএস - এ ঢুকিয়ে দিলে জিপিএস গাড়ির ড্রাইভারকে সঠিক পথ বাতে দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে। ড্যাহিক্যাল ট্র্যাকারের মাধ্যমে যেসব বিষয় জানা যাচ্ছে সেগুলো হল, গাড়ির বর্তমান অবস্থান, কোন রাস্তা দিয়ে চলছে, গাড়ির গতিবেগ কত, গাড়িটি কোন জায়গা থেকে কোন জায়গায় যাচ্ছে এবং গাড়িটি কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করছে। এছাড়াও প্রয়োজনে গাড়ির ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ ও চালুর ব্যবস্থা এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী রিপোর্ট প্রদান করা যাবে।

৫। ল্যাপটপ কী? ল্যাপটপে দৈনন্দিন কি কি কাজ করা যেতে পারে? 
উত্তর: ল্যাপটপ (Laptop) শব্দের অর্থ হচ্ছে কোলের উপর। সাধারণত যাত্রা পথে কোলের উপর রেখে এ জাতীয় কম্পিউটারে কাজ করা যায় বলে এর নাম রাখা হয়েছে ল্যাপটপ কম্পিউটার। এটা দেখতে অনেকটা ব্রিফকেসের মতো। এটা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজে বহন করা যায়। ডেস্কটপ কম্পিউটারে যে কাজ করা যায় ল্যাপটপ কম্পিউটার ব্যবহার করেও সে সকল কাজ করা যায়। ইন্টারনেটে ল্যাপটপের মাধ্যমে ই-মেইল প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়। গান শুনা যায়। ই-বুক রিডারে বই পড়া যায়। ইন্টারনেটে খাবারের অর্ডার দেওয়া যায়। কম্পিউটারে পৃথিবীর খবরাখবর নেয়। ট্রেনের টিকেট বুক করা যায়। কম্পিউটার গেম খেলা যায়।

৬। ভার্চুয়াল অফিস কী? এই অফিসের বর্ণনা দাও।
উত্তর: যারা কাজ করছে তারা স্বশরীরে কেউ অফিসে নেই কিন্তু অফিসের কাজ চলছে- এরকম অফিসের নাম হচ্ছে ভার্চুয়াল অফিস। ১৯৮৩ সালে প্রথম এটা নিয়ে আলোচনা হয় আর ১৯৯৪ সালে প্রথম এ ধরনের একটা অফিস তার কাজ শুরু করে। সব অফিসকেই যে ভার্চুয়াল অফিস বানানো যাবে তা নয়। কিন্তু যেগুলো বানানো যাবে সেখানে অনেক লাভ। প্রথমত অফিসের জন্যে বড় বিল্ডিং করতে হবে না। রাস্তাঘাটের ট্রাফিক জ্যামের সাথে যুদ্ধ করে কাউকে অফিসে আসতে হয় না। বাসায় বসে কাজ করতে পারবে বলে অফিসের কাজের পাশাপাশি বাসার কাজকর্মও করতে পারবে। অফিসে গেলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করতে পারে কিন্তু বাসায় বসে কাজ করলে অফিসের সময়ের বাইরেও অনেক কাজ করা সম্ভব। 

কাজেই ভার্চুয়াল অফিসের কাজকর্ম সাধারণ অফিস থেকেও বেশি হতে পারে। সাধারণ অফিসে যারা কাজ করে তাদেরকে অফিসের কাছাকাছি থাকতে হয়। ভার্চুয়াল অফিসে যেহেতু কাউকে স্বশরীরে থাকতে হয় না তাই তারা যেখানে ইচ্ছে সেখানে থাকতে পারে । কাজেই এক অফিসের একেকজন হয়তো একেক শহরে থাকে। উঠে কাজ শুরু করে দিল। যার অর্থ অফিসটা চব্বিশঘণ্টা চলছে।

৭। ভার্চুয়াল অফিসের সুবিধাগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর: ভার্চুয়াল অফিসের সুবিধাগুলো হলো— 
১. অফিসের জন্যে বড় বিল্ডিং করতে হবে না।
২. রাস্তাঘাটের ট্রাফিক জ্যামের সাথে যুদ্ধ করে কাউকে অফিসে আসতে হবে না।
৩ . বাসায় বসে কাজ করতে পারবে বলে অফিসের কাজের পাশাপাশি বাসার কাজকর্মও করতে পারবে।
৪. অফিসে গেলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করতে পারে কিন্তু বাসায় বসে কাজ করলে অফিসের সময়ের বাইরেও অনেক কাজ করা সম্ভব।
 ৫. সাধারণ অফিসে যারা কাজ করে তাদেরকে অফিসের কাছাকাছি থাকতে হয়। ভার্চুয়াল অফিসে যেহেতু কাউকে সশরীরে থাকতে হয় না তাই তারা যেখানে ইচ্ছা সেখানেস থাকতে পারে। কাজেই এক অফিসের একেকজন হয়তো একক শহরে থাকে।

পৃথিবীটা যেহেতু তার অক্ষের উপরে তাই এক পৃষ্ঠে যখন দিন তখন পৃথিবীর অন্য পৃষ্ঠে রাত। দিনের বেলা হয়তো একদল অফিস করে ঘুমাতে গেল , তখন পৃথিবীর অন্য পৃষ্ঠের অন্য দল ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করে।


৮। ই-ক্লাস রুম কী? 
উত্তর: ই-ক্লাস রুম হলো ইলেকট্রনিক ক্লাস রুম। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-ক্লাস রুম তৈরি হচ্ছে, একজন শিক্ষক তার ক্লাসরুমে পড়াবেন, সারা দেশের অসংখ্য ছাত্র তার কাছে পড়বে।

৯। সামাজিক যোগাযোগ সাইট কী? কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ সাইটের নাম লিখ।
উত্তর: সামজিক যোগাযোগের সাইট হলো যোগাযোগের একটি মাধ্যম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের সামাজিক যোগাযোগকে দ্রুত, আকর্ষণীয় এবং কার্যকরী করে তুলেছে। ইন্টারনেটে গড়ে উঠেছে বেশকিছু সামজিক যোগাযোগের সম্পূর্ণ সাইট। নিজের ভাল লাগা মন্দ লাগা অনুষ্ঠানাদি, চাকরিতে প্রমোশন, সন্তানাদির বিয়ে ইত্যাদি নানা বিষয়ের তথ্য, ছবি কিংবা ভিডিও বিনিময় করা যায় এগুলোর যে কোনো একটি থেকে। বর্তমানে প্রায় শতাধিক এরকম ওয়েবসাইট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ফেসবুক, গুগুল প্লাস, টুইটার, জোম্পা, মাইস্পেস, এগুলো খুবই জনপ্রিয় । পৃথিবীর প্রায় সকল ভাষাভাষী লোক এ সাইটগুলো ব্যবহার করে।

১০। প্রোফাইল কী? 
উত্তর: ফেসবুক সাইটে প্রত্যেক ব্যবহারকারী তার পরিচিতিমূলক একটি বিশেষায়িত ওয়েবপেইজ চালু করতে পারে। এটিকে বলা হয় ব্যবহারকারীর প্রোফাইল। ব্যবহারকারী তার নিজের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য, তার ভালোলাগা মন্দ লাগার বিষয়গুলো ইত্যাদি তার প্রোফাইলে প্রকাশ করতে পারে। এরপর একজন তার প্রোফাইল থেকে ফেসবুকে তার বন্ধুদের খুঁজে বের করে।

১১। ল্যাপটপ, ভার্চুয়াল অফিস, ই-ক্লাস রুম, প্রোফাইল, ভোটিং মেশিন বলতে কী বুঝ?
উত্তর: ল্যাপটপ: ল্যাপটপ শব্দের অর্থ হচ্ছে কোলের উপর। সাধারণত যাত্রা পথে কোলের উপর রেখে এ জাতীয় কম্পিউটারে কাজ করা যায় বলে এর নাম রাখা হয়েছে ল্যাপটপ।

ভার্চুয়াল অফিস: অফিসে যারা কাজ করছে তারা স্বশরীরে কেউ অফিসে নেই কিন্তু অফিসের কাজ চলছে এরকম অফিসের নাম হচ্ছে ভার্চুয়াল অফিস।

ই-ক্লাস রুম: ই-ক্লাস রুম হলো ইলেকট্রনিক ক্লাস রুম।

প্রোফাইল: ফেসবুক বা অনুরূপ সাইটগুলোতে প্রত্যেক ব্যবহারকারী তার পরিচিতিমূলক একটি বিশেষায়িত ওয়েবপেইজ চালু করতে পারেন। এটিকে বলা হয় ব্যবহারকারীর প্রোফাইল।

ভোটিং মেশিন: যে মেশিনের মাধ্যমে বোতাম চেপে ভোট দেওয়া, গণনা করা এবং নির্বাচনের সময় শেষে মুহূর্তের মধ্যে ফলাফল বের করা যায় তাকে ভোটিং মেশিন বলা হয়।

১২। ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধাগুলো আলোচনা কর।
উত্তর: ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের চারপাশে প্রায় সবার কাছেই এখন মোবাইল টেলিফোন রয়েছে, যে কেউ এখন ইচ্ছে করলে একজনের সাথে মোবাইল টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারে। যেকোনো মানুষের সাথে টেলিফোন যোগাযোগ করতে পারার কারণে আমাদের জীবনের মান এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। অনেক কম পরিশ্রমে এখন অনেক কিছু করা যায় । দূরে কোথায় গিয়ে কোনো খবর পাঠাতে যে পরিমাণ খরচ হতো এবং সময় ব্যয় করতে হতো এখন তা অনেক কম সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে তা সম্ভব হচ্ছে।

১৩। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম কী? শিক্ষাক্ষেত্রে -এর ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর: সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত না থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর দূর-দূরান্তে বসে ভিডিও কনফারেন্সিং-এ যুক্ত থেকে ক্লাসে অংশগ্রহণ করাই হলো ভার্চুয়াল ক্লাসরুম। অর্থাৎ একজন শিক্ষক একটি নির্দিষ্ট ক্লাসরুমে পড়াবেন, সারা পৃথিবীর শিক্ষার্থীরা অনলাইনে যুক্ত হয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে। বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেসব শিক্ষার্থী ভালোমানের শিক্ষকের অভাবে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয় শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সেসব শিক্ষার্থীরা অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিশ্বের নামকরা শিক্ষকের লাইভ ক্লাসরুমে অংশগ্রণ করে সহজ সমাধান পেতে পারে। শিক্ষাকে আনন্দময় ও সহজবোধ্য করে সারা পৃথিবীর শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরন করতে শিক্ষাক্ষেত্রে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এর গুরুত্ব অনেক বেশি।

১৪। ঘরে বসে টাকা উপার্জন সম্ভব— বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে আজকাল ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কাজকর্ম এখন ঘরে বসেই করা যাচ্ছে। অনেক তরুণ-তরুণী অফিসে না গিয়ে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ব্যক্তি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এ ধরনের কাজ করতে একটা কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের সংযোগ দরকার তার সাথে দরকার প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা। এভাবে একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ নিজের ঘরে, বা যেকোনো জায়গায় বসে বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।

১৫। ডোটিং মেশিন কী? এর ব্যবহার লিখ।
উত্তর: গণতান্ত্রিক দেশে সবকিছুই ঠিক করা হয় নির্বাচন করে, নির্বাচনে ভোট দিতে হয়। ভোট দেওয়ার জন্যে দরকার ব্যালট পেপার। অর্থাৎ কাগজের প্রয়োজন হয়। কাগজে প্রার্থীদের নাম এবং মার্কা ছাপা থাকে। ভোটারদের সেখানে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ফেলতে হয়। নির্বাচনের শেষে সেগুলো গুণতে হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে এরকম কোনো সমস্যা নেই। যারা ভোট দেবে তারা সরাসরি মেশিনের বোতাম চেপে ভোট দেয় এবং নির্বাচনের সময় শেষ হলে মুহূর্তের মধ্যে ফলাফল বের হয়ে যায়। আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এ ইলেকট্রনিক মেশিন দিয়ে করা শুরু হয়ে গেছে।

১৬। কাগজবিহীন ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে লিখ।
উত্তর: এক সময় ভর্তি পরীক্ষার কাজটি ছিল খুব কঠিন, শিক্ষার্থীদের অনেক দূর থেকে দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসে, ট্রেন, জাহাজে যেতে হতো, লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তির ফর্ম আনতে হতো। সেই ফর্ম পূরণ করে আবার তাদের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হতো, ক্যাশ টাকা জমা দিতে হতো, ফর্ম জমা দিয়ে পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে হতো, সেই প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ হলে ফলাফল প্রকাশিত হতো— খবরের কাগজে সেই ফলাফল দেখে যারা সুযোগ পেতো তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। 
২০০৯ সালে শাৰ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করল তারা পুরো প্রক্রিয়াটি তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে শেষ করবে— এবং এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোথাও কোনো কাগজ ব্যবহার হবে না। ভর্তির রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনো প্রার্থীকে তার ঘর থেকেই বের হতে হবে না। কাগজবিহীন এই ভর্তি প্রক্রিয়াটি ২০০৯ সালের ২১ আগস্ট দেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন এবং তারপর থেকে এই দেশের প্রায় সকল স্কুল , কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময় এভাবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয় । সবাই নিজের ঘরে বসে শুধুমাত্র মোবাইল টেলিফোন ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে বিশেষ একটি কর্মযজ্ঞ হয়ে গেলো পানির মতো সহজ।

১৭ । কর্মক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের ভূমিকা লেখ।
উত্তর : শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক বড়-বড় জিনিস বা ক্ষুদ্রাকৃতির জিনিস দ্রুত সময়ে তৈরি করতে হয়। যেমন বড় বড় জাহাজ বানাতে হলে বিশাল বিশাল ধাতব টুকরোকে নির্দিষ্ট আকারে কেটে তারপর ওয়েল্ডিং করতে হয়। সেখান থেকে যে তীব্র আলো বের হয় কেউ যদি সোজাসুজি সেদিকে তাকায় তাহলে তার চোখ পাকাপাকিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। যারা ওয়েল্ডিং করে তাদের বিশেষ চশমা পরে কাজ করতে হয়। সেখানে প্রচণ্ড তাপের সৃষ্টি হয়, ধাতব টুকরো ছিটকে ছিটকে পড়ে। অর্থাৎ এটি বেশ বিপজ্জনক কাজ। 

এ ধরনের বিপজ্জনক কাজগুলো আসলেই আস্তে আস্তে মানুষ নিজে না করে রোবটদের দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছে। মানুষেরা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়। একঘেয়ে কাজ করতে ইচ্ছেও করে না। কিন্তু রোবটরা ক্লান্ত হয় না। একঘেয়ে কাজটি নিয়ে তারা কখনো অভিযোগও করে না। তাই পৃথিবীর বড় বড় কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে আর মানুষ নেই। কাজ করে রোবটরা। মানুষেরা বড় জোর দেখে কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না। একঘেয়ে বিপজ্জনক কাজগুলো মানুষ থেকে রোবটেরা অনেক ভালোভাবে করতে পারে। কাজেই যত দিন যাচ্ছে ততই এই কাজগুলো মানুষের বদলে রোবট করছে— তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে।

১৮। সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে আইসিটির ভূমিকা উল্লেখ কর।
উত্তর: আমরা সবাই সমাজে থাকি। বাবা, মা, দাদা, দাদী, আত্মীয়স্বজন , বন্ধুবান্ধব এবং বাকি সবাইকে নিয়ে আমাদের সমাজ। এখানে কেউ চাকরি করে, কেউ ব্যবসা করে, কেউ শিক্ষার্থী, কেউবা বাসায় থাকে। সবার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আর দেওয়া-নেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি সমাজ এগিয়ে চলে। সমাজের নানা প্রয়োজনে আমরা নানা ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করি। একসময় যোগাযোগ বলতে এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে যেতে হতো খবর দিতে। পরে দেখা গেলো ঢোল বাজিয়েও খবর দেয়া যায়। মানুষ যখন লিখতে শিখল তখন সে চিঠি লিখে মনের ভাব আর খবর পাঠতে শুরু করল। গড়ে উঠল ডাক বিভাগ, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চিঠি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা। টেলিগ্রাফ আর টেলিফোনের আবিষ্কার এই ব্যাপারগুলোকে আরও সহজ করে ফেললো। 

আর এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সামাজিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারগুলোকে নিয়ে এসেছে হাতের মুটোয়। আইসিটির প্রচলিত হাতিয়ারগুলোর পাশাপাশি এখন ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের অনেক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে যা এই সামাজিক কর্মকাণ্ড সহজভাবে করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রণ, বিশেষ দিবসসমূহে শুভেচ্ছা বার্তা, স্মৃতি সংরক্ষণ ও বিনিময় ইত্যাদি সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে আইসিটি গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে।

১৯। সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহারের সুবিধা লেখ।
উত্তর: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের সামাজিক যোগাযোগকে দ্রুত আকর্ষণীয় এবং কার্যকরী করে তুলেছে । সামাজিক যোগাযোগের সাইটসমূহের ব্যবহারগুলো 
হচ্ছে—
১. সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা এবং সামাজিক বন্ধন অটুট রাখা।
২. তথ্য আদান-প্রদান করা।
৩. ছবি, ভিডিও আদান-প্রদান করা।
৪. নিজের মতামত বন্ধুদের জানানো এবং বন্ধুদের মতামত জানা।
৫. সামাজিক আন্দোলন বা বিপ্লব গড়ে তোলা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url