নতুন শিক্ষা কারিকুলামের উদ্দেশ্য।। Natuna sikkha karikulamer uddesha
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম কী?
শিক্ষার কারিকুলাম হলো একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা বা আদেশ, যা শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত শেখানোর জন্য পাঠ্য এবং কার্যক্রম সম্পর্কে উপায়ের প্রদর্শন। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ অভিজ্ঞান উপার্জন করতে সাহায্য করতে ডিজাইন করা হয়।
এটি মূলত একটি বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হয়, কিন্তু কিছু সময় অন্যান্য শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া উপযোগী হতে পারে যেমন অনলাইন শিক্ষা বা স্বনিযোজিত শেখা।
এটি একটি শিক্ষা প্রস্তুতি এবং উন্নত করার জন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং প্রতিষ্ঠান অথবা শিক্ষকের উদ্দীপ্ত গুণগত মানকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
শিক্ষা কারিকুলাম কত প্রকার?
শিক্ষা কারিকুলাম বিভিন্ন দেশে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিন্নভাবে করা হয়, তবে সাধারিতঃ তিনটি প্রকারের শিক্ষা কারিকুলাম প্রচলিত থাকতে পারে:
1. অনুসন্ধানমূলক বা বাস্তবায়িত কারিকুলাম (Inquiry-Based or Experiential Curriculum): এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীদেরকে স্বজ্ঞানের আধারে শেখানো হয় এবং তাদেরকে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞ এবং অনুভূতির মাধ্যমে শেখানো হয়।
2. নির্দিষ্ট আসন্ন বা পাঠ্যচর্যা কারিকুলাম (Prescriptive or Textbook Curriculum): এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীদেরকে নির্দিষ্ট বই বা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শেখানো হয় এবং পাঠ্যসূচির মধ্যে নির্দিষ্ট বিষয়গুলি অনুসরণ করতে হয়।
3. সম্মিলিত বা মিশিত কারিকুলাম (Integrated or Mixed Curriculum): এই কারিকুলামে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সংযোজন বা মিশানো হয়, এমনকি একটি বিষয়ের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ের উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রণালী এবং স্তরে এই কারিকুলাম প্রকারগুলি ব্যবহার করা হতে পারে।
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বিষয়সমূহ:
নতুন শিক্ষাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে আটটি বিষয় আছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। বাকি তিনটি বিষয় শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা।
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়সমূহ:
১. বাংলা
২. ইংরেজি
৩. গণিত
৪. জীবন ও জীবিকা
৫. সামাজিক বিজ্ঞান
৬. বিজ্ঞান
৭. ডিজিটাল প্রযুক্তি
৮. ভালো থাকা
৯. ধর্মশিক্ষা
১০. শিল্প ও সংস্কৃতি
নতুন তৈরি করা বইগুলোতে পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে। বইগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে যেখানে ১০টি স্কিলের উপর গুরুত্ব দেয়া হবে। এই ১০টি স্কিল হচ্ছেঃ Critical thinking, Creative thinking, Problem solving, Decision making, Self-management skill ইত্যাদি।
এই বিষয়গুলো স্কুলে পড়াতেও হবে ভিন্নভাবে। আর শিশুদের মূল্যায়নের অনেকটাই হবে স্কুলে বিভিন্ন একটিভিটির মাধ্যমে। বার্ষিক পরীক্ষা বা পাবলিক পরীক্ষার উপর জোর কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।
নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সম্পর্কে বিতর্কের ব্যাপারে তথ্য হাস্যকর হতে পারে। এটি বিশেষভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং মাধ্যমের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত পর্যাপ্ত মৌল্যবান বস্তু আছে কিনা তা উপর ভিত্তি করে।
একটি ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এমন কারিকুলাম সমর্থন বা বিরোধ করতে পারে, কারণ এটি বিভিন্ন মডেল ও পরিচালনায়িত শিক্ষা উপপাদ্য ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনও কারিকুলাম যেহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির উপর ভিত্তি করতে পারে, তাতে কিছু সম্প্রদায় মনে করতে পারে যে, এতে বিনা মর্যাদায় মানুষের জীবন ও সমাজের বিভিন্ন দিক মোকাবেলা হয়নি।
তবে, কারিকুলামের পরিবর্তন হোক অথবা সংশোধন হোক, তা শিক্ষার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিলিত হতে হবে এবং সমাজের একত্রিতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটি শিক্ষার নতুন দক্ষতা এবং উদ্দীপনার একটি অদৃশ্য অংশ যা পুরাতন বোঝাই হয়নি, সেটা সত্যিকারের বিশ্বের প্রতি তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
নতুন শিক্ষা কারিকুলামের ভালো দিক
নতুন শিক্ষা কারিকুলামের কয়েকটি ভালো দিক রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের উন্নত শেখার দিকে উন্নত যোগাযোগ ও সমাধান ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে:1. অনুভূতি ও অভিজ্ঞান ভিত্তিক শেখার পদ্ধতি: শিক্ষার্থীদেরকে কৌশল বা ক্রিয়াশীলতা উন্নত করতে এবং তাদের জ্ঞান প্রাপ্তির উপর ভিত্তি তৈরি করতে অনুভূতি ও অভিজ্ঞান ভিত্তিক শেখার পদ্ধতি এনে দেওয়া হয়েছে।
2. সৃজনশীল মানবিক তথ্যসূত্র ব্যবহার: শিক্ষার্থীদেরকে সৃজনশীলভাবে মানবিক তথ্য সংগ্রহ করা, প্রক্রিয়াজাতকরণ করা, এবং সোশ্যাল ও ভৌত বিজ্ঞানে সৃজনশীল হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
3. প্রযুক্তিপরক শেখা: নতুন কারিকুলামে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়িয়েছে, শিক্ষার্থীদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে এটি ব্যবহার করতে শেখানো হয়েছে।
- 4. গবেষণা ও উদ্ভাবন: শিক্ষার্থীদেরকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের দিকে আগ্রহ জোরানো হয়েছে, তাতে তাদের বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য হয়েছে।
- 5. সোশ্যাল ও মানবিক বিজ্ঞান: শিক্ষার্থীদেরকে সোশ্যাল ও মানবিক বিজ্ঞানে প্রভৃতি বা বুঝানো হয়েছে, যাতে তারা পৃথিবীতে অভিজ্ঞান হতে এবং সমাজের সাথে মিলিত হতে পারে।
- নতুন কারিকুলাম এই দিকগুলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে আত্মনির্ভরশীল, বুদ্ধিমান, এবং সৃজনশীল করতে সাহায্য করতে পারে।
- নতুন শিক্ষা কারিকুলামের উদ্দেশ্য
- নতুন শিক্ষা কারিকুলামের মূল উদ্দেশ্য হলো ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণ বিকাশ ও উন্নত করা। এটি বিশেষভাবে প্রযুক্তিগত, সামাজিক, বৈচিত্র্যমূলক এবং নৈতিক দিকে মোকাবিলা করতে আবদ্ধ হয়। নতুন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের চিন্তার ক্ষমতা, সমাধান ক্ষমতা, সম্পর্ক ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যমূলক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, এবং পেশাদার জীবনে সফল হতে সাহায্য করতে, নতুন কারিকুলাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সীমানার বাইরে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের একজন নাগরিক হিসেবে পূর্ণসম্পূর্ণ উপস্থাপনা করা স্ত্রী-পুরুষ, ব্যক্তির অধিকার ও দায়িত্ব, গ্রাহক ও উদ্যোক্তা হিসেবে দক্ষতা উন্নত করার জন্য প্রস্তুত করে।
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে অভিভাবকদের করণীয়
1. শিক্ষার সমর্থন: অভিভাবকদের উপস্থিতিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সুস্থ সমর্থন তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করতে ও শিক্ষার অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে অভিভাবকদের অনুমতি দিতে হবে।
2. শিক্ষার পর্যায়ে সহায়ক: অভিভাবকদের কাছে নতুন কারিকুলামের বৃদ্ধি এবং পরিবর্তনের সাথে মিলিত হওয়া প্রয়োজন। তাদেরকে শিক্ষার লক্ষ্য, মৌলিক ধারাবাহিকতা এবং শিক্ষার নতুন পদ্ধতিতে কীভাবে সাহায্য করতে পারে তা জানতে উৎসাহিত করতে হবে।
3. শিক্ষক-অভিভাবক সম্প্রদায়: শিক্ষক-অভিভাবক সম্প্রদায় তৈরি করতে হবে, যাতে একটি সুস্থ শিক্ষা পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এই সম্প্রদায়টির মাধ্যমে অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান এবং বৃদ্ধি হতে পারে।
4. প্রতিষ্ঠানে অবদান: অভিভাবকদেরকে বিদ্যালয়ের কাছে অবদান রাখতে উৎসাহিত করা হবে, সেইসাথে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
5. শিক্ষার অনুসন্ধানে সাহায্য: নতুন শিক্ষা পদ্ধতি, সংস্থান, বই, এবং অন্যান্য শিক্ষার সাধনায় অভিভাবকদের কাছে সাহায্য করতে হবে।
6. শিক্ষার প্রক্রিয়ার মৌলিক বৈশিষ্ট্য জানতে অনুমতি দিতে: শিক্ষার প্রক্রিয়া এবং শিক্ষকের প্রদর্শন জানতে অভিভাবকদেরকে অনুমতি দিতে হবে, এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এই মৌলিক করণীয়গুলি পূর্বাভাস করতে পারে নতুন শিক্ষা কারিকুলামে অভিভাবকদের জন্য।