ই - গভর্ন্যান্স কি? || What is E-governance?
ই - গভর্ন্যান্স ও বাংলাদেশ
গুড গভর্ন্যান্স বা সুশাসনের জন্য দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রচলনের ফলে সরকারি ব্যবস্থাসমূহকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এর ফলে নাগরিকের হয়রানি ও বিড়ম্বনার অবসান ঘটে এবং দেশে সুশাসনের পথ নিষ্কণ্টক হয়। শাসন ব্যবস্থায় ও প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগই হচ্ছে ই - গভর্ন্যান্স।
একটা সময় ছিল যখন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করা ছিল পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য এক বিড়ম্বনার ব্যাপার। বিশেষ করে প্রধান প্রধান শহর থেকে দূরবর্তী গ্রামে অবস্থানরতদের পক্ষে এটি ছিল দুষ্কর। মাত্র দুই - দশক আগেও এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সাত দিন পরেও অনেকেই তাদের ফলাফল জানতে পারত না। কিন্তু বর্তমানে ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা যায় । ফলে , ফলাফল জানার যে বিড়ম্বনা ছিল সেটির অবসান হয়েছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ই - গভর্ন্যান্সের আর একটি উদাহরণ হলো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য মোবাইল ফোনে আবেদন করার সুবিধা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , পূর্বে যশোর জেলায় একজন শিক্ষার্থী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক হলে তাকে অনেকগুলো কাজ সম্পন্ন করতে হতো। এজন্য নিজে অথবা প্রতিনিধিকে সিলেট গিয়ে একবার ভর্তির আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং পরে আবার আবেদনপত্র জমা দিতে হতো। বর্তমানে মোবাইল ফোনেই এই আবেদন করা যায়। ফলে , ভর্তিচ্ছুদের ভর্তির আবেদন ফরম জোগাড় ও জমা দেওয়ায় জন্য শহর থেকে শহরে ঘুরতে হয় না।
আবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সকল সেবা স্বল্প সময়ে , কম খরচে এবং ঝামেলাহীনভাবে পাওয়ার জন্য চালু হয়েছে জেলা ই - সেবা কেন্দ্র। এর ফলে আগে যেখানে কোনো সেবা পেতে ২/৩ সপ্তাহ লাগতো , সেটি এখন মাত্র ২-৫ দিনে পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয় , তথ্যের ডিজিটালকরণের ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় কম লাগছে। সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন দলিল , পর্চা প্রভৃতির নকল প্রদানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সক্ষমতাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাগরিক যন্ত্রণার আর একটি উদাহরণ হলো পরিসেবাসমূহের বিল পরিশোধ। বিদ্যুৎ , গ্যাস , পানি ইত্যাদির বিল পরিশোধের গতানুগতিক পদ্ধতি খুবই সময়সাপেক্ষ এবং যন্ত্রণাদায়ক , কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ কর্মময় দিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেই নাগরিককে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ফোন কিংবা অনলাইনে এই বিল পরিশোধ করা যায়। কেবল বিদ্যুৎ নয় , পানি ও গ্যাসের বিলও এখন অনলাইনে ও মোবাইল ফোনে পরিশোধ করা যায়। গভর্ন্যান্সের মূল বিষয় হলো নাগরিকের জীবনমান উন্নত করা এবং হয়রানিমুক্ত রাখা।
ই - কমার্স
ইলেকট্রনিক কমার্সকেই সাধারণ অর্থে ই - কমার্স ( e - commerce or eCommerce ) বলা হয়। ইন্টারনেট বা অন্য কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় - বিক্রয় , সরবরাহ , ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি কাজকে সম্মিলিতভাবে ই - কমার্স বলে। পণ্য বা সেবার উপাদান , মার্কেটিং , ডেলিভারি , সার্ভিসিং , মূল্য পরিশোধের অনলাইন প্রক্রিয়াসমূহ সামগ্রিকভাবে ইলেকট্রনিক কমার্সের অন্তর্ভূক্ত। ১৯৬০ সালে ইলেকট্রনিক ডেটা ইন্টারচেঞ্জ ( EDI ) - এর মাধ্যমে ই - কমার্সের যাত্রা শুরু হয়। ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে দ্রুত ই - কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বিশেষ করে ১৯৯৫ সালে অ্যামাজন ও ই - বে নামের ই - কমার্স ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরুর মাধ্যমে ই - কমার্সের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ২০১০ সালের পরবর্তীতে মোবাইলের ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে ই - কমার্সের পালে নতুন করে হাওয়া লাগে । এক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিশেষ করে ফেসবুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
ই - কমার্সের সুবিধা
২. ব্যবসায় পরিচালনায় খরচ কমায় ।
৩. ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সহজেই ক্রেতার কাছে পৌঁছানো যায়।
৪. পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন করে।
৫. কম খরচে উন্নত সেবা প্রদান করে।
৬. বাহ্যিক সেটআপ ছাড়াই ব্যবসা করা যায়।
৭. সহজেই ব্যবসা শুরু এবং ব্যবস্থাপনা করা যায়।
৮. ক্রেতা সশরীরে না গিয়ে প্রোডাক্ট নির্বাচন করতে পারে।
ই - কমার্সের অসুবিধাসমূহ
২. উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ ব্যয়বহুল।
৩. মাত্রাতিরিক্ত অর্ডার সরবরাহের সমস্যা ।
৪. দূরবর্তী স্থানের অর্ডার ক্ষেত্রবিশেষে ব্যয়বহুল ।
৫. আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে সমস্যা।
৬. লেনদেনের নিরাপত্তা সমস্যা।
৭. প্রতারণার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি।
৮. সনাতন পদ্ধতির ব্যবসায়ে ক্ষতি।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করা হলে , তাকে অনলাইন শপিং - ও বলা হয়ে থাকে। ইংল্যান্ডের সাসেরে মাইকেল অন্ডরিচ (Michael Aldrich) ১৯৭৯ সালে অনলাইন শপিং পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে ক্রেতা ঘরে বসেই যে কোনো পণ্য পছন্দ ও ক্রয় করতে পারে এবং একই সাথে ঘরে বসেই ঐ ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারে । ফলে ক্রেতাকে শারীরিকভাবে কোথাও যাওয়ার পরিশ্রম করতে হয় না এবং অর্থ বহনে অনিরাপদ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না।
ঘরে বসেই পণ্য ক্রয় - বিক্রয় , নিরাপদে তার মূল্য পরিশোধ করার সুবিধা এবং পণ্য বিপণন ও ক্রয় বিক্রয়ের কাজটি সহজ হবার কারণে আজকাল ঘরে বসে ই - কমার্স বা অনলাইন শপিং - এর মাধ্যমে কেনাকাটা অধিকতর সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালিত হবার কারণে ই - কমার্সকে ব্যবসায় বাণিজ্যের আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করা হয় । ফলে সহজেই এক দেশের মানুষ অন্য দেশের পণ্যের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে এবং ইন্টারনেট ও ই - কমার্সের সুফল নিয়ে ঘরে বসেই বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় - বিক্রয় করতে পারছে। এজন্যই ই - কমার্সকে বিশ্ব্যায়ের অন্যতম সফল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
মোবাইল কমার্স: যে কোনো স্থান থেকে তারবিহীন সুবিধার মাধ্যমে অর্থাৎ মোবাইলের মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে ই - কমার্সের সুবিধা পৌঁছানোর ধারণাটি মোবাইল কমার্স বা এম কমার্স নামে পরিচিত । মোবাইল কমার্স কর্তৃক প্রদত্ত পণ্য ও সেবার মধ্যে রয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর বা মোবাইল মানি ট্রান্সফার , মোবাইল দ্বারা এটিএম এর মাধ্যমে টাকা উঠানো বা মোবাইল এটিএম , মোবাইল এর মাধ্যমে টিকিট কাটা বা মোবাইল টিকেটিং , মোবাইল এর মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম বা মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি।
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ( EFT): ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার হলো কম্পিউটারভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে এক বা একাধিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের একাধিক অ্যাকাউন্ট এর মধ্যে অর্থ স্থানান্তর বা বিনিময় প্রক্রিয়া। মূলত ই - কমার্সের ভিত্তিই হলো এই ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেম। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড - এর মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ বা অর্থ স্থানান্তর , ইলেক্ট্রনিক চেক - এর মাধ্যমে অর্থ উঠানো , ওয়েবসাইট বা ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং - এর মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বা বিনিময় ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার - এর অন্তর্ভুক্ত।