যোগাযোগ কি? || What is Communication?
যোগাযোগ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি দিক হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। মূলত টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার মধ্যে বহুল ব্যবহৃত যন্ত্র হচ্ছে ল্যান্ডফোন , মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াক্টিকি প্রভৃতি। এসব যন্ত্র যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। ইন্টারনেট, ই - মেইল, মোবাইল, ফ্যাক্স , এসএমএস, এমএমএস , ভিডিও কনফারেন্সিং , স্কাইপি , হোয়াটস অ্যাপ , ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ইমো , ওয়েব ব্রাউজিং , জুম ইত্যাদির দ্বারা মূহুর্তের মধ্যে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমান অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেও ভিডিও কনফারেন্সিং সফটওয়্যার যেমন Zoom meeting ব্যবহার করে যোগাযোগ করে ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত ট্রাফিক লাইন সকল সড়কের সাথে সমন্বয় রেখে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ব্লু - টুথ, ওয়াইফাই ও GPRS পদ্ধতিতে গাড়ীর গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রেলওয়ের টিকিট ব্যবস্থা ও কিছু বাস কোম্পানির টিকেটিং প্রক্রিয়া অনলাইন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এছাড়াও রেডিও ও টেলিভিশন বিভিন্ন তথ্য সম্প্রচার করে যোগাযোগ ব্যবস্থার মানকে উন্নত করতে সাহায্য করছে। ফ্যাক্স , টেলিপ্রিন্টার , কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক মেইল ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কম সময়ে টেক্সট ও ভয়েস মেসেজ করা সম্ভব হচ্ছে।
নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম বর্ণনা করা হলো-
ইন্টারনেট (Interner): বিশ্বকে যুক্ত করার প্রথম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলে ঔপনিবেশিক যুগের টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটারের উদ্ভাবন ঘটে ও ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে ARPANET (Advanced Research Projects Agency Network) নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম দিকে আরপানেটে শুধুমাত্র চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আন্ত:কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা ছিল। ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে International Network থেকে । ইন্টারনেট মানে হলো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে নেট ( Net ) এবং বাংলায় আন্তর্জাল বলা হয়।
অর্থাৎ ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন দেশের কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা ব্যবহারকারী আইপি (Intermel Protocol) ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা আদান - প্রদান করতে পারে। যেমন চিঠি আদান - প্রদানের জন্য ইমেইল সুবিধা, এক দেশ থেকে ভান্য দেশে টেলিফোনের মাধ্যমে কথা বলা, টেলিকনফারেন্সিং ও ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যায়।
বর্তমান ইন্টারনেটকে বিশ্বগ্রামের মেরুদণ্ড বলা হয়। কেননা, ইন্টারনেটের কারণে আজ পৃথিবীর সকল মানুষ এক অদৃশ্য জালের মতো নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে একে অপরের সাথে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করতে পারছে। এখন ইন্টারনেট দুইভাবে পাওয়া যায়। একটি তারযুক্ত ইন্টারনেট ও অপরটি তারবিহীন ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড স্টেটস এর (www.intermerworldstars.com) এর তথ্যানুসারে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪,৫৭৪,১৫০ , ১৩৪ (৪.৫৭ বিলিয়ন এর অধিক) মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৫৮.৬৬ ভাগ।
সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে এশিয়া মহাদেশে সবচে বেশি যা প্রায় ৫০.৩ %। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এর তথ্য মতে, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইবারে সংখ্যা প্রায় ১০৩.২৫৩ মিলিয়ন (যা ১০.৩২৫৩ কোটি)। ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইবার অর্থ হচ্ছে গ্রাহকরা পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন । ব্যবহারকারীর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ৯৫.১৬৮ মিলিয়ন , ওয়াইম্যাক্স ০.০০২ মিলিয়ন , আইএসপি ও পিএসটিএনসহ ৮.০৮৪ মিলিয়ন ব্যবহারকারী আছে।
জিপিএস (GPS): জিপিএস (GPS - Global Positioning System) একটি কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেকোনো আবহাওয়াতে সময়ের সাথে পৃথিবীর যেকোনো স্থির বা চলমান বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা এর প্রধান কাজ। GPS হচ্ছে একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম। GPS এর মাধ্যমে দুটি কাজ করা যায়।
প্রথমত, কোন বস্তু বা ব্যক্তির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারা যায়। আমাদের দেশে জিপিএস দিয়ে গাড়ির অবস্থান নির্ণয় এখন খুব সাধারণ বিষয়।
দ্বিতীয়ত, নিজের অবস্থান থেকে গন্তব্য স্থানের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হল গুগল ম্যাপ। যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তায় জিপিএস - এর বিসেফ (bsafe) নামের অ্যাপসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অ্যাপসের সাহায্যে পছন্দ মতো যতজন খুশি ততজনকে সাথে নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ও নিজেদের মধ্যে লোকেশন শেয়ার করা যায়। তবে এই অ্যাপসটির বড় বৈশিষ্ট্য হলো বিপদের সময় মাত্র একটি অ্যালাম বাটন চাপলে এটি সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে দেবে নেটওয়ার্কে থাকা সকলকে এর অবস্থান জানিয়ে দেবে। শুধু তাই নয়, এটি সাইরেনের মতো শব্দও তৈরি করতে পারবে , আবার ঠিক ওই সময়ে ফোনের পারিপার্শ্বের কথাবার্তা ও ভিডিও ধারণ করে অ্যাপসটি জমা রাখবে বিশেষ অ্যাপসের সার্ভারে। পরে কোনো ধরনের প্রমাণ লাগলে সেগুলো সহজে ব্যবহার করতে পারা যাবে।
ই - মেইল (E - mail): ই - মেইল শব্দের অর্থ হলো ইলেকট্রনিক মেইল বা ডিজিটাল বার্তা যা ইলেকট্রনিক ডিভাইস কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ করে। ১৯৭১ সালে আরপানেটে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পত্রালাপের সূচনা করেন আমেরিকার প্রোগ্রামার রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন ( Raymond Samuel Tomlinson)। তিনিই প্রথম ই মেইল সিস্টেম চালু করেন। দ্রুত ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম হলো ই - মেইল। তথ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবিত নতুন ডাক ব্যবস্থা যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি। খুব দ্রুত ও অল্প সময়ে চিঠিপত্র, অন্যান্য ডকুমেন্ট নির্ভুলভাবে গন্তব্যস্থানে পৌঁছানো যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা , ব্যবসা বাণিজ্য, লাইব্রেরি, ইতিহাস ঐতিহ্য ব্যবহারের জন্য অডিও, ভিডিও, ডকুমেন্ট এমনকি চ্যাটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। একজন ব্যক্তি একই সাথে একাধিক ব্যক্তিকে ই - মেইল করতে পারে।
উইকিপিডিয়া অনুসারে- " Electronic mail or e - mail is a method of exchanging digital message from an author to one or more recipient"
ই - মেইলের জন্য যে উপকরণ প্রয়োজন তা হলো— কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, নোটপ্যাড স্মার্টফোন, মডেম, ইন্টারনেট সংযোগ ও ই - মেইল অ্যাড্রেস। যে ই - মেইল প্রেরণ করবে এবং যার কাছে প্রেরণ করবে উভয়ের ই - মেইল অ্যাড্রেস থাকতে হবে।
ই - মেইল এর দুটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে ব্যবহারকারীর পরিচিতি (User identity) এবং দ্বিতীয় অংশ @ এরপর Domain name থাকে । যেমন- cse11@gmail.com .