সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম || Social Media banner

 সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 

 সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে এমন এক ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফরমকে বুঝানো হয়, যার মাধ্যমে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সাথে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে এবং নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ যে কোনো ধরনের মতামত, আইডিয়া, কার্যকলাপ প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শেয়ার তথা বিনিময়, আলোচনা, বিতর্ক প্রভৃতি চালাতে পারে। নিচে কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ফেসবুক (Facebook): জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর জনক ও মূল উদ্যোক্তা হলেন মার্ক জাকারবার্গ ( Mark Zuckerberg )। ফেসবুকে ফ্রি মেম্বার হয়ে এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সাথে বন্ধুতকরণ, ইচ্ছেমতো দিন - রাত যে কোনো সময় নিজের স্ট্যাটাস আপডেট করা , ব্যক্তিগত বন্ধুদের সাথে মেসেজ আদান - প্রদান ও চ্যাটিং করা যায়। ইচ্ছেমতো নিজের ছবি, ভিডিও, নেটওয়ার্ক অবস্থান প্রভৃতি সবকিছুই ফেসবুকের মাধ্যমে শেয়ার করা সম্ভব। পাশাপশি লাইক বা অন্যান্য রিয়্যাক্ট ও কমেন্টের মাধ্যমে কোনো বিষয়ে জনমত যাচাই করা যায়। বর্তমানে শহুরে শিক্ষিত শ্রেণি থেকে গ্রামের অজ্ঞ কৃষক, প্রায় সবারই নিজের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে । সামাজিক যোগাযোগের জন্য ডেভেলপকৃত এই ভাইরাল মাধ্যমটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাবই সমাজে পরিলক্ষিত হয়। 

ইউটিউব ( Noutube ): ইউটিউব হলো একটি জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েব সাইট। এই সাইটটির প্রথম উদ্যোক্তাদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জার্মানি নাগরিক জাওয়াদ করিম। এর অপর দুজন উদ্যোক্তা ও ডেভেলপার হলেন চ্যান্ড হারলি ও স্টিভ চ্যান। ইউটিউবের অব্যাহত জনপ্রিয়তা দেখে এক পর্যায়ে এই ওয়েবসাইটটি গুগল কিনে নেয়। বর্তমানে এটি গুগলের একটি স্বীকৃত ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক মাধ্যম।

 টুইটার (Twiter): ফেসবুকের মতোই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই সাম্রা যোগাযোগ মাধ্যমটি সর্বাধিক জনপ্রিয়। জ্যাক জোরাস , নোয়া গ্লাস , ইভান উইলিয়ামস ও বিজ স্টোন এর উদ্যোক্তা।

 ইনস্টাগ্রাম (Instagram) : ইন্সটাগ্রাম হলো ফেসবুক, টুইটার, টাম্বলার ও ফ্লিকার - এর মতো অনলাইনে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার একটি সামাজিক নেটওয়ার্কিং পরিষেবা। ইন্সটাগ্রাম - এর মাধ্যমে ছবি ও ১৫ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিও আপলোড করা যায়। প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে , যারা কিনা এখানে নিয়মিত ফটো বা ভিডিও শেয়ার করে থাকে। প্রতিদিন ৭০ মিলিয়ন স্থিরচিত্র ও ভিডিও শেয়ার করা হয় ইন্সটাগ্রাম - এর মাধ্যমে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুফল 

১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে মানুষ সর্বদা নিজের পরিচিতজন , বন্ধু - বান্ধব , আত্মীয় - স্বজনসহ বিশ্বের যে কোনো স্থানে থাকা যে কোনো মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকতে সক্ষম হয়। নিজের সুখ - দুঃখ সমমনা মানুষের সাথে ভিজ্যুয়ালি শেয়ার করার মাধ্যমে এক ধরনের মানসিক সন্তুষ্টি অর্জনে সামাজিক যোগাযোগ একটি অতুলনীয় মাধ্যম।

২. বাণিজ্যিক বিপণন ও প্রসারের ক্ষেত্রে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে সমাদৃত।

৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে ভাইরাল উপায়ে যে কোনো তথ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম।

৪. যে কোনো সামাজিক, পারিবারিক অপরাধ ও অপরাধীকে শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, জনসচেতনতা ও জনমত তৈরিতে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা এখন ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কুফল 

১. বিশ্বব্যাপী এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তিকে ডিজিটাল কোকেন হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এটি মানুষের কর্মজীবনে ব্যাপক সময়ের অপচয়, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি, শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ক্ষতি প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি করছে। 

২. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ইফেক্টের কারণে যে কোনো অসত্য তথ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে যে কোনো মিথ্যা বা ভিত্তিহীন তথাও অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক সময় অতিরিক্ত ব্যক্তিগত বিষয় দ্রুত ছড়িয়ে ফেলে মানুষের পারিবারিক সম্পর্ক , সামাজিক শালীনতা, গোপনীয়তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক হুমকির সৃষ্টি করে। 

৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কম্পিউটার অপরাধ ও সাইবার সন্ত্রাস দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করে। অনেক সময় এর কুপ্রভাব রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ব পর্যায়ে সুদূরপ্রসারী হয়ে পড়ে ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url