বাজার || Market

বাজার কাকে বলে?

 সাধারণত বাজার বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থান বোঝায় যেখানে পণ্যের ক্রয় - বিক্রয় হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে বাজার বলতে কোনো বিশেষ স্থানকে বোঝায় না। বাজার বলতে কোনো একটি পণ্যের ক্রেতা ও বিক্রেতার অস্তিত্ব আছে এবং তাদের দরকষাকষির মাধ্যমে নির্ধারিত মূল্যে পণ্যটির লেনদেন বোঝায়। লেনদেন যেকোনো স্থানে হতে পারে অথবা যেকোনো যোগাযোগের মাধ্যমে হতে পারে । পণ্যের অস্তিত্ব এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সংযোগ এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার বিভিন্ন ধরনের বাজার; যেমন- ধানের বাজার, পাটের বাজার, সবজির বাজার, কলম ও বই - খাতার বাজার, সোনার বাজার, শেয়ার বাজার, শ্রমবাজার ইত্যাদি।
 ইংরেজ অর্থনীতিবিদ স্যার সিডনি চ্যাপম্যান (Sydney Chapman; 1888-1970) বলেন, ''বাজার বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানকে বোঝায় না বরং এক বা একাধিক দ্রব্যকে বোঝায় , যা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দামে ক্রয় - বিক্রয় হয়।''

সুতরাং ক্রেতা - বিক্রেতার মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দামে কোনো দ্রব্যের ক্রয় - বিক্রয়কে অর্থনীতিতে বাজার বলে।
বাজার

বাজার কত প্রকার ও কি কি?

আয়তন বা পরিধি, সময় এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে বিভক্ত করা যায়। বাজারের শ্রেণীবিভাগ নিম্নোক্তভাবে করা হয়। আয়তন বা পরিধি অনুসারে বাজারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা:- 
১. স্থানীয় বাজার, ২. জাতীয় বাজার ও ৩. আন্তর্জাতিক বাজার।

১. স্থানীয় বাজার: যে পণ্যের বাজার দেশের একটি বিশেষ স্থান বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাকে স্থানীয় বাজার বলে। যেমন- দেশের একটি নির্দিষ্ট স্থানের মাছের বাজার, চালের বাজার, শাক- সবজির বাজার প্রভৃতি।

২. জাতীয় বাজার: কোন পণ্যের বাজার যদি একটি দেশের সকল বিভাগ তথা সারা দেশ জুড়ে বিস্তৃত হয় তাহলে তাকে জাতীয় বাজার বলে। যেমন- দেশীয় বস্ত্র, প্রসাধনী প্রভৃতির বাজার জাতীয় বাজার।

৩. আন্তর্জাতিক বাজার: কোন দ্রব্যের বাজার যদি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কয়েকটি দেশ জুড়ে তথা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত থাকে তবে তার বাজারকে আন্তর্জাতিক বাজার বলে। যেমন বাংলাদেশের পাটের বাজার, চায়ের বাজার, তৈরি পোশাকের বাজার, সোনার বাজার ইত্যাদি।

সময় অনুসারে বাজার কত প্রকার?

সময়ের ভিত্তিতে বাজারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:- 
১. অতি স্বল্পকালীন বাজার, 
২. স্বল্পকালীন বাজার, 
৩. দীর্ঘকালীন বাজার, 
৪. অতি দীর্ঘকালীন বাজার।

১. অতি স্বল্পকালীন বাজার: যে দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন স্থায়ী হয় তখন সে বাজারকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলে। যেমন:- মাছ, দুধ, শাক-সবজি ইত্যাদির বাজার।

২. স্বল্পকালীন বাজার: যে বাজারে দ্রব্যের চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সাথে যোগান সামান্য পরিবর্তিত হয় তাকে স্বল্পকালীন বাজার বলে । অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শালের মতে, ‘যে বাজার কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস স্থায়ী হয় তাই হলো স্বল্পকালীন বাজার’। যেমন— শাড়ি, লুঙ্গি প্রভৃতির বাজার স্বল্পকালীন বাজার।

৩. দীর্ঘকালীন বাজার: যে বাজারে দ্রব্যের চাহিদা পরিবর্তনের সাথে সাড়া দিয়ে যোগান পরিবর্তন করা যায় তাকে দীর্ঘকালীন বাজার বলে। যেমন— আসবাবপত্রের বাজার।

৪. অতি দীর্ঘকালীন বাজার: যে বাজারের স্থিতিকাল অতি দীর্ঘ এবং যেখানে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটে তাকে অতি দীর্ঘকালীন বাজার বলে। যেমন— সোনার বাজার।

প্রতিযোগিতা অনুসারে বাজার কত প্রকার?

প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা— 
১. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার ও 
২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার । 

১. পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার: যে দ্রব্যের বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা একই সমজাতীয় দ্রব্য একটি নির্দিষ্ট দামে দরকষাকষির মাধ্যমে ক্রয় - বিক্রয় করে তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।

২. অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার: সে বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা কখনও কম, কখনও বেশি থাকে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি অসম জাতীয় দ্রব্য আংশিক বা অসম প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ক্রয়- বিক্রয় করে তাকে অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।

অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারকে নিম্নোক্ত কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা:-একচেটিয়া বাজার:যে বাজারে একজন বিক্রেতা বা একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট দ্রব্যের মোট যোগান প্রদান করে তাকে একচেটিয়া বাজার বলে। ইংরেজি 'Monopoly' শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ একচেটিয়া বাজার। 'Mono' শব্দের অর্থ এক এবং 'Poly' শব্দের অর্থ বিক্রেতা। তাই এক বিক্রেতা বিশিষ্ট বাজারকে একচেটিয়া বাজার বলা হয় ।

একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার
 যে বাজারে বহুসংখ্যক ফার্ম পৃথক অথচ নিকটতম বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করে, তাকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ E. Chamberlin এবং J. Robinson ১৯৩৩ সালের দিকে এ ধরনের বাজার কাঠামোর প্রবর্তন করেন।

ডুয়োপলি বাজার

 ডুয়োপলি (Duopoly) শব্দে , ডুয়ো ( Duo ) যার অর্থ দুই এবং পলি (Poly) যার অর্থ বিক্রেতা । কাজেই ডুয়োপলি শব্দটির অর্থ দুইজন বিক্রেতা । যে বাজারে কেবল দুটি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বা দুজন বিক্রেতা থাকে , কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য থাকে , তাকে ডুয়োপলি বাজার বলে । এ বাজারে দ্রব্যের উৎপাদন অথবা যোগান এ দুজন বিক্রেতাই নিয়ন্ত্রণ করে । যেমন- সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডেসকো এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

অলিগোপলি বাজারযে বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন বিক্রেতা সমজাতীয় অথবা পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রয় করে তাকে অলিগোপলি বাজার বলে। যেমন- ফোন কোম্পানি, ঢেউটিন, ইস্পাত, মোটর গাড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি।

দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজার

বাজারে একজন বিক্রিতা এবং একজন ক্রেতা থাকলে তাকে দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বলা হয়। সাধারণত উপকরণের বাজারে এরূপ দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়ার উদ্ভব ঘটে । কোনো বিশেষ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের একজন বিক্রেতা এবং একজন ক্রেতা থাকলে দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজারের সৃষ্টি হয়। উপকরণের একজন বিক্রেতাকে Monopoly Seller বলা হয় এবং একজন ক্রেতাকে Monopsony Buyer বলা হয়। কাজেই Monopoly Seller এবং Monopsony Buyer নিয়ে গঠিত বাজারকে দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া বাজার বলে। 

মনোপসনি বাজার 
মনোপসনি বাজার, মনোপলি বাজারের বিপরীত অবস্থা। যে বাজারে একজন মাত্র ক্রেতা কিন্তু বিক্রেতা অনেক থাকে তাকে মনোপসনি বাজার বলে। আখ চাষের অঞ্চলে আখ চাষী অনেক থাকলেও চিনি কল থাকে মাত্র একটি। এক্ষেত্রে চিনি কল ক্রেতার এবং আখ চাষীরা বিক্রেতার ভূমিকা পালন করে। 

ডুয়োপসনি বাজার

 যে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা মাত্র দুজন কিন্তু বিক্রেতা সংখ্যা অসংখ্য তাকে ডুয়োপসনি বাজার বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, 'ক' অঞ্চলে পাট চাষির সংখ্যা অনেক কিন্তু সেখানে পাটকলের সংখ্যা মাত্র দুটি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url