কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ || Credit Control of Central Bank
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ঋণ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারসমূহ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক - এর ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পদ্ধতি দুটি হলো:ক. পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং
খ. গুণগত বা নির্বাচিত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ক. পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ( Quantitative Credit Control method): যেসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক সৃষ্ট ঋণের পরিমাণের সংকোচন বা সম্প্রসারণ ঘটায়, তাকে পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনটি হাতিয়ার ( উপকরণ ) ব্যবহার করে। যেমন:
i. ব্যাংক হারের পরিবর্তন নীতি (Changes in bank rate policy): এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক দাবিকৃত বিশেষ সুদের হার, যা বিনিময় বিল পুনর্বাট্টা করার প্রয়োজনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বহন করতে হয়, তাকে ব্যাংক হার বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদের হারের সাথে ব্যাংক হারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ব্যাংক হার এবং সুদের হারের পরিবর্তন দ্বারা বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রদানযোগ্য ঋণের বাণিজ্যিক পরিমাণেরও পরিবর্তন ঘটে। যেমন : মূল্যস্ফীতির সময়ে সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাংকের ঋণ প্রদানের পরিমাণ হ্রাস করা প্রয়োজন। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক হার বৃদ্ধি করলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদের হারও বৃদ্ধি পায় , ফলে ঋণের চাহিদা হ্রাস পায় । অর্থনৈতিক মন্দার সময় ব্যাংক হার ও সুদের হার হ্রাস করার ফলে ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
ii. খোলা বাজার নীতি (Policy of Open market operations): কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজারে সরকারি ঋণপত্র ক্রয় - বিক্রয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যে নীতির মাধ্যমে ঋণ - পত্রের জন্ম - বিএনা পরিচালিত হয়, তাকে খোলাবাজার নীতি বলে। মূল্যস্ফীতির সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিকট সরকারি ঋণপত্র বিক্রয় করে, ঋণ প্রদান ক্ষমতা হ্রাস করে। অর্থনৈতিক মন্দার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণপত্র ক্রয় করে নগদ তহবিল সরবরাহের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ প্রদান ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঋণপত্রের সুদের হার বাড়লে অর্থের ফটকা চাহিদা হ্রাস পায়।
iii. নগদ জমার হার পরিবর্তন (Policy of Cash reserve ratio): কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দিষ্ট হারে আমানতের যে অংশ জমা রাখতে হয়, তাকে নগদ জমার হার বলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণপ্রদানের পরিমাণ কমাতে চায় , তখন এ নাদ জমার হার বাড়িয়ে দেয়। পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণের উল্লেখিত তিনটি পদ্ধতিকে প্রত্যক্ষ বা বাধ্যতামূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলে।
খ. গুণগত বা নির্বাচিত ঋণ নিয়ন্ত্রণ (Qualitative or Selective Credit Control): যেসব পদ্ধতির দ্বারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতির বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবং বিশেষ উদ্দেশে ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে, তাদেরকে গুণগত বা নির্বাচনমূলক ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বলে। যেমন :
i. ঋণের রেশনিং: নির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ স্থির করে দেয়। প্রত্যেক আবেদনকারী কী পরিমাণ ঋণ পাবে, ঋণদানের ক্ষেত্রে কোনো পরিমাণগত বৈষম্য সৃষ্টির প্রয়োজন আছে কি না জামানতের বিপরীতে কী পরিমাণ ঋণ পাবে এসব কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে।
ii. ভোগকারীর ঋণ নিয়ন্ত্রণ: বর্তমানে অনেক দেশে স্থায়ী ভোগ্যদ্রব্য ক্রয়ের জন্য কিস্তিতে দাম পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। কিস্তির সংখ্যা বেশি হলে, দায় পরিশোধের সময় বেশি প্রদান করলে ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
iii. বন্ধকী (জামানত) ঋণের নগদাংশ পরিবর্তন: এ নীতির আলোকে বন্ধকীর ( জামানত ) হার বেশি হলে নগদ প্রাপ্তি বা প্রদেয় ঋণের পরিমাণ কম হয়। অর্থাৎ কেউ ১০০ টাকার সম্পদ জামানত রাখলে নগদাংশ হিসাবে যদি ৭০% রাখতে হয় তাহলে ব্যক্তি ঋণ পাবে ৩০ টাকা।
iv. নৈতিক প্ররোচনা: যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের ব্যাংক , তাই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অনুরোধের মাধ্যমে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারে।
v. প্রত্যক্ষ আদেশ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু মুদ্রাবাজারের শীর্ষে অবস্থান করে, তাই দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে। সংক্রান্ত যাবতীয় আদেশ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মানতে বাধ্য থাকে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনে বিভিন্ন শান্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে।
vi. নির্বাচিত ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ন্ত্রণ: কখনো কখনো অনুৎপাদনশীল খাত হতে ঋণের স্থানান্তর উৎপাদনশীল করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় খাত চিহ্নিত করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদানের জন্য নির্দেশ দিতে পারে।
