মৌমাছি || Honey Bee

মৌমাছি

মৌমাছি (Apis) একটি ক্ষুদ্র পতঙ্গ। দেশি মৌমাছি (Apis cerana indica) মধুর জন্য বাংলাদেশে চাষ করা হয়। ইউরোপীয় মৌমাছির প্রজাতি (Apis mellifera) বহুকাল আগে থেকে মানুষের বশীভূত হয়েছে। 
সাধারণত চার প্রজাতির মৌমাছি পাওয়া যায়- দেশি মৌমাছি (Apis cerana indica), ইউরোপীয় মৌমাছি (Apis mellifera), পাহাড়ি মৌমাছি (Apis dorsata) এবং ক্ষুদে মৌমাছি (Apis florea)।

মৌমাছি পালন

বাংলাদেশে মৌমাছি পালন খাতটি কুটির শিল্প হিসেবে গণ্য। এতে স্বল্প মূলধনে অনেক বেশি লাভ হয়। মধুর জন্য যেসব মৌমাছি পালন করা হয় তাদের মধ্যে Apis cerana indica বিখ্যাত। এই মৌমাছি লোকালয়েই বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। কারণ জঙ্গলে বাসকারী অপর প্রজাতি বা দৈত্য মৌমাছি (Apis dorsata) দেশি মৌমাছি (Apis cerana) প্রজাতিকে আক্রমণ করে এবং মধু লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়।
তবে লোকালয়ে থাকে বলে cerana প্রজাতিটি আমাদের দেশের জন্য বিশেষ উপযোগী। গাছের কটোর, ভেন্টিলেটর, ঘরের ছায়াময় ও নির্জন স্থানে বাসা বাঁধে। এ মৌমাছি একাধিক চাক তৈরি করে উপনিবেশ গড়ে তোলে।

মৌমাছির শ্রেণিবিভাগ

মৌমাছি পরিবারভুক্ত, সামাজিক ও দলবদ্ধ পতঙ্গ । একটি মৌচাকে সাধারণত তিন শ্রেণির মৌমাছি পাওয়া যায়-রাণী, পুরুষ ও শ্রমিক মৌমাছি।

শ্রমিক মৌমাছি: প্রতি কলোনীতে এক হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত মৌমাছি বাস করে। এর ৯০ ভাগই শ্রমিক মৌমাছি। শ্রমিক মৌমাছির কাজ হলো মৌচাক তৈরি করা, মৌচাক রক্ষা ও ব্যবস্থাপনা, মৌচাক পরিষ্কার করা ও পাহারা দেওয়া, মধু অনুসন্ধান ও সংগ্রহ করা, মোম প্রস্তুত করা, রাণীকে খাওয়ানো, রাণীর পরিচর্যা করা ইত্যাদি। পুরুষ মৌমাছি: পুরুষ মৌমাছি আকারে কর্মী মৌমাছির চেয়ে বড়, কিন্তু রাণী মৌমাছির তুলনায় ছোট পুরুষ মৌমাছির প্রধান কাজই হলো রাণীর সাথে মিলিত হয়ে গর্ভধারণ করানো। একটি পুরুষ মৌমাছি সাধারণত ৯০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

রানী মৌমাছি: প্রতি কলোনীতে একটি রাণী মৌমাছি থাকে। রাণী মৌমাছির কাজ হচ্ছে ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন করা। কলোনীর মধ্যে ছোট ডানা, বড় পেট ও আকারে সবচেয়ে বড় হচ্ছে রাণী মৌমাছি এবং সেটি প্রতিদিন গড়ে ৩০০০ টি ডিম পাড়ে। নিষেককৃত ডিম থেকে রাণী ও কর্মী মৌমাছি ও অনিষেককৃত ডিম থেকে পুরুষ মৌমাছি সৃষ্টি হয়। রাণীর শরীর থেকে ফেরোমেন নামক বস্তুর গন্ধ বের হয় বলে রাণী মৌমাছিকে ঘিরে কর্মী ও পুরুষ মৌমাছি থাকে।

খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে রাণী ও কর্মী মৌমাছি সৃষ্টি হয়। মৌচাকে উৎপন্ন হওয়া রয়েল জেলী বেশি দিন (৬-৭ দিন) মৌমাছির লার্ভাকে খাওয়ালে তার জুভেনাইল হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফলে সে রাণী মৌমাছিতে পরিণত হয়। রয়েল জেলী ৩ দিন খাওয়ালে কর্মী মৌমাছিতে পরিণত হয়। রাণী মৌমাছি ৩-৪ বছর বাঁচে। এক নির্দিষ্ট রাণী মৌমাছি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম পাড়ার পর মারা যায় এবং নতুন রাণীর জন্ম হয়।
মৌমাছি

মৌমাছির জীবন চক্র

মৌমাছির জীবনচক্রে ৪টি ধাপ দেখা যায়। ধাপগুলো হলো-
১. ডিম (egg): আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় রানি ও পুরুষ মৌমাছি মিলিত হয়। রানি মৌমাছি, পুরুষ মৌমাছির কার থেকে শুক্রাণু গ্রহণ করার পর পুরুষ মৌমাছি মারা যায়। রানি চাকে ডিম পাড়ে এবং ডিমগুলো পরিস্ফুটনের পর শূককীট বা লাভায় পরিণত হয়।

২. লার্ভা বা শূককীট: এরা সাদা বর্ণের ও ক্ষুদ্রপ্রকৃতির হয়ে থাকে। কর্মী মৌমাছি এই সময় পুরুষ মৌমাছি ও রানির জন্য সংরক্ষিত কুঠুরির লার্ভাকে রয়েল জেলি ও সাধারণ কুঠুরির লার্ভাকে ফুলের রেণু ও মধু দিয়ে তৈরি মৌ-রুটি খাওয়ায়। কিছু দিনের মধ্যে মোম দিয়ে কুঠুরি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এর ভিতরই লার্ভা পিউপায় রূপান্তরিত হয়। লার্ভা দশার স্থায়িত্বকাল ৪-৭ দিন।

৩. পিডপা: মূককীটের চারদিকে আবরণী তৈরি হয় এবং এই আবরণীর মধ্যেই মূককীট পূর্ণাঙ্গ মৌমাছিতে রূপান্তরিত হয়ে কুঠুরি থেকে বের হয়ে আসে। অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে পুরুষ ও নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে রাণি ও অসংখ্য কর্মী মৌমাছি জন্ম নেয়।

৪. পূর্ণাঙ্গ দশা: ডিম ফুটে পূর্ণাঙ্গ কর্মী হতে ২৪ দিন ও পূর্ণাঙ্গ রানি হতে প্রায় ১৫ দিন সময় লাগে।

কৃত্রিমভাবে মৌমাছি পালন প্রক্রিয়া 

প্রাচীন পদ্ধতিতে মৌয়ালরা মৌচাক খুঁজে মধু বের করত, যা ছিল অনেক সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মৌচাকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তাই কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করে মৌমাছি পালন প্রক্রিয়া দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিচে কৃত্রিমভাবে মৌমাছি পালন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-

মৌমাছি পালনের উত্তম সময়: বাংলাদেশে মৌমাছি পালনের উত্তম সময়সীমা মাঘ-চৈত্র। তবে বেশি যত্নবান হলে বছরে অন্য সময়েও মৌমাছি পালন করা সম্ভব।

মৌ-বাক্স স্থাপনের দূরত্বঃ ব্যবসায়ের ভিত্তিতে চাষ করার জন্য বাগানে ২.৫ মিটার দূরত্বের সারিতে ১.৫-১.৮ মিটার আর মৌ-বাক্স স্থাপন করা যায়। তবে পাশাপাশি অবস্থায়ও মৌ-বাক্স রাখা যায়। পাশাপাশিভাবে স্থাপনের ক্ষেত্রে ৪-৫ দিন পর্যন্ত মৌ-বাক্সগুলোকে বিপরীতমুখী অবস্থায় রাখা প্রয়োজন। সঠিক কৌশল জানা থাকলে একটা মৌ-বাক্সের উপরে আরেকটা মৌ-বাক্স স্থাপন করা যায়। তবে পরিচর্যা ও কাজের সুবিধার জন্য ১.৮ মিটার অন্তর অন্তর রাখাই উত্তম।

মৌমাছিসহ মৌ-বাক্স পাওয়ার স্থান ও উৎস: 

বাংলাদেশ সরকারের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কীটতত্ত্ব বিভাগ, বরিশাল জেলার কলসকাটির যতীন্দ্র স্মৃতি আশ্রম, সিলেটের জয়ন্তিয়ার নিকট খাসিয়া পল্লি, ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ বাংলাদেশ এপিকালচার ইনস্টিটিউটে উন্নতমানের বিক্রয়যোগ্য বা নমুনা মৌ- বাক্স পাওয়া যেতে পারে। কৃষি বিভাগে বর্তমানে জেলা পর্যায়ে মৌমাছিসহ মৌ- বাক্স বা মৌমাছি পালন সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

মৌমাছির চাষের স্থান: নির্জন, ধোঁয়া ও গ্যাসমুক্ত, উঁচু এবং যার অনতিদূরে ফুল গাছ আছে, সেসব জায়গা মৌমাছি চাষের জন্য উত্তম। তবে এসব স্থান এমন উন্মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় যেন মৌ-বাক্স স্থাপন করলে এর উপর সকালের সূর্যকিরণ পড়ে। বসতবাড়ির উঠানে, ঘরের চারপাশে, দরজার পাশে, বাগানে গাছের নিচে, পুকুর পাড়ে ছায়াযুক্ত স্থানে মৌ-বাক্স স্থাপন করা যায়। এক মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশে Apis cerana প্রজাতির মৌমাছি ৫-১০টি পর্যন্ত চাক তৈরি করে থাকে। তবে আবাসস্থলের আয়তনের ওপরেই এদের চাকের সংখ্যা নির্ভর করে। সেরানা প্রজাতি গাছের কোটর, আলমারি, কলসি, সিন্দুক, ছাদের কার্নিশের নিচে ও ভেন্টিলেটরের মধ্যে চাক বাঁধে।

রাণী মৌমাছি সংগ্রহ: মৌমাছির কলোনির খোঁজ পেলে প্রথমেই শনাক্ত করতে হবে এটি Apis cerana প্রজাতির কিনা। যদি তা উক্ত প্রজাতির হয়, তবে প্রয়োজনীয় উপকরণসহ যথাস্থানে যেতে হবে। এক্ষেত্রে মৌ-বাক্সের নিচের পাটাতন, ফ্রেমসহ বাচ্চা ঘর এবং ভিতরকার ঢাকনা সাথে নিলেই চলবে। প্রজাতি শনাক্ত করার সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। সেরানা প্রজাতি হলে দুপুরের কড়া রোদে এবং মেঘলা দিনে মৌমাছির মেজাজ উগ্র থাকে। মেঘমুক্ত সকাল এবং বিকেল মৌমাছি ধরার উপযুক্ত সময়।

মৌমাছি সংগ্রহের ধাপ

১. প্রথমে নির্দিষ্ট পোশাক পরে নিয়ে ধোঁয়া প্রয়োগ করে প্রহরী মৌমাছিদের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
২. কলোনির ভিতর থেকে যাতে নিরাপদে চাক বের করে নেওয়া যায় তার জন্য রাস্তা তৈরি করতে হবে।
৩. এ সময় কলোনির ভিতরে সামান্য পরিমাণ ধোঁয়া প্রয়োগ করলে মৌমাছিরা শান্ত হয়ে পড়বে।
8. গাছের গর্তে বাসা থাকলে একটি কাঠি ঢুকিয়ে চাকের অবস্থান নির্ণয় করে চাকু দিয়ে ছিদ্র করতে হবে।
৫. যেকোনো চাক কেটে চাকের ওয়াক্স মথ আক্রান্ত পচা অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে। 
৬. এই সময় রাণী মৌমাছি ঝাঁক হয়ে বসে থাকা মৌমাছিদের উপরে বা বাইরের দিকে থাকে।
৭. সেখান থেকে রাণী মৌমাছি সংগ্রহ করে মৌবাক্সের রাণীর কুঠুরিতে বসাতে হয়।

পুরুষ মৌমাছি পালন

পুরুষ মৌমাছি, ড্রোন নামেও পরিচিত, মৌমাছি পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের প্রাথমিক কাজ হল রাণী মৌমাছির সাথে সঙ্গম করা এবং উপনিবেশের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করা। যাইহোক, পুরুষ মৌমাছিরা অন্যান্য কাজে অংশগ্রহণ করে না যেমন অমৃত বা পরাগ চরানোর জন্য, এবং তাদের স্টিংগার নেই।

মৌমাছি পালনে পুরুষ মৌমাছিকে কয়েকটি উপায়ে পরিচালনা করা যায়। একটি উপায় হল রাণীর সাথে সঙ্গম করার জন্য উপনিবেশে পর্যাপ্ত ড্রোন রয়েছে তা নিশ্চিত করা। মৌচাকে ড্রোন চিরুনি রেখে এটি করা যেতে পারে, এটি এমন চিরুনি যা বিশেষভাবে ড্রোন তোলার জন্য তৈরি করা হয়।

মৌমাছি পালনে পুরুষ মৌমাছিদের পরিচালনার আরেকটি উপায় হল তাদের সংখ্যা কমানো যদি তারা অনেক বেশি হয়ে যায়। এটি ড্রোনের চিরুনি অপসারণ করে বা রানী এক্সক্লুডার ব্যবহার করে করা যেতে পারে, এটি একটি বাধা যা কর্মী মৌমাছিদের মৌচাকে অবাধে চলাচল করতে দেয়, তবে ড্রোনকে নির্দিষ্ট এলাকায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়।

সামগ্রিকভাবে, পুরুষ মৌমাছি মৌমাছি উপনিবেশের বেঁচে থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মৌমাছি পালন ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

মৌচাক বাঁধা

একটি মৌচাক বাধা এমন একটি কাঠামোকে বোঝায় যা একটি মৌচাকের আকৃতির অনুরূপ ষড়ভুজ কোষগুলির একটি সিরিজ নিয়ে গঠিত। কোষগুলি সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিকের মতো হালকা ওজনের উপাদান দিয়ে তৈরি হয় এবং একটি শক্তিশালী এবং অনমনীয় কাঠামো তৈরি করার জন্য একটি প্যাটার্নে সাজানো হয়।

মৌচাক বাধাগুলি সাধারণত মহাকাশ, স্বয়ংচালিত, নির্মাণ এবং প্যাকেজিং সহ বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়। তারা শক্তি এবং সমর্থন প্রদানের জন্য কাঠামোগত উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, বা প্রভাব শোষণ বা বাহিনী বিতরণের জন্য প্রতিরক্ষামূলক বাধা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মহাকাশ শিল্পে, মধুচক্রের কাঠামোগুলি প্রায়শই উড়োজাহাজের উপাদান যেমন ডানা এবং ফুসেলেজের জন্য হালকা ওজনের কিন্তু শক্তিশালী প্যানেল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। স্বয়ংচালিত শিল্পে, বর্ধিত ক্র্যাশ সুরক্ষা প্রদানের জন্য গাড়ির দরজা এবং হুডের নকশায় মধুচক্রের বাধা পাওয়া যেতে পারে।

নির্মাণে, মধুচক্র প্যানেলগুলি তাদের শক্তি এবং দৃঢ়তার কারণে প্রায়শই মেঝে বা সিলিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তারা বাণিজ্যিক এবং আবাসিক উভয় অ্যাপ্লিকেশনে আলংকারিক প্রাচীর প্যানেল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

প্যাকেজিংয়ে, শিপিংয়ের সময় ক্ষতি রোধ করার জন্য কাচের জিনিসপত্র বা ইলেকট্রনিক্সের মতো ভঙ্গুর আইটেমগুলির জন্য মৌচাক বাধাগুলি প্রতিরক্ষামূলক সন্নিবেশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

সামগ্রিকভাবে, মৌচাক বাধাগুলি তাদের শক্তি-থেকে-ওজন অনুপাত, স্থায়িত্ব এবং বহুমুখীতার জন্য মূল্যবান।

একটি মৌচাকে কয়টি পুরুষ মৌমাছি থাকে?

একটি মৌচাকে পুরুষ মৌমাছির সংখ্যা, যা ড্রোন নামেও পরিচিত, বছরের সময় এবং উপনিবেশের চাহিদার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। বসন্ত এবং গ্রীষ্মের প্রথম দিকে, যখন রাণী মৌমাছি ডিম পাড়ে উপনিবেশের আকার বাড়াতে, তখন একটি মৌচাকে শত শত বা হাজার হাজার ড্রোন থাকতে পারে। যাইহোক, শরত্কালে এবং শীতকালে, যখন উপনিবেশ ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ড্রোনগুলিকে সাধারণত মৌচাক থেকে বহিষ্কার করা হয় কারণ তাদের আর প্রজননের প্রয়োজন হয় না।

গড়ে, একটি স্বাস্থ্যকর এবং সমৃদ্ধ মৌমাছি কলোনীতে পিক সিজনে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার ড্রোন থাকতে পারে। যাইহোক, উপনিবেশের আকার, খাদ্য ও সম্পদের প্রাপ্যতা এবং মৌমাছির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে সঠিক সংখ্যা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।

মৌমাছির সংস্কৃতি

মধু মৌমাছি (এপিস মেলিফেরা) একটি সামাজিক পোকা যা তার জটিল এবং আকর্ষণীয় সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। এখানে মধু মৌমাছির সংস্কৃতির কিছু মূল দিক রয়েছে:

সামাজিক কাঠামো: মধু মৌমাছিরা তিনটি বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত অত্যন্ত সংগঠিত উপনিবেশে বাস করে: রানী, শ্রমিক এবং ড্রোন। রানী হল সবচেয়ে বড় মৌমাছি এবং কলোনির সব ডিম পাড়ে। শ্রমিকরা ছোট ছোট মহিলারা হয় যেমন চারণ, বাচ্চাদের লালনপালন এবং মৌচাক তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের মতো কাজের জন্য দায়ী। ড্রোনগুলি বড় পুরুষ যাদের প্রাথমিক ভূমিকা হল কুমারী রাণীর সাথে সঙ্গম করা।

শ্রম বিভাগ: মধু মৌমাছির উপনিবেশগুলি শ্রমের একটি চিত্তাকর্ষক বিভাজন প্রদর্শন করে। কর্মী মৌমাছিরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোষ পরিষ্কার করা, লার্ভা খাওয়ানো এবং রানীর প্রতি যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। তারা পরিণত হওয়ার সাথে সাথে তারা চিরুনি তৈরি, মৌচাক পাহারা দেওয়া এবং অমৃত, পরাগ এবং জলের জন্য চরানোর মতো দায়িত্ব গ্রহণ করে।

যোগাযোগ: মধু মৌমাছি বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তারা খাবারের উৎসের অবস্থান অন্য চোরাচালানকারীদের কাছে জানাতে "ওয়াগল ড্যান্স" নামে একটি নাচের ভাষা ব্যবহার করে। তারা রাণীর উপস্থিতি, উপনিবেশের স্বাস্থ্য, এবং হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একত্রিত করতে অ্যালার্ম সংকেত সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ করতে ফেরোমোন ব্যবহার করে।

বাসা নির্মাণ: মধু মৌমাছি জটিল বাসা তৈরি করে যাকে আমবাত বলে। তারা খাদ্য (মধু এবং পরাগ) সঞ্চয় করতে এবং ব্রুড (ডিম, লার্ভা এবং পিউপা) বাড়াতে মৌচাক নামে পরিচিত ষড়ভুজ মোমের কোষ তৈরি করে। মৌমাছিরা সম্মিলিতভাবে তাদের পেটের বিশেষ গ্রন্থি থেকে মোম নিঃসরণ করে, যা চিরুনি গঠনে শক্ত হয়ে যায়।

পরাগায়ন: মধু মৌমাছি পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু তারা অমৃত এবং পরাগের জন্য চারায়, তারা অসাবধানতাবশত ফুল থেকে ফুলে পরাগ স্থানান্তর করে, যা উদ্ভিদের নিষিক্তকরণে সহায়তা করে। এই পরাগায়ন প্রক্রিয়াটি অনেক উদ্ভিদ প্রজাতির প্রজনন এবং জেনেটিক বৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মধু উৎপাদন: মধু মৌমাছি ফুল থেকে অমৃত সংগ্রহ করে, যা তারা পুনঃস্থাপন এবং বাষ্পীভবনের মাধ্যমে মধুতে রূপান্তরিত করে। শীতের মতো অভাবের সময় উপনিবেশের খাদ্য উৎস হিসেবে মধু মৌচাকের কোষে সংরক্ষণ করা হয়।

ঝাঁকের আচরণ: যখন একটি মধু মৌমাছির উপনিবেশ উপচে পড়ে, তখন রাণী এবং শ্রমিক মৌমাছির একটি অংশ একটি ঝাঁকে মৌচাক ছেড়ে যায়। ঝাঁক হল উপনিবেশের প্রজননের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেখানে তারা একটি ভিন্ন স্থানে একটি নতুন উপনিবেশ স্থাপন করে। ঝাঁক বেশ নাটকীয় হতে পারে, হাজার হাজার মৌমাছি সাময়িকভাবে একত্রিত হয় যতক্ষণ না তারা একটি উপযুক্ত নতুন বাড়ি খুঁজে পায়।

উপনিবেশ প্রতিরক্ষা: মধু মৌমাছির উপনিবেশগুলিতে শিকারী এবং আক্রমণকারীদের থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। মৌচাকের প্রবেশদ্বারে অবস্থানরত গার্ড মৌমাছিরা সম্ভাব্য হুমকি চিহ্নিত করে এবং তা প্রতিহত করে। তারা উপনিবেশ রক্ষা করার জন্য স্টিং করতে পারে, শ্রমিক মৌমাছিরা যখন তাদের স্টিংগার ব্যবহার করে তাদের জীবন উৎসর্গ করে।

মধু মৌমাছির সংস্কৃতি জটিল এবং তাদের পরিবেশগত কুলুঙ্গির সাথে অত্যন্ত অভিযোজিত। তাদের জটিল সামাজিক কাঠামো, শ্রমের বিভাজন, যোগাযোগ, এবং বাসা নির্মাণ এবং মধু উৎপাদনের চিত্তাকর্ষক কৃতিত্ব তাদের গ্রহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কীটপতঙ্গের প্রজাতিতে পরিণত করে।

মৌমাছি কোন শ্রেণীর প্রাণী?  

মৌমাছি Insecta শ্রেণীর অন্তর্গত, যা পোকামাকড়ের শ্রেণী।  পোকামাকড় হল প্রাণীদের একটি বৈচিত্র্যময় দল যাদের শরীরের তিনটি প্রধান অংশ (মাথা, বক্ষ এবং পেট), তিন জোড়া জোড়াযুক্ত পা, এক বা দুই জোড়া ডানা এবং এক জোড়া অ্যান্টেনার বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি স্বতন্ত্র দেহ গঠন রয়েছে।  মৌমাছিগুলিকে বিশেষভাবে হাইমেনোপ্টেরা ক্রম অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, যার মধ্যে অন্যান্য পোকামাকড় যেমন পিঁপড়া এবং ভাঁজ রয়েছে।  মৌমাছি পরাগায়নকারী হিসেবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং মধু উৎপাদনের ক্ষমতার জন্য পরিচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url